বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৈষম্যের শৃঙ্খলে নারী

তাসমিমা হামিদ
  ২৪ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুন ২০১৮, ২৩:১৩
বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বদলাতে না পারলে নারীমুক্তি অসম্ভব

সমাজ ও রাষ্ট্রই আসলে নারীর শত্রæ। নারীমুক্তির আন্দোলন আসলে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন। এ ক্ষেত্রে সংস্কার, নতুন আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ, অনেক কিছুর কথাই ভাবা হয়। এদের উপযোগিতা অবশ্যই আছে। কিন্তু সংস্কারের মধ্য দিয়ে এ ব্যবস্থাকে পরিবতর্ন করা যাবে না। নিমর্ম হলেও সত্য, সংস্কার ব্যবস্থাকে দীঘর্স্থায়ী করতে সাহায্য করে। আমরা অবশ্যই সংস্কার চাইব; কিন্তু এ সত্যকে ভুললে চলবে না, বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বদলাতে না পারলে নারীমুক্তি অসম্ভব। আন্দোলনের লক্ষ্যও তাই গোটা ব্যবস্থা পরিবতের্নর। এ ব্যবস্থা পরিবতের্নর স্বপ্ন আমরা দীঘর্কাল দেখেছি, এখনো দেখছি। কিন্তু ব্যবস্থা বদলায়নি। অন্যায় ও অমানবিক এই ব্যবস্থার প্রকোপে বাংলাদেশের সব মানুষ আজ অত্যন্ত দুদর্শাগ্রস্ত ও হতাশায় আক্রান্ত। এ ব্যবস্থা বদলানোর কাজ কেবল মেয়েদের নয়, নারী-পুরুষ সবারই। নারীমুক্তি আন্দোলনকে সমাজ পরিবতের্নর স্বপ্ন হিসেবে দেখতে হবে। না দেখলে তা দূরদশীর্ হবে না এবং লক্ষ্য অজের্নর দিকেও এগোতে পারবে না। আবারও বলি, সমাজ পরিবতের্নর দায়িত্ব নারী-পুরুষ সবারই এবং আন্দোলন ছাড়া পরিবতর্ন সাধনের অন্য কোনো উপায় নেই। যে কোনো আন্দোলনেরই সাফল্য নিভর্র করে শত্রæকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার ওপর। নারীমুক্তি আন্দোলনের ক্ষেত্রেও পুঁজিবাদী সমাজ ও রাষ্ট্রকে মূল শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত করতে আমরা যেন ভুল না করি।

অথৈর্নতিকভাবে স্বাধীন হলেই নারী স্বাধীনতা অজর্ন করবে। নারী স্বাধীনতার আরেকটি অপরিহাযর্ শতর্ হলো শিক্ষা। কিন্তু আমরা অনেকেই তো দেশের সবোর্চ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবোর্চ্চ ডিগ্রিধারী। কিন্তু আমরা কি মানুষ হতে পেরেছি? অথৈর্নতিক সচ্ছলতাও তো আমাদের মানুষের মতো করে পথ চলতে সহায়তা করতে পারছে না। আমার আশপাশ, পরিবেশ, সমাজ সবাই তো আমাকে মেয়ে মানুষই বানিয়ে রাখল। এই পুরুষতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সমাজ এক অদৃশ্য শিকল পরিয়ে আমাকে, আমাদের নিদির্ষ্ট একটি বৃত্তের মধ্যে ঘোরাচ্ছে। লেখাপড়া শিখি বা না শিখি, সংসার করি বা না করি, রাজনীতি করি বা না করি, এই বৃত্তের শিকলে আমাদের জীবনযাপন করতে হবে। এ সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখে যে কায়েমি স্বাথর্; সেই আমার মুক্তির অন্তরায়, বিকাশের অন্তরায়। শোষক শ্রেণি রাষ্ট্র, রাজনীতি, ধমর্, প্রচারমাধ্যম, পরিবারÑ সব ক্ষেত্রকেই তার রক্ষাকবচে পরিণত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমাকে সাজাতে চায় তাদের অনুগত আজ্ঞাবহরূপে। একজন নারীর স্বাধীনচেতা মনোভাব এই সমাজ, সমাজের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেয় না। সমাজ চায় নারী হবে তার আজ্ঞাবহ। তার রূপে রূপায়িত। এই সমাজে নারী এক ধরনের স্বাধীনতা পায়, সে স্বাধীনতা হলো ভোগের। হয় সে নিজেকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করবে অথবা পণ্য ভোগ করবেÑ দামি শাড়ি, দামি গহনা, বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট, মোবাইল ইত্যাদি। আর এসব পণ্য কেনার ক্ষমতা অজর্নই যেন জীবনের লক্ষ্য। সমাজ আমাদের যে স্বাধীনতা দেয়, তার মাধ্যমে সে এক পণ্য দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে