বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তান থাকুক ভালোবাসায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে

নতুন প্রজন্ম ভালোর চেয়ে খারাপটাই গ্রহণ করে বেশি। নিজেদের দেশীয় সংস্কৃতিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ভিনদেশি সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরছে তারা। আর ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটা আরও দু'হাত বাড়িয়ে দিয়েছে
রুমানা নাওয়ার
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আমাদের সন্তানরা ভালোবাসায় বেড়ে উঠুক ছবি : ইন্টারনেট

ভালোবাসা বিনয়ী হতে শেখায়। আবেগ তো স্বর্গীয়। মহান হতে শেখায় মানুষকে। আত্মত্যাগ করতে শেখায়। অকাল খরায় বারিধারা হতে শেখায়। দুঃসময়ে বন্ধু হয়ে হাত বাড়ায়। সান্ত্বনার প্রলেপে অশান্তি উবে দেয়া শেখায়। উন্মত্ত বৈশাখে বুক আগলে রক্ষার মন্ত্রণায় উদ্দীপিত করে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রেম ভালোবাসাকে ভিন্ন চোখে দেখা হতো এক সময়। প্রেমে পড়া ভালোবাসা এসব গোপনে থাকতো মনে মনে। কাউকে ভালো লাগলেও মুখফুটে বলার দুঃসাহস কারো তেমন হতো না। যে দুয়েকজন বলতো সমাজ ও পরিবার তাকে ধিক্কার দিত। পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া উপায় ছিল না প্রেমে পতিত প্রেমিক যুগলের। নিজ পরিবার ছাড়া হতো আজন্মের জন্য। তারা যেমন তাদের সন্তানসন্ততিও বদনামের গস্নানি নিয়ে বড় হতো। কোনো উপলক্ষে আয়োজনে আঙুল উঁচিয়ে দেখানো হতো- এই সেই অমুক পালিয়ে বিয়ে করেছে।

এখনকার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। এখনকার তরুণ-তরুণীরা হরহামেশাই প্রেম করে, প্রেমে পড়ে। সহপাঠী বন্ধু, পাশের বাসার বড় ভাই, বান্ধবীর ভাই- যে কারো। অল্পদিনের বা অনেকদিনের পরিচয় থেকেও এটা হয়। ফেসবুকে প্রেমতো হরহামেশাই হচ্ছে এখন। বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় খুব কম প্রেম ভালোবাসা। আর কম হচ্ছে এটাও বলা যাচ্ছে না। আগের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেড়েছে প্রেমের বিয়ে। চেনাজানা পরিচিতদের সঙ্গে পরিণয়ের এ হার খুব বেড়েছে। বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতাও। বনিবনা না হওয়া, শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে মেনে না নেয়া, অবিশ্বাস, স্বামী স্ত্রীর প্রতি- এর মূল কারণ। প্রেমের বিয়ে টেকে কম- এরকম একটা ধারণা প্রচলিত আমাদের সমাজে। সেটেলড ম্যারেজের স্থায়িত্ব বেশি। কারণ বাবা-মা মুরব্বিরা দেখেশুনে যাচাই-বাচাই করে বিয়ের আয়োজন করে। দশদিক ভাবনাচিন্তা করে তারা জোটি বাঁধে বর কনেতে। প্রেমের বিয়েতে থাকে অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা, পাওয়ার আকুলতা, সর্বোপরি অস্থির। অস্থির একটা সময় পার করে প্রেমিক যুগল। সেটা বয়সের কারণে হোক বা সামাজিক পারিবারিক পারিপার্র্শ্বিক কারণে হোক, বিধি নিষেধের বেড়াজাল উপেক্ষা করে এগোয় তারা। বাড়তে থাকে প্রেমের বয়স। শেষ পর্যন্ত টিকে গেলে তখন তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। আর এখনকার প্রেম তো সামান্য কথাকাটাকাটিতে মনোমালিন্য খুনসুটিতে ব্রেকআপে চলে যায়। ফের নতুন নতুন প্রেমে পড়া হাল সময়ের ট্রেন্ড। যার কারণে স্থায়িত্ব হয় না প্রেমের, টেকেনা বহুদিন পর্যন্ত তা আর। অতিরিক্ত খোলামেলা হয়ে পড়েছে পোশাকের মতো প্রেম ভালোবাসাও। রাখঢাক নেই, যতো প্রকাশ করা যায় ততই যেন বীরত্ব। চিঠিতে আগে প্রেমের যে আবেগ লুকানো ছিল সে প্রেম কোথায় হারিয়ে গেল। উপহারের মধ্যে ছিল গোলাপের পাপড়ি, ময়ূরের পাখনা এ রকম সহজলভ্য কিছু জিনিস। গোলাপের পাপড়িটা বইয়ের ভাঁজে ডায়েরির পাতায় লুকিয়ে রেখে দেখার যে সুখ, যে মাদকতা- তা এখনকার নামিদামি উপহারেও নেই। শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ পাপড়ি যে সুবাস বিলাতো তা অন্য কোনো দামি ফুলে মিলে না এখন। এখন প্রেম জমে কফিশপে, ইমু হোয়াইটস অ্যাপ, টুইটারে। মনে জন্ম নেয়ার ফুরসৎ মিলে না হালের প্রেম ভালোবাসার। মনে বাসা বাঁধার আগেই হারিয়ে যায়। এক মন থেকে অন্য মনে বাসা বাঁধতে সময় লাগে না মোটেও। তাইতো লাইলী-মজনু ও শিরি-ফরহাদের মতো প্রেমিক জুটির দেখা মেলে না আর। ক্ষণিকের দেখা কিংবা অদেখার সে প্রেম প্রণয় কোথায় হারালো- আফসোস হয়।

কাউকে ভালোলাগলে তা বলতে মাসের পর মাস বছরের পর বছর চলে যেত। মুখ ফুটে বলার সে সাহস বা রুচি তখনকার প্রেমিক-প্রেমিকার ছিল না। চোখের দেখাতে তৃপ্ত হতো মন। পাশাপাশি বসা ধরাছোঁয়া তো দূরের কথা। আর এখন ভিন্ন চিত্র। প্রেমের গভীরত্ব বলেন, ঘনত্ব বলেন, সব প্রকাশ্যেই ছাড়। আড়ালে আবডালের ভালোবাসা প্রেম হারিয়ে গেছে কালের বিবর্তনে।

নতুন প্রজন্ম ভালোর চেয়ে খারাপ টাই গ্রহণ করে বেশি। নিজেদের দেশীয় সংস্কৃতিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ভিনদেশি সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরছে এখনকার প্রজন্ম। আর এখন তো ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটা আরো দুহাত বাড়িয়ে। কারণে অকারণে ফাঁসানো হচ্ছে প্রেমের ফাঁদ পেতে। গোপনে ভিডিও ধারণ অতঃপর ফাঁস। বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া। এতেও কাজ না হলে হুমকি ধামকি। সইতে না পেরে ভিকটিম আত্মহননের পথ বেছে নেয়। যা কখনো কারো কাম্য নয়। নষ্ট সময়ের ভ্রষ্ট প্রণয় গীতি উবে যাক আমার সোনার বাংলাদেশ থেকে। লালন হাসনের দেশ থেকে। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি থেকে। প্রেম হোক স্বর্গীয়। প্রকৃত প্রেম বেঁচে থাকুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আমাদের সন্তানরা ভালোবাসায় বেড়ে উঠুক দিনের পর দিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66867 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1