বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
বেড়ানো

নতুন কিছুর সন্ধানে

কোথাও ঘুরতে বের হবার পর খাবার-দাবার ভালভাবে না করলে কি হয়। আর কমলা হলো সিলেটের প্রসিদ্ধ ফল। বাইরে কি আছে তা দেখার চেয়ে আমি মোটামুটি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কমলার আবরণের ভেতরে কী আছে তা দেখার জন্য...
সুমন্ত গুপ্ত
  ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

‘মধদিনে যাবে গান/ বন্ধ করে পাখি,

হে রাখাল, বেণু তব/ বাজাও একাকী।

শান্ত প্রান্তের কোণে/ রুদ্র বসি তাই শোনে

মধুরের ধ্যানাবেশে/ স্বপ্নমগ্ন অঁাখি;

হে রাখাল, বণু যবে/ বাজাও একাকী।...’

কবি গুরুর এই কথার রেশ ধরে আমি আর মুসা ভাই চললাম সেই পথে প্রান্তরে নতুন কিছুর খেঁাজে। আমি সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ি অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কখনো চলি একাকী কখনো আবার সঙ্গী সাথী নিয়ে। তবে এবারের সঙ্গী মুসা ভাই। আমাদের আজকের গন্তব্য বিন্নিখুলি। সিলেট শহর থেকে আমরা বেশ সকালে রওয়ানা দেই। কারণ আমাদের বিন্নিখুলি পৌঁছাতে হলে আগে সুনামগঞ্জ শহরে পৌঁছাতে হবে পরে সুনামগঞ্জ শহর থেকে বিন্নিখুলি আরো এক ঘণ্টার রাস্তা। আমাদের চার চাকার যান এগিয়ে চলছে সিলেট শহর পেড়িয়ে রাস্তার দুই পাশে গাছের সারি আপনার মন কে ভরিয়ে দিবে। ভ্রমণের মূল শতর্ হল দেখা। তাই গাড়িতে ওঠে আমরা প্রথম কিছুক্ষণ দেখাদেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ভ্রমণের মূল শতর্ পূরণ করতে গিয়ে চির চেনা ঢাকার বাইরের এক পৃথিবীতে আমরা মনোযোগ দিয়ে দেখতে আরম্ভ করলেন। এ দেখাদেখির চোখে এসে বাদ সাধলো চোখের সামনে হঠাৎ ধরা চলতি পথের আপ্যায়ন হিসেবে কমলা। মুসা ভাই গত রাতে ঢাকা থেকে আসার সময় ট্রেনে কখন যে কমলা কিনেছেন টের ই পাই নাই তবে এক দিকে ভালোই হোল মুখটা খালি ছিল। কোথাও ঘুরতে বের হবার পর খাবার দাবার ভাল ভাবে না করলে কি হয়। আর কমলা হল সিলেটের প্রসিদ্ধ ফল। বাইরে কি আছে তা দেখার চেয়ে আমি মোটামুটি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কমলা আবরণের ভেতরে কি আছে তা দেখার জন্য। কমলা খেয়ে আবার মনোযোগ দিলাম প্রকৃতি দেখতে। আমরা এগিয়ে চলছি মাঠ ঘাঁট পেরিয়ে গত রাতে বৃষ্টির ফলে প্রকৃতি আর সবুজ রূপ ধারণ করেছে। সিলেট শহর থেকে লামাকাজি , পাগলা, গোবিন্দগঞ্জ পেরিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সুনামগঞ্জ শহর পানে। সকাল দশটার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম সুনামগঞ্জ শহরে সেখানে কিছু সময় যাত্রা বিরতি দিয়ে আমরা আবার ধাবিত হলাম আমাদের গন্তব্যে। বিন্নিখুলি যেতে হলে আপনাকে মোটরসাইকেলে যেতে হবে তবে সি এন জি তে যেতে পারবেন। প্রকৃতির রূপ দেখতে হলে মোটরসাইকেল এ যাওয়া ই ভালো। সারা রাস্তায় আমরা ছবি তুলে তুলে গেলাম। পলাশ বাজার পেরিয়ে আমরা এসে পৌঁছলাম বিন্নিখুলিতে। মাঠের পর মাঠ তরমুজ এর চাষ হচ্ছে। এ দিকে ভর দুপুর রোদে ডোরা কাটা তরমুজ গুলো দেখতে খুব লোভনীয় লাগছে। তপ্ত রোদে তরমুজ এর স্বাদ অন্যরকম লাগার কথা তাই খেতে খুব ইচ্ছা করছিল কিন্তু আসে পাশের সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। শেষমেশ দেখা মিলল রমিজ মহাজনের সাথে তার বদান্যতায় আমারা তরমুজ খেলাম। অসাধারণ স্বাদ তপ্ত রোদের মাঝে তরমুজ খেতে অমৃত লাগছিল। রমিজ মহাজন বলছিলেন এ গ্রাম জুড়েই কম বেশি সবাই তরমুজের চাষ করে। আমি আর মুসা ভাই তরমুজ ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটি। সব চাষিরা যে যার কাজে ব্যস্ত কেউ ক্ষেতের পরিচযার্ করছে, কেউ সংগ্রহ করছে তরমুজ। আবার কেউ কেউ ক্ষেতের পাশে তৈরি অস্থায়ী ছাউনিতে বসে পাহারা দিচ্ছে। এ অঞ্চলে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারা ও কাজ করছে কেউই বসে নেই ঘরে। তরমুজ ক্ষেতের মাঝে দ্যাখা মিললো গতের্র রমিজ মহাজন বললেন এখানে চাষিরা বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখেন তরমুজ ক্ষেতে দেবার জন্য। অদূরে মেঘালয়ের অপরূপ যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। দেখতে দেখতে অদূরে গাছের আড়ালে সূযর্ ঢলে পড়েছে। শেষ সূযের্র রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো আকাশ জুড়ে । সেই সাথে অগণিত পাখির নীড়ে ফেরার ব্যাকুলতা । আমরা ও ফিরে চলি শহর পানে গোধূলির স্পনিল মোহে আছন্নে হয়ে।

পথের ঠিকানা : ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী পরিবহন , হানিফ পরিবহন, এনা পরিবহন এর যে কোনো বাসে করে চলে আসুন সুনামগঞ্জে। রাতের বাসে উঠলে ঠিক ভোরে আপনাকে নামিয়ে দিবে পরে শহর ঘুরে যেতে পারেন বিন্নিখুলির দিকে। অথবা রাতের ট্রেন করে ঢাকা থেকে সিলেট পরে সিলেট শহর থেকে মাইক্রবাস করে সুনামগঞ্জ। তবে ট্রেনে করে আসলে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করে আসতে পারবেন। ভাড়া বাসে করে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ ৫০০ টাকা , ট্রেনে ভাড়া ঢাকা থেকে সিলেট ৩০০ থেকে ১২০০। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ ১২০০ টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে বিন্নিখুলি যাওয়া আসা রিজাভর্ ৫০০ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18511 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1