বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বষার্য় ভালো থাক

অন্দরের নন্দন

এখন ভরা বষার্ মৌসুম। সারাদিন ঝমঝম ঝরঝর বৃষ্টি। বৃষ্টি বিলাসীরা ভুনা খিচুড়ি আর ভাজা ইলিশে মগ্ন থাকলেও সময় থাকতে একটু নজর দিন অন্দরে। ভেজা আবহাওয়ায় আপনার সাধের আসবাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না তো? স্যঁাতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে কাঠের আসবাবে ‘ছাতা’ মানে ছত্রাক গজাতে পারে। আর ভেজা আবহাওয়ার কারণে কাঠ নষ্টও হতে পারে। বষার্ মৌসুমে আসবাবপত্র পরিষ্কার করার কাযর্কর কিছু উপায় নিয়ে লিখেছেন মালিহা তাবাসসুম
নতুনধারা
  ০৫ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

দরজা ও জানালা থেকে কাঠের আসবাব দূরে সরিয়ে রাখুন। যেন বৃষ্টির পানি না লাগে। জানালা থেকে আসা বৃষ্টির ঝাপটা বা দেয়াল চুঁইয়ে পড়া পানি থেকে আসবাবপত্র সামলে রাখার চেষ্টা করুন। প্রতি এক বা দু’বছরে অন্তত একবার কাঠের আসবাব বানির্শ করা উচিত। এতে কাঠের গতর্গুলো আটকে যাবে এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে। বষার্য় কাঠ ফুলে যাওয়ার সমস্যা দূর করতেও বানির্শ বেশ কাযর্কর। এ ছাড়া কাঠের জন্য বিশেষ ধরনের লিকার স্প্রে পাওয়া যায়। চটজলদি সমাধানের জন্য এ ধরনের স্প্রেও বেশ উপযোগী।

আসবাবের নিচে বা পায়ার নিচে আলাদা স্টিল অথবা প্লাস্টিকের বাড়তি অংশ লাগিয়ে নিন। এতে মেঝের পানি বা আদ্রর্তা আসবাবে লাগবে না। ফলে সহজে নষ্ট হবে না। এ ছাড়া কাঠের আবাসাবপত্র ভালো রাখতে ঘর পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্, এতে আদ্রর্তার মাত্রা ঠিক থাকবে। কারণ বাতাস ও মেঝের আদ্রর্তা আসবাবপত্র নষ্ট করে ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এয়ার কন্ডিশনার বেশ উপযোগী। কারণ এসি ঘরের আদ্রর্তা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

আসবাবপত্রের ওপর জমে থাকা ধুলো বা ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কখনো ভেজা কাপড় ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং শুকনা নরম কাপড় দিয়ে কাঠের ওপরের ময়লা ঝেড়ে মুছে ফেলুন। কারণ ধুলো আদ্রর্তা শুষে নিয়ে আসবারের ওপর আটকে যেতে পারে। ফল হতে পারে হিতে বিপরীত। কাঠের জিনিস বষার্য় কিছুটা ফুলে ওঠে। অনেক সময় দরজা, ড্রয়ার বা আলমারি আটকে যায়। এমন সমস্যা এড়াতে অনেকে তেল বা মোম লাগিয়ে থাকেন। তবে এগুলো কাঠের উল্টা ক্ষতি করে। এ ক্ষেত্রে বাজারে কিছু স্প্রে ওয়্যাক্স পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ন্যাপথলিন আদ্রর্তা শুষে নিতে এবং পোকামাকড় দূরে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে কাপড়ের ভঁাজে কপূর্র রাখার প্রচলন রয়েছে। এতে ওয়্যারড্রপ এবং কাপড় দুটোরই স্যঁতসেঁতেভাব দূর হয়।

আরেকটা ব্যাপার সব সময় খেয়াল রাখবেনÑ বৃষ্টির পানি যেন কখনো আসবাবের ওপর জমে না থাকে। বৃষ্টির পানি পড়ে জমে থাকার আগেই পানি মুছে ফেলুন। বেশি সময় আসবাবের ওপরে পানি জমে থাকলে দাগ পড়ে যেতে পারে।

জেনে নিন ছোট ছোট কিছু কাযর্কর টিপসÑ

বৃষ্টিতে পানি না জমলেও নিয়মিত আসবাব মোছা উচিত। মোছার জন্য শুকনো ও নরম কাপড় ব্যবহার করুন।

* আসবাব কখনো ভেজা কাপড় দিয়ে মুছবেন না। তাহলে দাগ হয়ে যাবে।

* বষার্য় আসবাব ভেজা ও স্যঁাতসেঁতে জায়গায় রাখা উচিত নয়। এতে কাঠ নষ্ট হয়ে যায়। এমন কি লোহার আসবাবেও মরিচা পড়ে যেতে পারে।

* যে কোনো আসবাবই সব সময় পানি থেকে দূরে রাখুন। এমনকি হাতে পানি লেগে থাকা অবস্থায় কোনো আসবাব হাত দিয়ে ধরা উচিত না।

* মেলামাইন লেমিনেটিং বোডের্ পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলতে হবে।

* মেলামাইন লেমিনেটিং বোডর্ ফিনাইল অথবা গøাস ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কার করলে বেশিদিন চকচকে থাকে।

