শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টি-শার্টে তারুণ্য

টি-শার্টের জনপ্রিয়তা যেমন দিন দিন বাড়ছে, তেমনি রং ও নকশার ক্ষেত্রেও ঘটেছে পরিবর্তন। বিদেশি নকশার বদলে টি-শার্টে এখন রবীন্দ্রনাথ-নজরুল কিংবা জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন, দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তির ছবি, প্রকৃতি, স্বাধীনতাযুদ্ধ, বিজয় দিবস কিংবা একুশের নানা মোটিফ ও বর্ণমালা। গরমের দিনে আরামদায়ক এ পোশাকে হাওয়া-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও দারুণ। রং, বস্নক, বাটিক স্ক্রিনপ্রিন্টসহ প্রতিটি টি-শার্ট যেন একজন ডিজাইনারের কাছে রংতুলির ক্যানভাস। লিখেছেন সোরিয়া রওনক
নতুনধারা
  ০৫ মে ২০১৯, ০০:০০
ফরমাল টি-শার্টে সাধারণত কোনো বোতাম বা কলার থাকে না ছবি : ইন্টারনেট

টি-শার্টের ধরন

দেশে টি-শার্টে দুটি ধরন আছে। একটি হলো বিদেশ থেকে আমদানি, অন্যটি দেশে তৈরি। ফরমাল টি-শার্টে সাধারণত কোনো বোতাম বা কলার থাকে না। সাধারণত গোল ও ভি আকৃতির গলা হয়। হাতার লেন্থ ছোট-বড় হতে পারে। টি-শার্টে সুতি ও নিট ফেব্রিক্সের কাপড় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কটন, পলিস্টারসহ বিভিন্ন কাপড়ের টি-শার্টও পাওয়া যায়।

গরমেই চাহিদা বেশি

অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় গরমে টি-শার্টের চাহিদা থাকে বেশি। নকশার বৈচিত্র্য আর নিট কাপড়ের কোমলতা- এ দুইয়ে মিলে টি-শার্টের বাজার এখন তুঙ্গে। নিত্য উপহারের স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান জানালেন, 'অন্য সময় কালো রঙের টি-শার্টের চাহিদা থাকলেও গরমের এই সময়ে সাদা ও হালকা রঙের টি-শার্টের চাহিদা বেশি। এ জন্য গরমে পরার উপযোগী রং হিসেবে সবুজ, হালকা নীল, জলপাই, অ্যাশ, সাদা, হালকা হলুদ, হালকা ফিরোজা ইত্যাদি বেছে নেয়া হয়েছে।'

বাজারে একরঙা ও চেকের টি-শার্টও পাওয়া যাচ্ছে। একরঙা টি-শার্ট সাদা, কালো, লাল, নীল, সবুজ, আকাশি ইত্যাদি রঙের।

ডুয়েট ঐতিহ্যের স্বত্বাধিকারী অনুপ পাল বলেন, 'গরমে স্টেচিং নিট কাপড়ের টি-শার্টই ভালো। টি-শার্ট কিনে ধুয়ে পরলে বেশি আরাম পাওয়া যায়। শিশুদের জন্য কম ফেব্রিক দিয়ে ডিজাইন করা টি-শার্ট এ সময় বেশি উপযোগী।'

পিছিয়ে নেই মেয়েরাও, বিশেষ করে টিন মেয়েদের মধ্যে টি-শার্টের আগ্রহ বেশি। ফ্যাশন হাউস 'নোঙর'-এর স্বত্বাধিকারী নাজমুল আলম রানা বলেন, 'টিন এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরাই টি-শার্টের বেশির ভাগ ক্রেতা। মেয়েরা বেশি নকশার টি-শার্টই পছন্দ করে।'

ছেলেদের থেকে মেয়েদের টি-শার্টের প্যাটার্নে রয়েছে পার্থক্য। সাধারণত মেয়েদের টি-শার্টের বডি কাট কার্ভ হয়। ছেলেদের স্ট্রেইট। নকশার মাধ্যম হিসেবে বেশির ভাগই স্ক্রিনপ্রিন্ট।

বিপস্নব সাহা আরও বলেন, 'মেয়েদের টি-শার্ট সাধারণত একটু শর্ট ও কোমরের কাছে চাপা হয়। আবার কিছু টি-শার্ট আছে লেন্থ প্রায় হাঁটু পর্যন্ত। এ ধরনের টি-শার্ট স্স্নিমদের জন্যই বেশি মানানসই।' গ্যাবার্ডিন বা ডেনিম দিয়ে টি-শার্ট মানায় বেশি। তবে মেয়েরা লেগিংস, জেগিংস ও পালাজ্জো প্যান্ট দিয়েও টি-শার্ট পরছে।

নিত্য উপহার, পিজিয়ন, ডুয়েট ঐতিহ্য, দেশালসহ বেশকিছু ফ্যাশন হাউসে ছোটদের টি-শার্ট পাবেন।

দেশালের স্বত্বাধিকারী ইসরাত জাহান জানান, 'শিশুদের টি-শার্ট নানা ছড়া, প্রকৃতির নানা বিষয় নিয়ে ডিজাইন করেছি। হালকা রং ও আরামদায়ক নিট ফেব্রিক্স ব্যবহার করেছি।'

