বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরবাড়ির বনেদি সাজ

রঙ বেরঙ ডেস্ক
  ০৫ মে ২০১৯, ০০:০০

শাড়ি পরার আছে নানা স্টাইল। কিন্তু আমরা কি জানি নিজেদের শাড়িতে যে সাজিয়ে নিচ্ছি সেই সৌন্দর্যের শুরু হয়েছিল কখন-কোথায়? নারীরা আধুনিক শাড়ি পরার চলন, ঢং শিখেছেন মূলত ঠাকুরবাড়ির কল্যাণে। সামনে কুচি, পেছনে আঁচল দিয়ে শাড়ি পরার কৌশল তারাই শুরু করেন।

ঠাকুরবাড়ির সাজসজ্জা নিয়ে এবং ফ্যাশনে-প্রয়োজনে তারাই যে প্রথম বস্নাউজ পরার রীতি চালু করেন, তা নিয়ে কথা বলেন ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার। লিপি বলেন, চিত্রা দেবের লেখা ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল বইটি থেকে জানা যায়, বাঙালি মেয়েদের সাজপোশাক নিয়ে সে যুগে তেমন ভাবনা-চিন্তা ছিল না কারও। মেয়েরা তেমন একটা ঘরের বাইরে বের হতেন না। বাড়িতে শুধু একটা শাড়ি জড়িয়ে রাখতেন গায়ে। শীতকালে তার ওপরে জড়িয়ে নিতেন চাদর। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় ছেলে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী ছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী। কর্মসূত্রে সত্যেন্দ্রনাথ থাকতেন মুম্বাইয়ে (তখনকার বোম্বাই)। জ্ঞানদানন্দিনী সেখানে যাওয়ার আগে এক চিঠিতে সত্যেন্দ্রনাথ তাকে রুচিশীল পোশাক পরে আসার কথা জানান। সেই সময় জ্ঞানদানন্দিনী ফরাসি এক দোকান থেকে বানিয়ে নেন ওরিয়েন্টাল ড্রেস। ফ্যাশনেবল এই পোশাক পরে অস্বস্তি অনুভব করছিলেন তিনি। তখন থেকেই বাঙালি মেয়েদের সাজপোশাক নিয়ে ভাবতে শুরু করেন জ্ঞানদানন্দিনী। মুম্বাই থেকেই জ্ঞানদানন্দিনী শিখে এসেছিলেন আধুনিক কায়দায় শাড়ি পরার ঢং। কুচি দিয়ে শাড়ি পরার এই কায়দাটি ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যেই গ্রহণ করেন। পরে শাড়ি পরার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনো জ্ঞানদানন্দিনীর বাঁ দিকে আঁচল রাখার ঢং বদলায়নি এতটুকুও।

সামনে আঁচল-কুচি দিয়ে যেভাবেই শাড়ি পরি না কেন, বস্নাউজে একটু বৈচিত্র্য আনতে পারলে পরিপূর্ণ হবে সাজ। থাকতে পারে ঘটি হাতা। ইচ্ছা করলে বস্নাউজগুলো একটু লম্বা হাত দিয়ে বানিয়ে তাতে লেইসের ব্যবহারে আসবে রাবীন্দ্রিক ঢং।

গহনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রাধান্য ছিল সোনার পেটানো গহনার। গলায় কয়েক লহরের চেইন, সীতাহার, চোকার এবং কানে ঝুমকার চেয়ে বেশি চোখে পড়ত কানজুড়ে থাকা দুল বা লম্বাটে নকশার কোনো দুল। সোনা ছাড়া গহনার নকশায় মুক্তোর ব্যবহারও দেখা গেছে। হাতভর্তি কয়েক গাছি সোনার চুড়ি, সেই সঙ্গে গোলাপবালাও। বাহুতে বাজুবন্ধের ব্যবহারও ছিল লক্ষণীয়। সে সময়ে অনেক বেশি গহনার ব্যবহার দেখা যেত চুলের সাজে। বেণি করে সেই বেণি পেঁচিয়ে খোঁপায় বেঁধে ছোট ছোট সোনালি কাঁটায় খোঁপা সাজানো যেতে পারে। সেই সময়ে টিকলির পাশাপাশি দুই পাশে গোল এক ধরনের গহনা লাগানো হতো। সেগুলোও ব্যবহার করা সম্ভব। চিত্রা দেবের ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল বইটিতে পাই- সোনালি ফিতে লাগিয়ে খোঁপায় সোনার কাঁটা ও চিরুনি, কপালে ও গালে চন্দনের পত্রলেখা। লাল টুকটুকে বেনারসির সঙ্গে টিকলি, দুল, নথ, বাজুবন্ধ, শাঁখা, চুড়ি, বালা, আলতা পরা পায়ে রুনুঝুনু মল, হাতে লাল লক্ষ্ণীকাঠের চুড়ি।

২৫ বৈশাখ রবীগুরুর পায়ে তাই শ্রদ্ধাঞ্জলি। যার মেধায় ও মননে ছিল চির আধুনিকতা। তাই সে সময়ের ফ্যাশন আবহ এখনকার সময়ে তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করে চলেছে অবিরাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<47939 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1