বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারী-পুরুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সহাবস্থানই আসল

ঈদ আনন্দ
নতুনধারা
  ০৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ঈদুল আজহা সন্নিকটে। মুসলমানদের পবিত্র এ উৎসবের সঙ্গে জড়িত ত্যাগের মহান ইতিহাস। যে ইতিহাস থেকে মুসলিমদের শিক্ষণীয় ও পালনীয় অনেক মহৎ বিষয় জড়িত, তার মূলে রয়েছে ত্যাগ। শুধু পশু কোরবানিতে ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা যে নিহিত নয় এ বিষয়টি ঐতিহাসিক, ধর্মবোদ্ধা এমনকি সাধারণ মানুষেরও অজানা নয়। আলস্নাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য নবী ইব্রাহীম (আ.) যে ত্যাগের সুমহান ও অনুপম দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য আলস্নাহর প্রিয় রাসুল হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের ওপর পশু কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাই প্রতিবছর আমরা সবচেয়ে ভালো, স্বাস্থ্যবান ও বলিষ্ঠ চতুষ্পদ পশু কোরবানি করে থাকি। পশু কোরবানির মাধ্যমে মূলত আমরা আমাদের মনের মধ্যে বিরাজমান পশুত্ব, ক্রোধ, লোভ, লালসা, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুগুলোকে পরিত্যাগ করি। কোরবানির শিক্ষা মুসলমাদের কাছে অপরিহার্য। পশু কোরবানির এ বিধান রোজ কেয়ামতের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

লক্ষণীয়, প্রিয় পশুকে কোরবানি দেয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের মায়া ও নিজস্ব ভালো লাগার জিনিসকে আলস্নাহর উদ্দেশে বিসর্জন দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লোভ, মোহ, অন্যায় ভাবনা ও বদভ্যাসকে পরিহার করার শপথ নিয়ে থাকে।

প্রতি বছর আমরা ঈদুল আজহা পালন করি। ঐতিহাসিক একটি দিনকে হয়তো পশু কোরবানির মাধ্যমে স্মরণ করি; কিন্তু ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহার মূল উপলব্ধিকে আমরা ধারণ করতে পারি কি? পারলেও তার প্রতিফলন কি বাস্তবে দেখতে পাই? প্রতিবারই কোরবানির পশুর হাট নিয়ে শুরু হয় চাঁদাবাজি আর জোরদখলের মহাউৎসব। ঈদকে ঘিরে মহাসড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহলস্নায় বেড়ে যায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, কালো টাকা ও জালনোটের ছড়াছড়ি। এক শ্রেণির অসাধু চক্র কোরবানির পশুর হাটে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। ফলে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে কোরবানির পশুর দাম। সাধ থাকলেও সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় কোরবানি দেয়ার ইচ্ছা বিসর্জন দিতে হচ্ছে মধ্য আয়ের অনেককেই। কালো টাকার প্রভাবে সমাজে অসুস্থ প্রতিযোগিতারও সৃষ্টি হচ্ছে। জানি, অনেকেই এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে নেই। কিন্তু কিছু মানুষ, যাদের সংখ্যা কম বলেই বিশ্বাস করতে চাই, তারা কোরবানি ও ঈদুল আজহার মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে সম্পূূর্ণ ব্যর্থ। আর এই ব্যর্থতা যে সমাজকে প্রভাবিত করছে, তা দিবালোকের মতোই সত্য।

আত্মত্যাগের অবশ্যই একটি বিশেষ দিক হচ্ছে অন্য মানুষের সুখ-দুঃখ ও অসুবিধা অনুধাবন করা এবং অন্যের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া থেকে বিরত থাকা। নিজের সামান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে গিয়ে অন্য কারও অসুবিধা সৃষ্টি না করার যে শিক্ষা ঈদুল আজহা দিয়ে থাকে, অনেকেই সেটি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থে যত্রতত্র পশুর হাট বসিয়ে নাগরিকদের অসুবিধার সৃষ্টি করছে- যা মোটেও কাম্য নয়। যারা ঈদুল আজহার এই মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে পারছে না এবং নাগরিক ভোগান্তি সৃষ্টি করছে, তাদের প্রতি সহানুভূতির সুযোগ নেই বরং সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমেই আমরা ঈদুল আজহার নীতিশিক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারি। সবাই নিশ্চয় অবগত আছি, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেখানে-সেখানে হাট পরিচালনা করে সর্বসাধারণের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এতে ঈদে ঘর ফেরত যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু হাট নয়; যত্রতত্র পশু কোরবানি দেয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। না হলে বর্জ্য অপসারণে কর্তৃপক্ষের অসুবিধা হয় এবং পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা খুব একটা সৃষ্টি হয়নি। উপলব্ধি হয়তো আছে, কিন্তু আমরা অনেকেই গভীরভাবে ভাবি না, যত্রতত্র পশু কোরবানি দিলে নিজেদের কষ্ট কিছুটা কমলেও আশপাশের মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। এতে আত্মত্যাগের সুযোগ থেকে নিজেরাই বঞ্চিত হচ্ছি। তাই কোরবানির পশু ক্রয় থেকে শুরু করে তার যত্ন, কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নাগরিক ভোগান্তি ও প্রতিবেশীদের অসুবিধার প্রতি দৃষ্টি দিলে ঈদুল আজহা যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, তার মাহাত্ম্যে আমরা আলোকিত হতে পারি।

আরেকটি বিষয় বেশ লক্ষণীয়। সেটি হচ্ছে কৈারবানির পশুর চামড়ার বাজারে যে কৃত্রিম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তা এক ধরনের অসাধু চিন্তার ফসল ও মাত্রাতিরিক্ত লোভের বহিঃপ্রকাশ, যা ঈদুল আজহার শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। এ ছাড়া চামড়া নিয়ে চাঁদাবাজি, কোলাহল, খুন-খারাবি এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবশ্যই এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পাশে থেকে সামাজিক প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করা উচিত। আমাদের দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র, যেটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। আমরা পরস্পরের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানে ধর্ম যার যার হলেও উৎসব সার্বজনীন হয়ে ওঠে। সমাজে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-গরিব ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের আনন্দঘন সহাবস্থান আমাদের রাষ্ট্রের সৌন্দর্য। আমরা পশু কোরবানির সময় একটু সংবেদনশীল আচরণ করতে পারি, বিশেষ করে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উৎসবের ছবি প্রচারের ক্ষেত্রে আমাদের শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের কথা চিন্তা করে হলেও পশুর রক্তাক্ত বা খন্ডিত মস্তকের ছবি প্রচারে বিরত থাকা উচিত। এ ছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বী অনেকেই এসব ছবি স্বস্তির সঙ্গে দেখতে পারে না। প্রিয় যে পশুকে কোরবানি দিলাম তার খন্ডিত মস্তকের ছবি উৎসবের ছবির সঙ্গে প্রকাশ করার মধ্যে ত্যাগের মাহাত্ম্য প্রকাশ পায় না দৃঢ় বিশ্বাস। আসুন, ঈদুল আজহার ইতিহাসের শিক্ষাকে ধারণ করে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হই। আমাদের লোভ-লালসা ও খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার মাধ্যমে নিজে আলোকিত হই এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করি। আমাদের সবার প্রয়াসেই একটি সুন্দর, উপলব্ধিপূর্ণ ও অপরাধবর্জিত পরিবেশে ঈদ উৎসবমুখর হতে পারে। ধর্মের মূল্যবোধ আলোকিত করুক প্রত্যেক মানুষকে।

নন্দিনী ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<61259 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1