সোরিয়া রওনক

চোখের কাজল মানেই যেন ‘কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ’। তবে দিন বদলেছে এখন ‘কাজল’ মানেই ‘কালো’ নয়। চোখ রাঙাতে এখন চলছে রঙিন কাজলের ব্যবহার। চোখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং অনুষ্ঠানের ধরন বুঝে একটুখানি কাজলের রেখা ঠিকঠাকভাবে চোখে টেনে নিতে পারলে সৌন্দযর্ অনেক বেড়ে যায়। প্রত্যেকের চোখের আকৃতি আলাদা আলাদা হয়। কারও চোখ ছোট আবার কারও চোখ বড়। কারও চোখ টানাটানা আবার অনেকের চোখ ভাসাভাসা। চোখের পাপড়িতেও থাকে ভিন্নতা। তাই কাজল লাগানোর আগে অবশ্যই চোখের ভাষা বুঝতে হবে।

রঙিন কাজল। আগে শুনলে কেমন অদ্ভুত লাগত। কালো চোখে কালো রেখাই তো ভালো। কিন্তু ফ্যাশন ট্রেন্ড বদলে দেয় অনেক ভাবনাই। রঙিন কাজলের ব্যবহারে চোখের ভাষার পরিবতর্ন তো হয়ে গেছেই, সঙ্গে সঙ্গে দেখতেও অনেক জমকালো ও উজ্জ্বল লাগে। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, কমলাÑ বিভিন্ন রং এখন চোখের ওপরে ও নিচে খেলা দেখিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছামতো।

কাজল কেন?

এ অঞ্চলের মানুষের জন্য মেকআপের একটি অংশ হিসেবে কাজলের গুরুত্ব অনেক। অতীতে সাজ বলতে নারীরা কাজলটাই ব্যবহার করতেন বেশি। আমাদের দেশের নারীদের গায়ের রং এবং চোখের ধরনের সঙ্গে কাজল বেশ মানিয়ে যায়। এখন কালো কাজলের পাশাপাশি রঙিন আইলাইনারও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

কালো কাজলের জয়জয়কার তো থাকবেই সব সময়। তবে রঙিন কাজলের আবেদন অন্যরকম। চেহারায় চমৎকার আবেদন তৈরি করবে, যদি সঠিকভাবে লাগাতে পারেন। রং বাছাই করার ক্ষেত্রে খুব একটা মনোযোগ না দিলেও হবে। পোশাকের সঙ্গেও যে রং মিলতে হবে, তা-ও নয়। দু-তিন এমনকি চার-পঁাচটা রংও মিশিয়ে লাগাতে পারেন।

ফাংকি থেকে জমকালো

ফাংকি লুক তৈরি করতে একটু না হয় সাহসিকতা দেখিয়েই দিলেন। একটা রঙের ওপর আরেকটা রঙের রেখা টেনে দিলেন। চোখের নিচে দুটো রঙের ব্যবহার করলেন। আর ওপরে পরপর তিনটি রং। তবে সাধারণ সময়ে যে সাজটা করবেন, সেখানে বিভিন্ন রঙের কাজল একটু বেøন্ড করে দিতে হবে। অথার্ৎ রংগুলো বোঝাও যাবে আবার একটার সঙ্গে আরেকটা মিশেও থাকবে। দুই রঙের কাজল পাশাপাশি লাগাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নাকের পাশ থেকে চোখের মাঝামাঝি জায়গা পযর্ন্ত হালকা রং আর মাঝ থেকে চোখের কোনা পযর্ন্ত গাঢ় রং লাগাতে হবে।

যদি আইলাইনার বা রঙিন কাজল ব্যবহারে মসৃণ রেখা টানা না যায়, আইজেল ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন রঙের আইজেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে চোখ বলে কথা। এ কারণে একটু ভালো ব্র্যান্ডের কাজল, আইলাইনার ও আইজেল ব্যবহার করা উচিত।

