শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংগ্রামে চেতনায় দুঃসাহসী নারী

বহু নারী ছিলেন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন, সেবা-শুশ্রূষা করেছেন, অনাহারী-অর্ধাহারী ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনো মমতাময়ী মায়ের মতো, কখনও বা বোনের মতো। নিজে না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে খাবার রান্না করে পাঠিয়েছেন, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।
শেখ একেএম জাকারিয়া
  ২১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বাঙালি সমাজজীবনে শ্রেষ্ঠ একটি শব্দ নারী। পুরুষের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা অমত প্রকাশ করার কোনো জো নেই। এ দেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে নারীর অবদান বিশদ আলোচনা করলে দেখা যায়, নারী তার সব সামর্থ্য প্রয়োগ করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরিতে। ১৯৭১ সালে জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন অগণিত বাঙালি নারী। অথচ আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীর অবদান সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। নারীর অবদান একমাত্র লাঞ্ছিত ও ধর্ষিত হওয়ার মধ্যেই নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিবৃতিতে নারীকে মৌলিক-ধারায় নিয়ে না আসার একটি যুক্তি হচ্ছে- এ যুদ্ধে ব্যাপ্ত পরিসরে অসচ্ছল, অশিক্ষিত, নিচু শ্রেণির নারীরা অংশগ্রহণ করেছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এসব নারীকে ইতিহাস শিষ্ট ও বিদ্বজ্জন জাতির কাছে ইতিহাসরূপে গৃহীত হতে শুরু করে বাংলাদেশ হওয়ার প্রায় তিন দশক পর। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে গবেষণাধর্মী কাজ চালু হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে 'মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ' এমন সংবাদ বিস্তৃত পরিসরে প্রচার হয়নি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, কিছু নারী যোদ্ধা আছেন যাদের নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ হয়েছে, জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন। আবার কিছু নারী যোদ্ধা আছেন যাদের নিয়ে এই সময়ে কাজ শুরু করেছেন কিছু তরুণ গবেষক। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ধর্ষণের ঘটনাই চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে প্রচারিত হয়েছে সব থেকে বেশি। আর এ কারণেই সম্ভবত রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা মঞ্চে উঠেই অনর্গল বলতে থাকেন, তিরিশ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোন, বউ-ঝির সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা।

যুদ্ধের সময় বাঙালি নারীরা আমাদের অনেক বড় সহায়-শক্তি ছিল একথা অনেকেই ভুলে গেছেন। এ নারীরা কখনো সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিয়েছেন আবার কখনও বা যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। দুঃসাহসী নারীরা যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবে কাজ করেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। বহু নারী ছিলেন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন, সেবা-শুশ্রূষা করেছেন, অনাহারী-অর্ধাহারী ক্ষুধার্থ মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনো মমতাময়ী মায়ের মতো, কখনও বা বোনের মতো। নিজে না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে খাবার রান্না করে পাঠিয়েছেন, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এক কথায় মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। পুরুষের পাশাপাশি নারীর বুদ্ধি-বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা ও সাহসের ফল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। যুদ্ধের সময় অস্ত্র হাতে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রম্নর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন অনেক বাঙালি নারী। তাদের মধ্যে কাঁকন বিবি, তারামন বিবি, শিরিন বানু মিতিল, আশালতা, রওশন আরা প্রমুখ উলেস্নখ্য। এসব নারী সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোবরা, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে। গোবরা ক্যাম্পে মেয়েদের দেয়া হতো তিন রকম ট্রেনিং। যেমন- সিভিল ডিফেন্স, নার্সিং, অস্ত্র চালনা ও গেরিলা আক্রমণ। ভারতে শরণার্থী শিবিরে ডাক্তার, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসংখ্য নারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সেবা করেছেন।

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে অংশ নিয়েছেন অনেক নারী শিল্পী। তা ছাড়া যুদ্ধ চলাকালে অনেক নারী কবি, লেখক, সাংবাদিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। তাদের লেখায় ও শিল্পীদের গানে ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। শুধু তাই নয়- শহর-গ্রামের পথেঘাটে, গান পরিবেশন করে অনেকেই অর্থ জোগাড় করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদানের জন্য। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের এত অবদান থাকা সত্ত্বেও নারীরা সমাজ ও রাত্রের কাছ থেকে বিশেষ কোনো স্বীকৃতি পাননি। অনেক নারীযোদ্ধাই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন কেউ তাদের খবরও রাখেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93398 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1