বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বেড়ানো

বাঁশবাড়িয়া

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অবস্থিত ব্রিজটি মজবুত খুঁটি ছাড়া নির্মিত, যার কারণে সাবধানতা বজায় করা উচিত। অহেতুক বড় দল নিয়ে ব্রিজে না ওঠাই ভালো। যেহেতু কোনো বেষ্টনী নেই সেহেতু জোয়ার-ভাটার সময় মেনে চলা উচিত...
সুমন্ত গুপ্ত
  ৩১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

ঘড়ির কাঁটাতে ঠিক তখন দুপুর একটা বাজি বাজি করছে। আবার বৃহস্পতিবার ব্যাংকে কাজের খুব চাপ। এর মধ্যে মোবাইল ফোন বেজেই চলছে। কাজের যন্ত্রণায় ফোন ধরছিলাম না। অনেক সময় ধরে বাজছে শুনে ভাবলাম জরুরি কোনো ফোন হয়তো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো সজল মামার কণ্ঠ 'কিরে ব্যস্ত নাকি'? আমি বললাম কিছুটা ব্যস্ত। মামা বললো নতুন একটি জায়গার সন্ধান পেয়েছি। যেখানে তুই সমুদ্রের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারবি। শুনে আমার কেমন জানি খটকা লাগলো। ধর্মীয় গ্রন্থে শুনেছিলাম বাসুদেব শ্রী কৃষ্ণকে নিয়ে যমুনা নদী পাড়ি দিয়েছিলেন। এখনকার সময় তো তা আর সম্ভব হওয়ার কথা নয় তাও আবার সমুদ্র। আমি আবার পাপী মানুষ আমার দ্বারা তো সম্ভব হওয়ারই নয়। মামাকে বললাম ব্যাপারটা ভেঙে বলতো মামা। মামা বলল এই প্রথম চট্টগ্রামের মানুষ সমুদ্রের ওপর দিয়ে হাঁটার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তখন আমার মাথায় কিছু ঢুকছিল না। আমি আবারও বললাম, মামা ব্যাপারটা খুলে বলো। তখন মামা আমাকে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কথা বলল। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে একটি ছোট্ট বাজারের নাম বাঁশবাড়িয়া বাজার। এই বাজারের মধ্যদিয়ে সরু পিচঢালা পথে মাত্র ১৫ মিনিটে পৌঁছানো যায় বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র উপকুলে। এই সমুদ্র সৈকতের মূল আকর্ষণ হলো, প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি সমুদ্রের ভিতর হেঁটে যেতে পারবি। আমি বললাম ঠিক আছে মামা আমি যাবো। মামার সঙ্গে কথা বলার পর কাজে মন বসাতে পারছিলাম না। কতক্ষণে অফিস থেকে বের হতে পারব তার পাঁয়তারা করছিলাম। সপ্তাহের শেষ দিন সঙ্গে মাসের ও কীভাবে যে স্যারকে বলব একটু আগে বের হতে চাই সেটাই ভাবছিলাম। আমার কাজ দেখে স্যার নিজের থেকেই বললেন 'কি সুমন্ত এত তারাহুড়া করছ কোথাও যাবে নাকি? আমি বললাম স্যার একটা নতুন জায়গার খোঁজ পেয়েছিলাম। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, অনেক সুন্দর জায়গা বুঝি। আপনি অনুমতি দিলে একটু আগে বের হতে চেয়েছিলাম। স্যার বললেন ঠিক আছে আগে বের হয়ো তবে একটা শর্ত আছে আমার। শুনে একটু ভয় পেলাম, স্যার আবার কি শর্ত দেবেন। মনে মনে সূর্যদেবের নাম নিতে লাগলাম। স্যার বললেন তুমি আসার সময় আমার জন্য রূপচাঁদা মাছের শুঁটকি নিয়ে আসবে। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি বললাম অবশ্যই স্যার আনবো, আপনি না বললেও আমি আনতাম। বিকেল বেলায় ঢাকার বাসে চেপে বসলাম। ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাত বারোটার দিকে পৌঁছলাম ঢাকা শহরে। সেখানে আমার অস্থায়ী ডেরা মাসির বাসায় অবস্থান নিলাম। সূর্যদেব দৃষ্টি মেলে তাকানোর আগেই সজল মামার ফোন। এই ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে নে। আমরা একটু পরেই বের হবো। গত রাতের যাত্রা পথের ক্লান্তি ঘিরে ধরেছে আমায়। এর পরেও নতুন গন্তব্যে যাবো এর নেশায় লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। দ্রম্নত প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে মামার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মামা চার চাকার বাহন নিয়ে উপস্থিত সঙ্গে মামার বন্ধুর দল। সূর্যদেবের আভা তখনো ছড়ায়নি। মিষ্টি এক সকালে আমরা এগিয়ে চলছি। মহাসড়কে দুরন্তগতিতে এগিয়ে চলছে আমাদের চার চাকার বাহন। সকালবেলা তাই রাস্তায় তেমন