বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদিনী সখিনা বিবি

নন্দিনী ডেস্ক
  ২৪ জুন ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুন ২০১৯, ১৩:১৪

জরির গোছার ভাঁজে ভাঁজে সেলাই করে বানানো একটা ঝুলমি, বিবর্ণ হয়ে আসা সোনালি পাড়ের লাল ওড়না, একটা ছেঁড়া ব্যাগ সঙ্গে খানিকটা চুন আর কালি। খুব মূল্যহীন এই অনুষঙ্গগুলোই সখিনা বিবির আনন্দ বিতরণের হাতিয়ার।

গায়ে হলুদ হোক বা বিয়ে বা অন্য কোনো আনন্দ অনুষ্ঠান সখিনা বিবি এই অনুষঙ্গগুলো দিয়ে সেজে হাজির হয়ে যান। সংয়ের বেশ ধরে কখনো কোমর দুলিয়ে, কখনো দু'কলি গান গেয়ে বা কিছু হাস্যকর সংলাপ বলে আনন্দের মহল তৈরিতে জুড়ি নেই সখিনার। বাচ্চা, বুড়ো, নারী, পুরুষ সবাই হেসে উঠেন সখিনার সং কৌশুলীতে। ৪০ বছর ধরে এভাবেই নিজের মনের আনন্দ সবাইকে বিনোদিত করে চলেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের সখিনা বিবি।

অভাবের সঙ্গে ছিল তার নিত্য পথচলা। তবে আপাদমস্তক রসিক মানুষটির রসিকতায় ভাগ বসাতে পারেনি দারিদ্র্য। যখন চালকল আসেনি তখন এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে ঢেঁকিতে চিড়ে কুটে, ধান ভেঙে দিন চলত সখিনার। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গান শুনিয়ে, মজার কথা বলে বাড়ির বউ-ঝিদের আনন্দিত করে তুলতেন তিনি। সখিনা বলেন, 'লগড় করে কথা কইত পারি দেখে সবাই হেইসে গইড়ে পড়ত।'

অন্যকে হাসিয়ে নিজের আনন্দের ডালা আরো ভরিয়ে তুলতে সেই যুবতী বয়স থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সং সেজে হাজির হতে শুরু করেন তিনি। কখনও একা কখনও বা তার প্রিয় সখী ভানুমতিকে সঙ্গে নিয়ে হলুদ-বিয়ের আয়োজনে জড়ো হওয়া মানুষ হাসানোর জন্য নানা রঙে আবির্ভূত হতেন তিনি। তারপর বহু বসন্ত পেরিয়েছে। সখিনার চুলে পাক ধরেছে, হাতে লাঠি উঠেছে, বয়স ৭০-এর কোটায় পড়েছে কিন্তু আনন্দ বিতরণ থেমে থাকেনি।

আজকাল শারীরিক কারণে বেশিক্ষণ গান গাইতে, নাচতে বা আনন্দ করতে পারেন না। তবুও সুযোগ পেলেই ঝাপি খুলে সাজতে বসে যান। হাজির হয়ে যান আনন্দ বিতরণে। তার এই গুণের খবর জানেন পরিচিত জনরা। তাই তারাও খবর দিয়ে নিয়ে যান সখিনাকে। যদিও সেই সুযোগও এখন মেলে কালেভদ্রে।

সময় বদলেছে। বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ সংস্কৃতির অনেক আচার। সখিনা বলেন, একুন বিয়েত নাচ গান হয় বক্সে (সাউন্ড বক্স) হিন্দি গান বাজায়ে। আগের মতো আর নাটক-হাসি-তামশা হয় না। একুনকার ছেইলেমেইরা অনেক কিছু পারে যা আমরা পারি না। আস্তে আস্তে এগুলো সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সময়ের বদলে যাওয়া নিয়ে সখিনার কোনো খেদ নেই। বরং এ প্রজন্মকে আরো বেশি পারদর্শী বলছেন উদারমনা সখিনা। নিজের সক্ষমতাকে দেখছেন সামান্য হিসেবে। উদার হতে পারাটাও তার গুণেরই অংশ।

মঞ্চ নেই, নেই আলোকসজ্জা, নেই কোনো পারিশ্রমিকও। পাওনা কেবল হাততালি আর মানুষের আনন্দ। মাঝে-মধ্যে খুশি হয়ে কেউ হয়তো কিছু বখিশশ দেন। সেটা মুখ্য নয় তার কাছে। বরং নিজের আনন্দের রঙে আশপাশের মানুষগুলোকে রাঙিয়ে দিয়ে বিনোদিত করেন সখিনা বিবি। বোকা বাক্সের গহবরে, বিজাতীয় সুরের জোয়ারে আরো অনেক কিছুর মতোই বিরল বিনোদিনী সখিনা বিবি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<55079 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1