দরকার নেই আইশ্যাডো

যেহেতু রঙিন কাজলের আনাগোনা বেশি, আইশ্যাডো না লাগালেও চলবে। এতে বরং কাজলের রংগুলো বোঝা যাবে ভালো করে। চাইলে সবচেয়ে ওপরে যে রঙের কাজল লাগাবেন, তাকে একটু বেøন্ড করে আইশ্যাডোর মতো করে নেয়া যেতে পারে। অনেকের আইশ্যাডো মসৃণ করে পরপর লাগাতে অসুবিধা হয়। তাদের জন্য কাজলের রেখা আইশ্যাডোর মতো বেøন্ড করে লাগানোর পদ্ধতিটা অনেক কাযর্কর।

দিন থেকে রাত

নীল, বেগুনি, সবুজ, লালÑ সব রংই রাতে ও দিনে ব্যবহার করা যাবে। তবে দিনে হালকাভাবে লাগাতে হবে। অথবা ম্যাট রংগুলো ব্যবহার করা যায়। রাতের বেলায় একটু গাঢ়ভাবে এঁকে তার ওপরে শিমার ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগবে।

চোখের মণির সঙ্গে মিলিয়ে

চোখের মণি যদি কালো হয়, তাহলে খুব উজ্জ্বল রং ব্যবহার করবেন না। একটু গাঢ় রঙের বেগুনি, সবুজ ও নীল আইলাইনার ব্যবহার করুন। উজ্জ্বল রং ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে গাঢ় রঙের কাজল মোটা করে লাগিয়ে এরপর উজ্জ্বল রংটি হালকা করে লাগাতে পারেন।

ঠিকভাবে কাজলের ব্যবহার আপনার চোখের অনেক খুঁত অনায়াসেই ঢেকে দিতে পারে। শুধু কাজলেই চোখের সাজ সম্পূণর্ হয় না, প্রয়োজন অনুযায়ী আইল্যাশ ব্যবহার করুন। সেই সঙ্গে মাশকারা অবশ্যই লাগবে। এ ছাড়া কাজলকে আরও আধুনিক করতে বেøন্ড গোল্ডেন অথবা সিলভার আইশ্যাডো দিয়ে হাইলাইট করুন। এরপর পছন্দের যে কোনো রঙের কাজল নিয়ে চোখের ভেতর থেকে চোখের বাইরে পযর্ন্ত টেনে দিন। সব সময় চোখের ভেতরের অংশ থেকে শুরু করে লাইন টেনে চোখের বাইরের অংশে ধীরে ধীরে রেখাটা মোটা করতে হবে। চোখের নিচের পাতার কোণের সঙ্গে কাজল টেনে ওপরের অংশের সঙ্গে মিলিয়ে দিন।

অনেকেরই চোখ ভেতর দিকে থাকে। তাদের চোখে ভাসাভাসা ভাব আনতে আঙুল দিয়ে চোখের কাজল লাগানোর পর আলতোভাবে বেøন্ড করে নিন। চোখে নমনীয়তা ও সজীবতা দুটোই ফিরে আসবে। এরপর ব্যবহার করুন মাসকারা। আর কিছু দরকার নেই। এভাবেই মনের মাধুরী মিশিয়ে চোখ আকষর্ণীয় করে তুলুন।

আজকাল নানা ব্র্যান্ডের কাজল পাওয়া যায়। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা পছন্দ থাকতে পারে। যে রকমই নিন সমস্যা নেই, শুধু ভালো মানের কাজল ব্যবহার করুন। কারণ চোখ খুবই স্পশর্কাতর। তাই কাজল ব্যবহারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

অবশ্যই পানিরোধক কাজল ব্যবহার করুন। নয়তো অনেক সময় কাজল লেপটে গিয়ে মেকআপের বারোটা বাজিয়ে দেয়। তাই খুবই সচেতনভাবে কাজল পরতে হবে। যদি হাতের কাছে ওয়াটারপ্রæফ কাজল না থাকে তবে যে কোনো কাজল ব্যবহার করে তাতে একই রঙের আইশ্যাডো দিয়ে একটু বেøন্ড করে দিন। তাহলেই অনেকক্ষণ কাজল সুন্দর থাকবে। লেপটে যাওয়ার ভয় থাকবে না।