একটা যানজটের মুখোমুখি হতে হলো না আমাদের। এগিয়ে চলছি প্রায় দুই ঘণ্টা হয় সবাইকে নিদ্রা দেবী আবিষ্ট করেছে শুধু পাইলট মহোদয় ছাড়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপস্থিত হলাম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিলস্না পদুয়ার বাজার অবস্থিত নুরজাহান হোটেলে। গাড়ি থেকে নেমেই স্বল্প সময়ের মধ্যে পেট পূজা শেষ করে আমরা গাড়িতে চেপে বসলাম। আমরা এগিয়ে চলছি মহাসড়ক পেরিয়ে। দেখতে দেখতে আমরা সীতাকুন্ডে এসে পৌঁছলাম। দূর থেকে কানে ভেসে আসছিল সমুদ্র দেবের গর্জন। তখন বুঝলাম যে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। সীতাকুন্ড থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। ঘড়ির কাঁটাতে তখন ঠিক দুপুর একটা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লেগে গেছে আমাদের। বাঁশবাড়িয়া যাওয়ার পথটা অসাধারণ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যদেব খেলা করেন ওখানে। উপরে খোলা আকাশ পাশে খোলা জায়গা, একটু সামনে এগিয়ে গেলে বিশাল সমুদ্র। ঝাউ বাগানের সারি সারি ঝাউগাছ ও নতুন জেগে ওঠা বিশাল বালির মাঠ, সব মিলিয়ে এ এক অপূর্ব রূপ ধারণ করেছে। আজ আকাশের মন ভালো তাই মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আমরা এক পাশে জুতো রেখে দৌড় দিলাম সমুদ্রের দিকে। নিজেদের ভিজিয়ে নিলাম সমুদ্রের জলে। এই আনন্দ মনে হয় লিখে প্রকাশ করার মতো না। হাতের ডান দিক দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর দেখা পেলাম বাঁশের তৈরি ব্রিজের। মামা বলল এই নে তোর সমুদ্রের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথ। ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে একদম শেষপ্রান্তে পৌঁছলাম। একটু পর পর ঢেউ আছড়ে এসে আমার পায়ে পড়ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে সমুদ্রের বুকের ওপর আমি দাঁড়িয়ে আছি। দেখা হলো ওই এলাকার মুরুব্বি ফারুক মিয়ার সঙ্গে তিনি বললেন এ ব্রিজটা কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন, এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মালিকানায় নির্মিত যা একান্তই সন্দ্বীপবাসীদের চলাচলের জন্য। ব্রিজটা পস্নাস্টিকের, কারণ সমুদ্রের ওপর করা, আর লবণাক্ত পানি লোহা বা স্টিল তাড়াতাড়ি ক্ষয় করে ফেলে তাই পস্নাস্টিক দিয়ে তৈরি। আপনারা চাইলে স্পিড বোটে করে জনপ্রতি ৪০০ টাকা (আপডাউন) সন্দ্বীপ ঘুরে আসতে পারেন। ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। মামাকে বললাম কিন্তু কেউ আর সায় দিল না। কারণ সূর্যদেবে পাটে যাওয়ার সময়ও ঘনিয়ে আসছিল। পাশে দেখা পেলাম ম্যানগ্রোভ বনের মতো শ্বাসমূলের। আমরা পাশে ঝাউ বনে ঘুরতে গেলাম। কিছুটা পথ আবার কাদাময়। এর পরেও সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। দেখতে দেখতে সূর্যদেবের বিদায় নেয়ার পালা চলে এলো সঙ্গে আমাদেরও। তবে বলে রাখা ভালো বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অবস্থিত ব্রিজটি মজবুত খুঁটি ছাড়া নির্মিত, যার কারণে সাবধানতা বজায় করা উচিত। অহেতুক বড় দল নিয়ে ব্রিজে না ওঠাই ভালো। যেহেতু কোনো বেষ্টনী নেই সেহেতু জোয়ার-ভাটার সময় মেনে চলা উচিত।

কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে সীতাকুন্ডে অথবা চট্টগ্রামের অলঙ্কার থেকে সীতাকুন্ড যাওয়ার যে কোনো বাস বা টেম্পোতে করে বাঁশবাড়িয়া নামতে হবে। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। অলঙ্কার থেকে চট্টগ্রাম হাইওয়ে ধরে ২৩ কিলোমিটার যেতে হবে। এটা বাড়বকুন্ডের একটু আগে। বাঁশবাড়িয়া নামার পর সিএনজিতে করে আরও ২.৫ কিলোমিটার গেলে বেড়িবাঁধ পাওয়া যাবে। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা করে। চাইলে রিজার্ভও নেয়া যায়। ওখানেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<43297 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1