শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আটলান্টিকে বাংলাদেশি নারী সমুদ্রবিজ্ঞানী

নন্দিনী ডেস্ক
  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মারুফা ইসহাক যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত ওল্ড ডমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির ওশান, আর্থ অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক সায়েন্স বিভাগে পিএইচডি প্রথমবর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার এমএস অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল উত্তর বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি স্রোত। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ওশান সায়েন্স বিভাগে দেড় বছর প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি অলটিমেট্রি ডেটা নিয়ে পড়াশোনা করেন ফ্রান্সের ল্যাবোরেটোয়্যার দ'এতুদেস এনজিওফিজিক এত ওশানোগ্রাফিক স্পেশিয়ালেসে (লেগোস)। স্যাটেলাইট অলটিমেট্রির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটার প্রভাবক নির্ণয়ে কাজ করেছেন ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। পিএইচডি শুরুর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসজুড়ে ফ্লোটিং সামার স্কুলের হয়ে একদল বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আটলান্টিকে গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে যোগ দেন।

বিশ্বের ২৩টি দেশের ২৫ জন তরুণ সমুদ্রবিজ্ঞানী ভেসে বেড়িয়েছেন দক্ষিণ ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে। দলটি নির্বাচিত হয় বিভিন্ন দেশের প্রায় ৮০০ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে। সঙ্গে ছিলেন নামজাদা সমুদ্রবিজ্ঞানী আর সমুদ্রবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। জার্মান রিসার্চ আইসব্রেকার জাহাজ আরভি পোলারস্টার্ন দলটি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ থেকে, শেষ করে জার্মানির ব্রেমারহ্যাভেনে। এই মিশনের পুরো ব্যয় বহন করেছে নিপ্পন ফাউন্ডেশন এবং আটলান্টোস। 'ফ্লোটিং ট্রেনিং স্কুল' হিসেবে পরিচিত এই দলে ছিলেন বাংলাদেশের তরুণ সমুদ্রবিজ্ঞানী মারুফা ইসহাক। এই আটলান্টিক অভিযানের মূল আয়োজক পার্টনারশিপ ফর অবজারভেশন অব গেস্নাবাল ওশান (পোগো), সহযোগী হিসেবে ছিল স্ট্র্যাটেজিক মেরিন অ্যালায়েন্স ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এসএমএআরটি) এবং জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগনার ইনস্টিটিউটের (এডবিস্নউআই) হেল্মহোল্টজ সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড মেরিন রিসার্চ। আগামী দিনের সমুদ্র বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ১৩ এবং ১৪ নম্বর লক্ষ্যমাত্রার কৌশলপত্র মেনে আটলান্টিকের সার্বিক অবস্থা নিরূপণই ছিল এ মিশনের মূল উদ্দেশ্য। অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীদের সমুদ্রের নানাবিধ পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করতে শেখানোর পাশাপাশি সমুদ্রতলের উষ্ণতা বৃদ্ধি, মাইক্রোপস্নাস্টিক দূষণ মোকাবিলা করার মাধ্যমে সমুদ্রকে সুস্থ রাখার উপায়গুলোও হাতে-কলমে শেখানো হয়। এই যাত্রার প্রথমে চিলির পুয়েন্টে এরেনাস শহরে দুই দিনের কর্মশালা শেষে বিমানে করে যেতে হয় ব্রিটেন নিয়ন্ত্রিত ফকল্যান্ড দ্বীপে। ফকল্যান্ড দ্বীপের পোর্ট স্ট্যানলি থেকে স্পিডবোটে প্রায় আধা ঘণ্টা চলার পর সমুদ্রের মধ্যে বেশ দূরে নোঙর করে থাকা এমভি পোলারস্টার্নের দেখা পায় দলটি।

সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়া করার জন্য সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে এ জাহাজে। মূলত বরফ কেটে আর্কটিক অথবা দক্ষিণ মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অ্যান্টার্কটিকার মতো দুর্গম জায়গায় সমুদ্রবিজ্ঞানসংক্রান্ত গবেষণার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে আরভি পোলারস্টার্ন।

জাহাজে ওঠার পরদিন থেকেই গবেষকরা পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ শুরু করেন। প্রতিটি দলের কাজের ধরন আলাদা। এক সপ্তাহ পরপর প্রতিটি গ্রম্নপের কাজের ধরন পাল্টে যায়। নাসা (আমেরিকা), আলফ্রেড-ওয়েগনার ইনস্টিটিউট (জার্মানি) এবং আরও কয়েকটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ জন বিশিষ্ট সমুদ্রবিজ্ঞানী প্রশিক্ষক হিসেবে এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সমুদ্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এসব নিয়ে রাতদিন প্রশিক্ষণ চলেছে। দক্ষিণ থেকে উত্তর আটলান্টিকের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব, মাইক্রো-পস্নাস্টিকসহ বিভিন্ন দূষণ সৃষ্টিকারী পদার্থের ক্রমেই পরিবর্তন পরিমাপ এবং পরিবর্তনের প্যাটার্ন খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে ডেটা সংগ্রহ করা হয়। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ডেটার সঙ্গে এ সব তথ্য মিলিয়ে সমুদ্রের বর্তমান অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<90439 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1