শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বে ড়া নো

বৈশাখী হাওয়ায় নিলুয়া

ছুটির দিন মানেই দূরে কোথাও চলে যাওয়া। ছুটির দিন মানেই নয়নাভিরাম প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন। ছুটির দিন মানেই আরও অনেক অনেক কিছুই। খবর ছিল মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার মধ্যবর্তী নিলুয়াবিলে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখির খেলা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে কিচিরমিচির...
নতুনধারা
  ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

ছুটির দিন মানেই মুক্ত বিহঙ্গে ঘুরে বেড়ানো। ছুটির দিন মানেই দূরে কোথাও চলে যাওয়া। ছুটির দিন মানেই নয়নাভিরাম প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন। ছুটির দিন মানেই আরও অনেক অনেক কিছুই। খবর ছিল মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার মধ্যবর্তী নিলুয়াবিলে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখির খেলা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে কিচিরমিচির। কিন্তু সময়ের অভাবে পাখি দেখতে যাওয়া হয়ে উঠছিল না। সুযোগ যখন এলো তখন শীত বিদায়। হোক শীত বিদায়-যাক ফেরে পাখি তার আপন ঠিকানায়, তাতে কী! ভ্রমণে আরও কিছুই তো দেখার ও জানার থাকে। তবে হিমেল হাওয়া তখনো পুরোপুরি বিদায় হয়নি। মানিকগঞ্জ শহরে থাকা বন্ধু কবিরকে পাখির খবর জানতে ফোন দিই। সেও খোঁজখবর নিয়ে গ্রিন সিগন্যাল দেয়। তার সাড়া পেয়েই মোটরবাইকে ছুটি নিলুয়া। সঙ্গে জসিম, হানিফসহ আরেকজন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে বাইক ছুটছে। এটি দেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। একটু বেখেয়াল হলেই পগারপার। যাওয়ার সময় তরা ব্রিজে খানিকটা বিরতি। ওপর থেকেই কালিগঙ্গা নদীর করুণ দশা দেখে বিচলিত হলাম। এক সময়কার প্রমত্তা কালিগঙ্গার বুকে চলে বালুর ট্রাক। টাকার নেশায় পরিবেশের গলাটিপে হত্যাকারী আমরা। আমাদের আবার না জানি হত্যা করে ধেয়ে আসা কোনো গাড়ি। আসলে ব্রিজের ওপরে দাঁড়ানোটাই ঠিক না। তাই আর দেরি না করে বাইক স্ট্যার্ট। মধ্যদুপুরে মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড পৌঁছি। আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা দোস্ত কবিরুল ইসলাম হৃদয় আমাদের নিয়ে প্রথমেই রেস্তোরাঁয় বসিয়ে দিল। পড়ালেখা আদি ঢাকায় করায়, তখন থেকেই হয়তো সেই বাতাস তার গায়ে লাগা। যা আজও তার মন-মানসিকতায় বয়ে যায়। খেয়ে-দেয়ে যাই এবার মহাসড়কের পাশে গড়া ফুটপাত টি স্টল, শহীদের তৈরি চায়ে চুমুক দিতে। এলাকাটার নাম বানিয়াজুড়ি। এই পথে নিজস্ব বাহনে গেলে, চা পানের জন্য ব্রেক না দিয়ে পারি না। মালাই মারা চা-চক্র শেষ। ছুটছি এবার মহাসড়ক ছেড়ে ডানে মোড় নিয়ে জাবড়া সাতবাড়িয়া হয়ে ঘিওর উপজেলার নিলুয়া। আহ্‌ বাইকে এই পথে ছুটে চলা মানে, জীবনের সাধ-আহ্লাদের পূর্ণতা। চলতে চলতে থামি গিয়ে দৌলতপুর উপজেলার শুরুতে। বাইক রেখে যাই বিলে। দেখি পাখির জলকেলি। খুব একটা নিরাশ হইনি। স্থানীয়রা জানালো, ভর শীতে নাকি পরিযায়ী দলের কারণে পানিই দেখা যেত না। হবে হয়তো। ঘণ্টাখানেক বিলে বসে থাকি। এই বসে থাকার মধ্যেও রয়েছে অন্যরকম সুখ। এরপর চলে যাই নীলুয়া বিলের আশপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে। ভাব জমাই গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে। হঠাৎ দেখি এক বিয়েবাড়ির টিনের ঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে, আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একদল নানান বয়সী শিশু। বুঝতে বাকি রইল না যে ওরা হয়তো বেশকিছু বাইক দেখে ভেবে নিয়েছে আমরাই বুঝি বরপক্ষের দল। শিশুদের সঙ্গে হালকা-পাতলা ভেংচি কেটে আবারও ছুটলাম। ঘুরতে ঘুরতে দৌলতপুরের অনেক গ্রাম ঘুরলাম। গ্রামগঞ্জ দেখার মধ্যেও আনন্দ আছে। জানার আছে দৈনন্দিন জীবনের হালচাল। যা থেকে মানুষ উপযুক্ত শিক্ষালাভ করতে পারে। ঘোরাঘুরির জন্য নির্দিষ্ট ছকবাঁধা কোনো জায়গা নেই। প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসুর জন্য প্রতিটা জায়গাই এক-একটি বিদ্যালয়। জানা, চেনা ও শেখার কোনো সীমান্ত নেই। বেলা প্রায় শেষের দিকে। পশ্চিমাকাশে লাল টকটকে সূর্যটা খানিকটা হেলে পড়েছে। তাই আর দেরি নয়। চাখতে হবে ঘিওরের সুস্বাদু মিষ্টি। মোটরবাইক ঘুরিয়ে ছুটলাম তেরশ্রী। স্থানীয় এক দোকানে ঢুকে মালাইচপ খেলুম ইচ্ছেমতো। বেশি খেলে যা হয়, স্বাদ আর থাকে না। এবার চললাম মানিকগঞ্জের মন্নু সিটি হয়ে বেওথা ব্রিজ। মন্নু সিটির পাশ ঘেঁষে যাওয়া ঝিটকা সড়কটা অন্যরকম সৌন্দর্যের। সড়কের দুপাশেই উঁচু উঁচু গাছ। একপাশের ডালপালা আরেকপাশের ডালপালার সঙ্গে এমনভাবে আলিঙ্গন করেছে, যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো জলছবি। যেতে যেতে বেওথা ব্রিজ। সূর্য সেদিনের মতো বিদায় নিয়ে লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। ভর সন্ধ্যা। ব্রিজের ওপর অনেক মানুষের সমাগম। বুঝতে বাকি রইল না, মানিকগঞ্জবাসীর জন্য জায়গাটা অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র।

কীভাবে যাবেন : মোটরবাইক ও সাইকেলিং রাইড অথবা প্রাইভেট কার। যাদের সেই সুযোগ নেই তাদের জন্য ঢাকার ফুলবাড়িয়া ও গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ/আরিচার বাসে চড়ে বানিয়াজুড়ি। সেখান থেকে অটো/সিএনজিতে ঘোরা যাবে। খরচপাতি : বাসযাত্রীদের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ টাকা হলেই হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46238 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1