শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে

সীতাকুন্ড সার্কেলে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নারী নির্যাতন, পারিবারিক কলহ, যৌতুকের জন্য নির্যাতনসহ ৭৬টি মামলার সমাধান করেছেন। পাশাপাশি সঠিক বিচারের মাধ্যমে সব বিবাদের অবসান ঘটিয়ে আবারও ৭৬ পরিবারকে জুড়ে দিয়েছেন সংসার বন্ধনে। ইতোমধ্যে তিনি সততা, সাহসিকতা ও সঠিক কর্মপন্থার মাধ্যমে অর্জন করেছেন পিপিএম, বিপিএমসহ দুটি রাষ্ট্রীয় পদকও
নতুনধারা
  ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড

মা চাইতেন মেয়ের বাংলাদেশের কোনো একটি গর্বিত বাহিনীর পোশাক থাকুক। ছোটবেলা থেকেই সে কথা বুঝিয়ে মেয়েকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেন তিনি। বাবারও সম্মতি ছিল তাতে। আর মা-বাবা দুজনেরই এমন ইচ্ছা থেকেই প্রস্তুতি নেন মেয়েও। শেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০১০ সালে তাদের আদরের মেয়ে শম্পা রানী সাহা পুলিশের এএসপি পদে চাকরি পান। এতে শুরু হয় স্বপ্নপূরণের এক নতুন গল্প। যে গল্প প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করছে এ দেশের পিছিয়ে পড়া নারীদের। উৎসাহিত করে তার সহকর্মীদেরও।

পুলিশের এই গর্বিত সদস্য শম্পা রানী সাহা বর্তমানে সীতাকুন্ড-সন্দ্বীপ সার্কেলের এডিশনাল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বরাবরের মতোই সাহসিকতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে এখানেও বেশ কয়েকটি বড় সফলতা অর্জন করেছেন এ দক্ষ অফিসার। যা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে বসে কথা হয় তার সঙ্গে। সদা হাস্যোজ্জ্বল এডিশনাল এসপি শম্পা রানী দৈনিক যায়যায়দিনকে জানান তার কর্মজীবনের কথা। নরসিংদী সদর উপজেলার নির্মল চন্দ্র সাহা ও হিমাংশু বালা সাহার দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় তিনি।

শম্পা রানী বলেন, আসলে একদম ছোটবেলা থেকেই এরকম কোনো চাকরির কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমি। প্রথম প্রেরণা আমার মা। তিনি ছোটবেলা থেকেই বলতেন এমনভাবে তৈরি হও যাতে দেশের কোনো একটি গর্বিত বাহিনীর সদস্য হতে পারো। বাবা বলতেন শুধু নিজের জন্য নয়- যেন সমাজের অন্য নারীদেরও সেবা করতে পারো সেভাবেই প্রস্তুতি নাও। মূলত তাদের এ ইচ্ছা ও স্বপ্ন পূরণ করতে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে থাকি। নিজ এলাকা নরসিংদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা কলেজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে ২০১০ সালে এএসপি হিসেবে চাকরি পান তিনি। প্রথম যোগ দেন ঢাকা জেলা পুলিশে। তারপর ঢাকা মেট্টো পলিটন পুলিশে চাকরি ও ইউএনও মিশন শেষ করেন। সবখানেই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করায় ২০১৬ সালে এএসপি থেকে এডিশনাল এসপি হিসেবে পদোন্নতি পান। পরে দেড় বছর বান্দরবান সদর সার্কেলের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি যোগ দেন সীতাকুন্ডে। এখানে সীতাকুন্ড-সন্দ্বীপ সার্কেলের এডিশনাল এসপি হিসেবে কাজ করছেন।