সবার কাছে সমান কদর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ইব্রাহীম সুজন বললেন, 'টি-শার্ট পরতে যেমন আরাম, তেমনি স্বাচ্ছন্দ্যে পরে অনায়াসে ক্লাসে কিংবা বাইরে যাওয়া যায়। টি-শার্ট পরার জন্য ফ্যাশনের কোনো ব্যাকরণও মানতে হয় না। কারণ যে কোনো ধরনের প্যান্ট ও জুতার সঙ্গেই মানিয়ে যায়। ইস্ত্রি করার ঝামেলা নেই।'

টি-শার্টের জনপ্রিয়তা নিয়ে রঙের ডিজাইনার বিপস্নব সাহা বলেন, 'শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ছেলেদের কাছে টি-শার্ট দারুণ জনপ্রিয়। আরামের পাশাপাশি সাশ্রয়ী দামের জন্যই টি-শার্ট ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত।' পিজিয়ন ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার সুমন সরকার বলেন, 'টি-শার্ট সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। তাই একাধিক টি-শার্ট ব্যবহারেরও সুযোগ থাকে। একটি জিন্স প্যান্টের সঙ্গে একাধিক রঙের টি-শার্ট পরা যায়। তাই তরুণ ক্রেতাদের এই পোশাকের প্রতি আগ্রহ বেশি।'

প্রিয় ব্যক্তিত্বের ছবি, বিখ্যাত উক্তি, লোগো, রিকশা পেইন্টিং, প্রকৃতির ছবিসংবলিত টি-শার্টের এখন বেশ চল। বিভিন্ন শপিং মল ঘুরে দেখা গেল, গোল গলা টি-শার্টের পাশাপাশি ভি গলা টি-শার্ট বেশি চলছে। কোনো কোনো টি-শার্টে নানা রকম পকেট, বিভিন্ন দেশের পতাকা, ভালোবাসার বিভিন্ন চিহ্ন, ফুল ও পাখি। নিউ মার্কেটের প্রিয়া ফ্যাশন হাউসের বিক্রেতা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা এবার গতানুগতিক ধারার বাইরে চায়না কাটের বেশকিছু টি-শার্ট করেছি, যার পেছনের দিকে লেন্থ বেশি। হাতায় ও কলারে ভিন্ন কাপড় ব্যবহার করেছি।'

টি-শার্টের সঙ্গে কী পরবেন

ক্যাজুয়াল লুকে টি-শার্টের সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট বেশ মানায়। হালকা বা সাদা রঙের টি-শার্ট পরলে নীল বা ছাই রঙের জিন্স, গ্যাবার্ডিন বা সুতি প্যান্টও পরা যায়। জুতার পাশাপাশি স্যান্ডেলও পরতে পারেন। আজকাল ক্যাজুয়াল পোশাকেও অনেকে টি-শার্ট পরেন। তবে ফরমাল প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট ভালো লাগবে না। একই রঙের টি-শার্ট ও প্যান্ট পরলেও ভালো দেখাবে না। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কন্ট্রাস্ট বা দুটি ভিন্ন হলেই ভালো লাগবে। যেমন টি-শার্ট লাল হলে প্যান্ট কালো ভালো মানাবে। লা-রিভের প্রধান ডিজাইনার আফরিন জাহান বলেন, 'টিন ছেলেরা টি-শার্টের সঙ্গে পাতলা ডেনিম বা কালার টুইস্ট জিন্স এবং মেয়েদের স্টেচিং জিন্স প্যান্টের সঙ্গে ম্যাচিং টি-শার্ট গরমের আরামদায়ক পোশাক হবে।'

কোথায় পাবেন ও দামদর

বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, নিউ মার্কেট, ফরচুন শপিং মল, কর্ণফুলী মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, ইস্টার্ন পস্নাজা, যমুনা ফিউচার পার্কসহ নিউ এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন দোকানে টি-শার্ট পাবেন। তবে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে বিশেষ ডিজাইন, লোগো ও বাটিক প্রিন্টের টি-শার্টের রয়েছে বিশাল সংগ্রহ।

টি-শার্টের দাম নির্ভর করবে এর রং, ফেব্রিক্স ও ডিজাইনের ওপর। ছেলে ও মেয়েদের টি-শার্টের কাট ও নকশায় পার্থক্য থাকলেও দাম প্রায় একই রকম। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউস নিত্য উপহার, মেঘ, পৌষ, যোগী, নোঙর, সমীকরণ, বালুচর, ইজি, দেশাল, সুই-সুতা, কারখানাসহ বিভিন্ন ফ্যাশন টি-শার্ট পাবেন। এসব টি-শার্ট কেনা যাবে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। বাচ্চাদের টি-শার্টের দাম পড়বে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউস লা-রিভ, ক্যাটস আই, মেনজক্লাব, পস্নাস পয়েন্ট, ওয়েস্টিন, টেক্সমার্ট, জেন্টাল পার্ক, ইস্টওয়ে, ইনফিনিটিসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে টি-শার্টগুলো কেনা যাবে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।

একটু কম দামে কিনতে চাইলে যেতে পারেন নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা কলেজের সামনে, নিউ মার্কেট এলাকায়, বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনে, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান মোড়ে, ফার্মগেট, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী অনেক দোকানে। সেখানে নানা রং ও নকশার টি-শার্ট পাবেন ১২০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<47938 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1