আহম্মদ হোসেন
বাংলাদেশ এখন তথ্যপ্রযুক্তির যে বহুমাত্রিক সুবিধা, তা বেশ ভালোই পাচ্ছে। ৪জি জগতে প্রবেশ করেছে দেশ। তথ্যপ্রযুক্তির সুফলের পাশাপাশি দেশ এখন তথ্যপ্রযুক্তির কুফলে বেশ আক্রান্ত। পুরনো একটি সমস্যা এখন বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তা হলো নারী নির্যাতন। পর্নোগ্রাফি এখন মোবাইলের কল্যাণে হাতে হাতে। শিক্ষিত অশিক্ষিত নানা শ্রেণির পুরুষের কাছে রয়েছে মোবাইল। এদের একটা শ্রেণি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। পর্নোগ্রাফির মধ্য দিয়ে তারা হয়েছে একেকজন প্রশিক্ষিত ধর্ষক অথবা বহুগামী পুরুষ। বাস শ্রমিকদের বাসের নারী যাত্রীদের ধর্ষণের প্রচেষ্টা বা ধর্ষণের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা যে এসব পর্নোগ্রাফি প্রভাবিত প্রশিক্ষিত ধর্ষকদের কাজ, তা গবেষণা থেকে উঠে আসছে।
এ ছাড়া শিশু ধর্ষণের যে ভয়ঙ্কর সব সংবাদ মিডিয়াতে আসছে তাও এসব পর্নোগ্রাফি আসক্ত পুরুষের কাজ। তারা পর্র্নোগ্রাফির আসক্তির মধ্য দিয়ে এতটাই প্রশিক্ষিত হয়েছে যে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
\হএসব ঘটনার প্রতিবাদ হচ্ছে লেখালেখির মাধ্যমে। গণসচেতনতা ও জনমত তৈরির জন্য এটা দরকারি। কিন্তু এটা এসব অপরাধীদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। কারণ যারা এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তারা এগুলো পড়ছে না। তারা এসব লেখা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে ধর্ষণ থেকে বিরত থাকবে তা ভাবার কারণ নেই, আর বাস্তবে তা হচ্ছেও না। তাহলে প্রতিকার কি?
গবেষকরা বলছেন, এ জন্য দরকার রাষ্ট্রের এবং সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ। ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ হচ্ছে কিন্তু তা জাতীয় উদ্যোগে পরিণত হচ্ছে না। চাই জাতীয় উদ্যোগ। প্রয়োজন ধর্ষণবিরোধী জাতীয় কমিটি। যারা প্রকৃত অর্থেই কাজ করবে। রাষ্ট্রের যেমন জঙ্গিবিরোধী বিশেষ টিম হয়েছে তেমনি নারী নির্যাতনবিরোধী টিম দরকার। এ ক্ষেত্রে বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার যে, টিমের সদস্যরা নিজেরাই যেন নারী নিপীড়ক না হয়। কারণ অতীতে দেখা গেছে যারা নারী নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ে কাজ করছে তারাই এ অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে গেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত যে সব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের ঘটনা যত বেশিই ঘটুক না কেন, হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। অপরাধীদের শাস্তি হতে হবে পাশাপাশি তাদের সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংও হতে হবে। এ সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং হতে হবে যথাযথ প্রশিক্ষিত মনোচিকিৎসক দ্বারা।
পৃথিবীব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ হোক এই লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে। কারণ এর ব্যত্যয় ঘটলে মানুষের নৈতিক বিকাশ ও বিবর্তন বাধাগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি ধর্ষকদের বিতাড়িত করেছিল। ফলে নারীর সম্মান বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারীর সম্মান আর শিশুর অধিকার।
নারী ও শিশু নির্যাতন রোধের এখনই সময়। দেরী করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।