শম্পা রানী সাহা আরও বলেন, আসলে একমাত্র পুলিশের চাকরিতেই সাধারণ মানুষকে সরাসরি সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। আমি পেশাটি সেবার হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছি। যখন কোনো অসহায় নারী-পুরুষ সাহায্যের জন্য আসেন দিন শেষে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়। সে সময় মনে হয় এ জন্য পুলিশের চাকরি দরকার। এডিশনাল এসপি শম্পা রানী বিবাহিত। এক পুত্র সন্তানের জননী তিনি। তার স্বামীও সরকারি চাকরিজীবী। তিনি স্ত্রীকে সবসময় উৎসাহিত করেন। চাকরিজীবনে নিজের অন্যতম সফলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ঢাকা মেট্টো পলিটন পুলিশে চাকরিরত অবস্থায় চাঞ্চল্যকর ডক্টর ইভা হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি বাস্তবায়ন, বান্দরবানে পাচারকারীদের হাত থেকে ১৪ জন কিশোরীকে উদ্ধার করে মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া, সীতাকুন্ডের ত্রিপুরা পাড়ায় দুই কিশোরীর হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রম্নততম সময়ে গ্রেপ্তার সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর সন্দ্বীপে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সরঞ্জামসহ কুখ্যাত দুই সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারসহ আরও অনেক সফলতা কর্মক্ষেত্রে প্রেরণা জোগাচ্ছে। তবে প্রত্যেকটি স্টেশনে চাকরিতে সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই এসব সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ অভিযানেও চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনার দিক-নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা ছিল। এ কারণেই সফলতা এসেছে। এভাবেই ভবিষ্যতেও তার চারপাশের অবহেলিত নারী ও অসহায় মানুষের সেবা করতে চান বলে জানান এ সাহসী নারী পুলিশ সদস্য।

এদিকে এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহার সেবার এসব কথা যে শুধুই কথার কথা নয় তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। সীতাকুন্ড থেকে ২০ কিলোমিটার দুর্গম বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে দায়িত্ব পালনে যেতে হয় সন্দ্বীপেও। তিনি ঝড়-তুফান উপেক্ষা করেও পেশাগত দায়িত্ব পালনে এ দুই উপজেলার সর্বত্র ছুটে গেছেন সাহসিকতার সঙ্গে। এ পর্যন্ত কোথাও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। বরং শম্পা রানীই যেন অনেকেরই শেষ ভরসার স্থলে পরিণত হয়েছেন। সীতাকুন্ড সার্কেলে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নারী নির্যাতন, পরিবারিক কলহ, যৌতুকের জন্য নির্যাতনসহ ৭৬টি মামলার সমাধান করেছেন। পাশাপাশি সঠিক বিচারের মাধ্যমে সব বিবাদের অবসান ঘটিয়ে আবারও ৭৬ পরিবারকে জুড়ে দিয়েছেন সংসার বন্ধনে। ইতিমধ্যে তার সততা, সাহসিকতা ও সঠিক কর্মপন্থার মাধ্যমে অর্জন করেছেন পিপিএম, বিপিএমসহ দুটি রাষ্ট্রীয় পদকও।

সীতাকুন্ড ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন বলেন, এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা এখানে অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। একজন নারী হয়েও তিনি পুরুষদের চেয়েও বেশি দ্রম্নততায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান। যে কোনো অপরাধ দমন কিংবা সামাজিক গঠনমূলক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি সবাইকে প্রেরণা দিচ্ছে।

সীতাকুন্ডের এমপি আলহাজ দিদারুল আলম বলেন, শম্পা রানী সাহা পুলিশের একজন চৌকস অফিসার। তিনি অতি অল্প সময়ে তার দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন কাজের মাধ্যমে। মানুষ হিসেবেও তিনি খুবই ভালো মনের। এ কারণে সাধারণ মানুষ তার কাছে গিয়ে নিজেদের কথা বলতে পারছেন। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে তিনি কর্মক্ষেত্রে আরও অনেক দূর যেতে পারবেন বলে মনে করেন এমপি দিদার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<82866 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1