শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বেড়ানো

ঐতিহাসিক মুজিবনগরে

করিডোরে দঁাড়িয়ে নিচে তাকালে বাংলাদেশের একটি বিশাল মানচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। মানচিত্রের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে...
আবু আফজাল মোহা. সালেহ
  ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় এক সভায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীমুক্ত কুষ্টিয়া জেলার মহকুমা চুয়াডাঙ্গাকে বেছে নেয়া হয় এবং ১৪ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণের তারিখ চ‚ড়ান্ত করা হয়। কিন্তু হানাদার বাহিনী তা জেনে ফেলে ও চুয়াডাঙ্গার ওপর পাকিস্তানি বাহিনী হামলা শুরু করে এবং চুয়াডাঙ্গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরবতীর্ সময়ে শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ভারত সীমান্তবতীর্ বৈদ্যনাথতলাকে বেছে নেয়া হয়। অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল এখানে শপথ নেয়। পরে এ স্থানের নামাকরণ মুজিবনগর করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী ঐতিহাসিক মযার্দা পায়।

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ : মুজিবনগর ভ্রমণের অন্যতম আকষর্ণ হলো মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের ওপর মূল বেদিকে কেন্দ্র করে ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে স্মৃতিসৌধটি গঠিত। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে গোলাকার বৃত্তের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীর খুলি বোঝানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ওঠার জন্য মোট ১১টি সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১টি সেক্টরের প্রতীকী হচ্ছে এই ১১টি সিঁড়ি। স্মৃতিসৌধের মূল নকশা স্থপতি তানভীর করিমের। দেয়ালগুলো উদীয়মান সূযের্র প্রতীক। ৩০ লাখ শহীদকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মৃতিসৌধের মেঝেতে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে।

পাশেই রয়েছে মিউজিয়াম। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাকে গুরুত্বপূণর্ আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রদশের্নর জন্য মূল কমপ্লেক্স ভবনের ভেতরে মিউজিয়ামটি নিমার্ণ করা হয়েছে। মিউজিয়ামের ভেতরে ১০ জন জাতীয় নেতার তৈলচিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূণর্ ঘটনার ২৪টি বড় আকারের তৈলচিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

পাখির চোখে মুজিবনগর : এরপর দেখতে পাবেন অন্যতম আকষর্ণ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। ৬৬ একরের বিশাল আয়তনের নান্দনিক এই কমপ্লেক্সটিতে একটি জাদুঘর, মিলনায়তনসংলগ্ন প্লাজা, স্বাধীনতা ক্লাব, পাঠাগার, রেস্টহাউস, হেলিপ্যাড, পিকনিক ¯পটসহ নানা সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। মূল কমপ্লেক্সটি চারতলা উঁচু একটি বৃত্তাকার ভবনকে কেন্দ্র করে আবতির্ত হয়েছে, যার প্রতিটি তলায় দশর্নাথীের্দর জন্য প্রশস্ত করিডোর রাখা হয়েছে।

মানচিত্র : করিডোরে দঁাড়িয়ে নিচে তাকালে বাংলাদেশের একটি বিশাল মানচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। মানচিত্রের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

মানচিত্র শরনাথীর্ : বাইরে কমপ্লেক্স-সংলগ্ন ছয়টি গোলাপ বাগান-Ñযা ছয় দফার প্রতীক। দেখবেন সাতই মাচের্র ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ, মন্ত্রিসভা, পতাকা উত্তোলন, পাক বাহিনীর আত্মসমপর্ণসহ বিভিন্ন ভাস্কযর্। আছে পাক বাহিনী কতৃর্ক বাঙালি নারী ও নিরীহ জনগণের ওপর নিযার্তনের ভাস্কযর্। বিরাটাকার দুটি পাকা দেয়ালে লিখে রাখা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমপর্ণপত্র। বিশাল চত্বরে আছে হেলিপ্যাড আর পাকির্ংয়ের জায়গা।

আছে রেস্টহাউস। এ যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ইতিহাস। চোখ টেনে নেবে ইতিহাসিক কেন্দ্রিক ভাস্কযর্গুলো। পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করবে। অজান্তেই যুদ্ধকালীন অনেক অজানা জেনে যাবেন ঘুরতে ঘুরতে।

একটু দুরেই চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবতীর্ নাটদহে দেখতে পারেন ঐতিহাসিক আট কবর। স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে আটজন বীর যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল পাক পিচাশ ও এ দেশের দোসররা মিলে। এখান থেকে মেহেরপুরের দিকে যেতে দেখতে পারেন আর এক ঐতিহাসিক জায়গা ‘নীল কুঠি’। এখানে ইংরেজদের নীল চাষের ইতিহাস আর সে সংক্রান্ত মিউজিয়াম/স্থপনা(ধংসপ্রাপ্ত) আছে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারেন।

মুজিবনগরে যেতে হলে ঢাকা থেকে সরাসরি মুজিবনগর যাওয়া যায়। অথবা চুয়াডাঙ্গা/ মেহেরপুর এসে পাশ্বর্বতীর্ স্থাপনা দেখে মুজিবনগর। খুলনা বা যশোর থেকে আসলে দশর্নায় নেমে মুজিবনগর যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে ট্রেনে এসে চুয়াডাঙ্গা বা দশর্নায় নামতে হবে। এরপর বাস বা ছোট যানবাহনে মুজিবনগর যাওয়া যাবে। দশর্না থেকে মুজিবনগর ২৬ কিমি দূরে।

থাকা ও খাওয়ার জন্য মেহেরপুর থাকায় ভালো হবে। এখানে নিজর্ন এলাকা আর অনতিদূরে (১০-১২ কিমি) জেলা শহর হওয়ায় থাকা ও খাওয়ার খুব ভালো ব্যবস্থা নেই।

ইতিহাসের সাক্ষী হতে বা দেখতে পারতে বিজয়ের মাসে মুজিবনগর আসতে পারেন। মন্দ হবে না কিন্তু!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<28369 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1