বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে কর্মে ও ইবাদতে নারীরা

নতুনধারা
  ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

মুহাম্মদ কামাল হোসেন

\হ

দেখতে দেখতে রোজা এসে প্রায় চলেও যাচ্ছে। মুসলমানদের জন্য সিয়াম সাধনার মাস এটি। বছরের অন্য মাসগুলো থেকে এটি একটু ভিন্ন। এ মাসে চলাফেরা, খাবার-দাবার সব কিছুতেই আসে বেশ পরিবর্তন। তাই ঘরে-বাইরে সব জায়গায় দৈনন্দিন রুটিন একেবারেই বদলে যায়। বিশেষ করে কর্মব্যস্ত নারীদের জন্য প্রয়োজন আগে থেকে প্রস্তুতি। তা না হলে এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়। মাহে রমজান-বরকতময় ও সিয়াম সাধনার এক পবিত্রতম মাস। গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনায় রমজান আরবি মাসগুলোর মধ্যেও সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এই বরকতময় মাসেই বিশ্ব মানবতার কল্যাণে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআন। তা ছাড়া মহান আলস্নাহ সুবহানালস্নাহু তায়ালা রহমত আর বরকতের অমীয় দ্বারগুলো এ পবিত্রতর মাসে খুলে দেয় তার নেকমান্দ নারী-পুরুষের জন্য। যাতে তারা দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে সমানভাবে কামিয়াবি ও সফলকাম হতে পারে। ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানই নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য ও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সওয়াবের ক্ষেত্রেও কোনো তারতম্য করা হয়নি। নারী বলে নারীদেরও প্রতি কোনো প্রকার রূঢ় আচরণ করা হয়নি। পাশাপাশি পুরুষদের জন্যও অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধার পসরা সাজিয়ে দেয়া হয়নি। যদিও যাপিত জীবনে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষরা এমনিতে কিছু না কিছু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। কিন্তু মহান আলস্নাহ অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে নারী- পুরুষের ওপর ইসলামের বিধিবিধানগুলো সুন্দর ও সুচারুভাবে আরোপ করেছেন।

