সবুজ শ্যামল প্রকৃতি ও ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবতের্নর সঙ্গে সঙ্গে এক এক রূপে দেখা দেয় আমাদের প্রকৃতি । ঋতুবৈচিত্র্যের এ খেলার ধারাবাহিকতায় শীতে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য আপনার মনকে ভরিয়ে দেবে। এবার সিলেটে ঘুরতে গিয়ে সন্ধান পেলাম সেই রকম এক দৃশ্যের। বলছি সিলেট শহর থেকে খুব কাছের পথ কামাল বাজারের কথা। রাতের ট্রেনে ঢাকা থেকে সকালে সিলেটে এসে পেঁৗছাই আমরা পরে শহরের মণিপুরি বাজার ঘুরে বিকালে আমরা বের হই কামাল বাজারের দিকে। আমরা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি পথে দেখা মিললো মায়াবতি সুরমা নদীর অসাধারণ রূপ। ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা করে মাছ ধরছে নাম না জানা মাঝি। আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে রেললাইনের পাশ বেয়ে। রেললাইনের অঁাকাবঁাকা পথের দৃশ্য মনকে নাড়িয়ে দেয়। আমরা গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে হঁাটা শুরু করলাম এদিকে সূযর্ মামা তার রক্তিম বণর্ প্রদশর্ন করে বেশ মায়াবী রূপ ধারণ করেছে। রেললাইন ধরে হঁাটছি আর নতুন স্থানের সবকিছুকে দেখছি প্রখর দৃষ্টিতে বেশ মনোযোগের সহিত। আমাদের গাড়ির পাইলট মনে করিয়ে দিলেন আমাদের গন্তব্য কামাল বাজারে যেতে হলে এখনি যেতে হবে তাই আবার আমরা গাড়িতে চেপে রওনা দিলাম গন্তব্যে। কামাল বাজার ঢোকার পর থেকেই দেখলাম দু’পাশটাতেই একাধারে আমাদের সঙ্গে দিগন্ত ছোঁয়া সরিষা ক্ষেত। এলোমেলো রাস্তা। বয়সী বটের সারি। বিস্তীণর্ ও নিস্তরঙ্গ মাঠ। প্রকৃতির নিমর্ল বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। অসাধারণ এক অনুভ‚তি যেদিকে তাকাই হলুদ আর হলুদ সরিষা ফুলের গন্ধ মনকে ভরিয়ে দেবে। সে মাদকতার টানেই মৌমাছিদের আনাগোনা চারি ধারে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় বক পাখিদের নিমর্ল বাতাসে ঘুরে বেড়ানো। হঠাৎ করে দেখি হলুদের ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে ছোট্ট একটি বাচ্চা। কৌত‚হল বসে জিজ্ঞেস করলাম কি করছো এখানে ও বলল প্রজাপতি ধরি দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলাম গৃহবধূ শষের্ ক্ষেতে কাজ করছেন। শষের্ ক্ষেতের হলুদ রং যেন আকাশে মিশেছে, সঙ্গে কচি শষের্ ফুল দুলছে মিষ্টি হাওয়ায়। যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দেখা মিলছে হলদু গালিচায় মোড়ানো ফসলের ক্ষেত। এভাবেই আমরা শষের্ ফুলের প্রেমে পড়েছিলাম প্রায় এক ঘণ্টা। বলে রাখা ভালো সরিষা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান তৈলবীজ ফসল। এর ইংরেজি নাম গঁংঃধৎফ ও বৈজ্ঞানিক নাম ইৎধংংরপধ ংঢ়ঢ়. সরিষার তেল শহর-গ্রাম সবখানে খুবই জনপ্রিয়। আমাদের দেশের অনেক জমিতে সরিষার চাষ হয়ে থাকে। এই চাষ করা সরিষা থেকে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। আমাদের দেশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ভোজ্য তেলের জন্য সরিষার ওপর নিভর্র করে। সরিষা ক্ষেতে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় খুব সকাল কিংবা বিকাল। কাছে কিংবা দূরে, যেদিকেই বেড়াতে যান না কেন সরিষার রাজ্যে ভ্রমণে যেতে নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা কোনো গাড়ি নেয়া উচিত। খরচ কমাতে কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করে নিন। তাহলে ইচ্ছেমতো ভালোলাগা যে কোনো জায়গাতেই থেমে যেতে পারবেন।
পথের ঠিকানা : সিলেট শহর থেকে কামাল বাজার সিএনজি অথবা গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে। ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা।