শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নভোচারী নারীর মহাকাশ জয়

আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র প্রথম একজন নারীকে মহাকাশে প্রেরণ করেন। আর ৪০ বছর আগে নাসা প্রথম নির্বাচন করে একজন নারী নভোচারীকে। সাম্প্রতিককালে বাঙালি নারী ড. সুনিতার হাত ধরেই উন্মোচিত হতে চলেছে মহাকাশ বিজ্ঞানের এক অসীম রহস্য। তিনি প্রথমে 'রকেট সায়েন্টিস্ট' হিসেবে গবেষণা শুরু করেছিলেন 'বোয়িং স্পেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন' সেন্টারে। নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছেন মঙ্গলগ্রহ, অ্যাস্টরয়েড বা গভীর মহাশূন্য নিয়ে গবেষণায়।
আফশিন তিরানা
  ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
মহাকাশ স্টেশনে কাজ করেন এমন নারীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী অ্যালিসন ম্যাকলিনটয়ার উক্তি দিয়েই শুরু করা যাক। তার দাবি, মঙ্গলগ্রহে প্রথম অবতরণকারী একজন নারী হওয়া উচিত। তার মতে, মেয়েদের অবশ্যই এ কাজে সামনের সারিতে আনা উচিত এবং যেদিন কোনো মানুষকে নাসা মঙ্গলগ্রহে পাঠাবেন, তার নারীই হওয়া উচিত।

দারুণ এক তথ্য হলো এই- এক বাঙালি নারীর হাত ধরেই উন্মোচিত হতে চলেছে মহাকাশ বিজ্ঞানের এক অসীম রহস্য। বোস-আইনস্টাইন তত্ত্ব মেনে পরমাণু বিদীর্র্ণ হলে কতটা বিপুল পরিমাণ শক্তির উৎপত্তি হয় তা আমাদের অনেকের জানা। কিন্তু অত্যাধিক কম তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম কণার গতিবিধির কি পরিবর্তন হয় সেটারই গবেষণা চলছে 'কোল্ড অ্যাটম ল্যাবরেটরি'তে। আর এই ল্যাবরেটরির প্রজেক্ট ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন ড. অনিতা সেনগুপ্ত। ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তার নেতৃত্বেই এগিয়ে গেছে 'লেসার কুলিং কোয়ান্টাম ফিজিক্সে'র বাস্তবতা যাচাইয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

ড. সুনিতা প্রথমে 'রকেট সায়েন্টিস্ট' হিসেবে গবেষণা শুরু করেছিলেন 'বোয়িং স্পেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন' সেন্টারে। নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছিলেন মঙ্গলগ্রহ, অ্যাস্টরয়েড বা গভীর মহাশূন্য নিয়ে গবেষণায়। এরপরেই ডাক আসে নাসা থেকে। এক সময় নাসার জেট প্রপেলেশন ল্যাবরেটরির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই 'লেসার কুলিং কোয়ান্টাম ফিজিক্স' নিয়ে গবেষণার কথা মাথায় আসে তার। এমনকি নাসার মঙ্গলযান 'কিউরিসিটি রোভারের'ও সুপারসনিক প্যারাসুট ল্যান্ডিংয়ের আসল রূপকার ছিলেন তিনিই।

বলা বাহুল্য, অত্যাধিক কম তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম কণার গতিবিধির কি পরিবর্তন হয় সেটারই গবেষণা গভীরভাবে যদিও চলছে কিন্তু পৃথিবীতে এই তাপমাত্রা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সেজন্য সব পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চলবে পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)। এসব কমর্কান্ডের পরিকল্পনা ড. অনিতা সেনগুপ্তরই মস্তিষ্ক প্রসূত। তিনি জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মহাশূন্যের তাপমাত্রার চেয়েও ১০ বিলিয়ন গুণ কম তাপমাত্রার সৃষ্টি করা হবে আইএসএসে। সেখানে পদার্থের পরমাণুগুলোর অবস্থাটা হবে কোয়ান্টাম অবস্থার মতো। একসঙ্গে অনেকটা জায়গাজুড়ে যেমন তরঙ্গ বা ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে তেমনি একটা 'কোয়ান্টাম কণা' তেমনই একই সঙ্গে, একই সময়ে অনেক জায়গায় বা অবস্থায় থাকতে পারে। শুধু ধরাছোঁয়ার জন্য তৈরি করা প্রয়োজন 'কোয়ান্টাম গ্যাস'। মাধ্যাকষর্ণ বলের কারণে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট অবস্থা নিয়ে পৃথিবীতে পরীক্ষা করা খুব মুশকিল। এই কারণে আমাদের এই গ্রহে যে জায়গায় পদার্থের ওই অবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, সেখানে চোখের পলক পড়তে না পড়তেই ওই অবস্থায় থাকা পরমাণুগুলো স্থির হয়ে যাবে। এক কথায় গবেষণা চালানোই অসম্ভব। কিন্তু মহাকাশে, যেখানে অভিকর্ষ বল শূন্য (মাইক্রো-গ্র্যাভিটি), সেখানে পদার্থের ওই বিশেষ অবস্থায় বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটকে নিয়ে অনেক বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। অনিতা এই বিষয়ে আরও জানান, এটা সত্যি সত্যিই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কারণ, মহাকাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করার আগে আমরা দেখতে চেয়েছিলাম আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহেও কৃত্রিমভাবে ওই বিশেষ দুটি মৌলিক গ্যাসের (পটাসিয়াম ও রুবিডিয়াম) 'কোয়ান্টাম অবস্থায় পৌঁছানো যায় কিনা। একপর্যায়ে জানা গেছে, জোরালো মাধ্যাকর্ষণ বল থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীতে এটা সম্ভব হয়েছে। তার বিশ্বাস, পৃথিবীতে এটা সম্ভব হলে মহাকাশে এই পরীক্ষাটি করা আরও সহজ হবে।

মহাকাশ স্টেশনে কাজ করেন এমন নারীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র প্রথম একজন নারীকে মহাকাশে প্রেরণ করেন। আর ৪০ বছর আগে নাসা প্রথম নির্বাচন করে একজন নারী নভোচারীকে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসাতে ৩০ বছর ধরে আছেন অ্যালিসন ম্যাকলিনটায়ার এবং এই সময়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নাসারপ্রণ্য এক নারী নভোচারী কারেন নেইবার্গ ইতোমধ্যে ছয় মাসের বেশি সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমাকে যখন ২০০০ সালে প্রথম নভোচারী হিসেবে বেছে নেয়া হলো, তখন আমি ভেবেছিলাম একটা বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হলো যে আমরাই হয়তো পরে চাঁদে যাবো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে আমরা সে সুযোগটা পাইনি'। নারীরা আদৌ চাঁদে যেতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নে কারেনের উত্তর 'এটা হবে। তবে এখানে অনেক রাজনীতি চলে, প্রচুর অর্থের দরকার। সুতরাং বিষয়টা যে খুব দ্রম্নত হবে সেটা মনে হচ্ছে না, তবে একদিন অবশ্যই হবে'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<69595 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1