\হরোজা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি মনোদৈহিক ইবাদত। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম। রোজার বিধান নারী ও পুরুষ সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। হাদিস শরিফে আছে: কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন, রমজান মাসে পূর্ণরূপে রোজা পালন করেন, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত আবরু রক্ষা করে চলেন এবং স্বামীর অনুগত থাকেন; তিনি জান্নাতের আটটি দরজার যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। (সুনানে তিরমিজি) এই বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ করে মাহে রমজানে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো- বিশ রাকআত তারাবিহর নামাজ। যেটা প্রতিটি কর্মব্যস্তময় নারীর জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। নিত্যকার পাঁচওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে বাড়তি তারাবিহর নামাজ আদায় করা প্রত্যেক নারীদের জন্য কষ্টসাধ্যই বৈকি। রমজান জুড়ে ইফতার তৈরি, সেহ্‌রির আয়োজন, সাংসারিক ফুটফরমায়েশসহ সবকিছু মিলিয়ে গৃহিণী ও কর্মজীবী নারীদের কাজের চাপ বেড়ে যায় অনেকখানি। বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় রমজানে নারীর কর্মযজ্ঞের বহরটা অনেকাংশে লম্বা ও বেশি। সারা বছরের কাজের ধরন বা রুটিন ওয়ার্ক রমজান মাসে এসে রাতারাতি পাল্টে যায়। শুধুমাত্র সেহ্‌রি আর ইফতার নিয়ে তারা পড়ে থাকেন না। তাদের আরও অনেক জটিল ও কঠিন কাজগুলো অনায়াসে করে যেতে হয়। সংসারে বড়রা কী খাবে না খাবে কিংবা ছোটদের পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি সুক্ষ্ণ বিষয়গুলোও নারীদের সতর্কতার সহিত দেখভাল করতে হয়। প্রায় প্রতিটি সংসারে নারীরাই উৎসব-পার্বণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তাই সংগত কারণেই প্রতিটি উৎসব ও আনন্দকে ঘিরে নারীরা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটান। অথচ সারাদিন রোজা থেকে নারীদের এ বাড়তি কাজগুলো পুরো মাস জুড়ে হাসিমুখে করে যেতে হয়। যদিও সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যার সময় কিংবা ভোরের সেহরির সময় মজার মজার সু-স্বাদু হরেক পদের খাবার খেতে কতই না ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের সামনে এসব মজার মজার মনোলোভা শৈল্পিত সৌন্দর্যের দৃষ্টিনন্দন জিবে জল আসা খাবারগুলো জনে জনের পাতে তুলে দিতে নারীদের ব্যস্ততা বা খাটুনি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। একটি গবেষণার তথ্যমতে বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ৩৩%। যা কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। অফিস-আদালত কিংবা স্কুল-কলেজে চাকরিরত কর্মজীবী নারীদের ব্যস্ততা আরো অনেক বেশি। তারা বাসায় ফিরে পুরুষের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি কাজ করে। একটু খেয়াল করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। রমজানে জিনিসপত্র ও পণ্যসামগ্রীর ক্রমাগত দাম চড়তে থাকা, ফর্দমাফিক প্রয়োজনীয় বাজারসদাই সামলানো, সেহ্‌রি-ইফতারের মেনু্য ঠিক করা, পরিবারের পুষ্টিগুণ বিবেচনায় রাখা, সবার পছন্দ-অপছন্দ, বয়স্ক ও শিশুদের জন্য আলাদা খাবার তৈরি করা। তার ওপর নিত্যদিনকার সাংসারিক রোজনামচা বা টুকিটাকিতো রয়েছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে পরিবারের সকলের পছন্দ মাফিক ঈদের কেনাকাটাও। এই কঠিন কাজটিও নারীকে সামলাতে হয় ঈদপূর্ব এই রমজান মাসেই। বাজেটের লাগাম টেনে ধরে কেনাকাটার লিস্ট নিয়ে দোকানে-দোকানে ঘুরে ঘুরে রুচি ও পছন্দের সমন্বয়ে সবচেয়ে সেরা পণ্যটি দিনশেষে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতে হয়। পরিবারের সদস্যদের মুখের হাসি ফোটানোর মাধ্যমে নিঃসন্দেহে একজন নারী ঈদের আনন্দকে করে তোলে দ্বিগুণ। প্রত্যাশা পূরণের আনন্দে নারীরা খুশীতে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। চোখে মুখে স্বস্তি ও প্রশান্তির রেখা ফুটে ওঠে। ভোগের চেয়ে ত্যাগেই সুখ খুঁজে পায় সবচেয়ে বেশি। কারো অসুখ-বিসুখ হলে বিগলিত স্নেহ-ভালোবাসার ঢালি খুলে বসে। সংসারটাকে দুহাতে বুকে আগলে রাখে। দিনের যে সময়টা একজন রোজাদার সবচেয়ে বেশি দুর্বল ও কমজোর হয়ে পড়ে, ঠিক সেই সময়ে সংসারে নারীদের ব্যস্ততা ও কাজের চাপ খুব স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। নানা পদের ইফতারি ও শরবত তৈরির পাশাপাশি ছোট বাচ্চাকাচ্চাদের ঝক্কি-ঝামেলা আর অস্থিরতাকেও তারা সুনিপুণ হাতে অনেক দক্ষতার সহিত সামলাতে হয়। এ এক নিরন্তর পথচলা। দিনে রাতে একজন নারীর কাজের কোনো অন্ত নেই। অথচ এসব কাজের ফাঁকে প্রতিটি নারীকে ইবাদত-বন্দেগিও সমানভাবে করে যেতে হয়। পরিবার-পরিজনের সন্তুষ্টির পাশাপাশি মহান আলস্নাহর সন্তুষ্টি ও রাজিখুশির বিষয়টিও নারীদের দেখতে হয়। কাজের ফাঁকে একটুখানি ফুরসত পেলে নারীরা নিজেদের অসমাপ্ত ইবাদত আর আমলে মশগুল হয়ে পড়ে। সুরেলা কণ্ঠে তিলাওয়াত করে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআনের সুমিষ্ট শাশ্বত বাণী। শতব্যস্ততার মাঝেও রমজানে কোনো কোনো নারী কয়েক খতম কোরআন শরিফ পাঠ করে থাকে। পরিবার-পরিজন সামলে গভীর রজনীতে জিকিরে ফিকিরে ও ইবাদতে বিভোর হয়ে ওঠে। খোদার দরবারে কান্না আর রোনাজারি করে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে। পুরুষ যত সহজে আমল-ইবাদত করতে পারে, নারীর তা পারে না। কঠিন সময় আর সংগ্রামী পথ পাড়ি দিয়ে সংসারে নারীদের মহান আলস্নাহর ইবাদতে বন্দেগিতে শামিল হতে হয়। পাশাপাশি রাসূল (সাঃ) নির্দেশিত পথে ইসলামের বিধি-বিধান, হুকুম-আহকামগুলোও তামিল করতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51262 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1