* আসবাব ভালো রাখার জন্য বছরে দুবার পালিশ করানো উচিত। এ ক্ষেত্রে বষার্র চেয়ে শীতের সময় পালিশ করলে বেশি ভালো। এতে আসবাবের চকচকে ভাব বজায় থাকে। বষার্য় আসবাব পালিশ করলে শুকাতে বেশি সময় লেগে যায়। তাই বষার্র সময় আসবাব পালিশ না করাই ভালো।

ষ বষার্ ঋতুতে কাঠের আসবাবে পোকামাকড়ের উপদ্রব বেশি দেখা যায়। পোকামাকড় প্রতিরোধ করতে কীটনাশক ব্যবহার করুন। সে ক্ষেত্রে ন্যাপথলিন, মোম, স্পিরিট ও নিম তেলের স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ষ আসবাব পানিতে ভিজে গেলে তা শুকাতে কখনো কড়া রোদে আসবাব দেবেন না। এতে রং হালকা হয়ে যায়, ফাটলও ধরে যাবে।

ষ ঘরের মধ্যে যেখানে পযার্প্ত আলো-বাতাস আসতে পারে সেখানে আসবাব রাখুন।

ষ এমন স্থানে আসবাব রাখবেন না, যেন বৃষ্টির পানি ছিটকে আসবাবে পড়ে।

ষ ঘরের মধ্যে এমন স্থানে আসবাব রাখবেন না যে সরাসরি সূযের্র আলো এসে পড়ে। সূযের্র আলোর তাপে আসবাব ফেটে বা অন্য কোনো ক্ষতি হতে পারে।

ষ যদি সম্ভব হয় তবে বষার্ ঋতু শেষ হওয়ার পরে আসবাব পালিশ করিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখুন।

ষ বেশি তাপ ও আদ্রর্তা থেকে আসবাব দূরে রাখুন।

শুধু কাঠের আসবাব নয়, বষার্র স্যঁাতসেঁতে আবহাওয়ায় ক্ষতি হতে পারে আপনার অন্যান্য আসবাবও। চলুন জেনে নিই সে ক্ষেত্রে কী করবেন?

স্টিলের আসবাবের যতœ : স্টিল অথবা অন্যান্য মেটালের আসবাবগুলোকে বষার্র সময় সপ্তাহে অন্তত দুবার শতভাগ কটন কাপড়ে মুছে দিন। খেয়াল রাখুন, মেটাল ফানির্চারে ওপরের চকচকে রঙের আবরণে গ্যালভানাইজিং নষ্ট হয় কিনা, কোথাও স্ক্র্যাচ পড়লে দ্রæত ব্যবস্থা নিন। না হলে বাতাসের আদ্রর্তায় তা অসম্ভব দ্রæত ছড়িয়ে ফানির্চার নষ্ট করে দেবে।

হাতের নরম ছেঁায়ায় অন্যান্য যতœ : বছরের অন্যান্য সময়ের মতোই দু-একবারের বেশি বাড়িয়ে নেড়েচেড়ে দিন দেয়ালের ফটো ফ্রেম, পেইন্টিং আর ঝোলানো জিনিসগুলো নরম পরশ বুলিয়ে দিন আলগা ধুলো পরিষ্কারের খাতিরে। বাইরে থেকে ভিজে আসা কাপড়চোপড় পরে পুরো ঘর না ঘুরে শুকনো কাপড় পরে তাড়াতাড়ি ভেজা কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা করুন।

সামান্য ভেজা কাপড় আলমারিতে ওয়্যারড্রবে রাখবেন না। এতে সব কাপড়ে স্যঁাতসেঁতে গন্ধ হয়ে যাবে।

বষার্য় ১৫ দিন অন্তর অন্তর আলমারির কাপড় বের করে সামান্য রোদ-বাতাসের পর আবার তুলে রাখুন, এতে আলমারি পরিষ্কারের সঙ্গে কাপড়ের টেম্পারটা ভালো থাকবে।

ঘরের রঙের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো কামরায় বাইরের আলো-বাতাস না গেলে বৃষ্টির দিনগুলোতে সে ঘর ভেজা ভেজা লাগতে পারে। পযার্প্ত সময় লাইট জ্বালিয়ে দরজা-জানালা খোলা রেখে ফ্যানের বাতাসে ঘর শুকনো রাখুন। এতে স্যঁাতসেঁতে গন্ধ থেকে মুক্তির পাশাপাশি দেয়াল বা সিলিংয়ের রং নষ্ট হবে না। উজ্জ্বলতাও থাকবে ঠিকঠাক।

বষার্য় প্রকৃতিসহ সব কিছুতেই এক প্রকারের শ্যাওলার লেয়ারের রং এনে দেয়। তাই প্রতিটি শোপিসে হালকা ঝাড়-ফুঁতে সেভাব কাটিয়ে আপন মহিমায় চমক দেবে। এককথায় এই বষার্র পানি ও আদ্রর্ বাতাসকে মানিয়ে চললে টোটাল ঘর দেবে আপনাকে বাইরে ঋতুরানী বষার্র বৃষ্টির টাপুরটুপুর শব্দ আর ভেতরে শুষ্ক ফুরফুরে অনুভ‚তি, যা আপনাকে বৃষ্টির পানি ছুঁতে উৎসাহ জোগাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<6482 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1