মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুস্থ চুলের রূপ-কথা

প্রসাধন নির্বাচনে প্রকৃতির যত কাছে থাকা যায়, তত ভালো। প্রাকৃতিক উপাদানের প্রসাধন অনেক বেশি নিরাপদ। এ কারণে আগে মানুষের অ্যালার্জি কম হতো। অ্যালার্জি মূলত সিনথেটিক যুগের সমস্যা। চুলের পরিচ্ছন্নতা কিংবা রক্ষার দায়িত্ব নিজের। কাজেই চুল সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, আকর্ষণীয় করে তোলার চাবিকাঠিও যে যার নিজের হাতে।
রঙ বেরঙ ডেস্ক
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রোজকার ব্যস্ততায় নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নেয়ার সুযোগ হয়তো নেই। হালের মেট্রোলাইফে প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্যই সময় নির্ধারিত। তবু তাড়াহুড়ার মধ্যে নিজের জন্য একটু ভাবুন। দিন শেষে আপনার সব সাফল্য কিন্তু এই 'আপনার' জন্যই। চুল ও ত্বকের সুস্থতাও আপনার সুস্থতারই অংশ। নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় কিছু ভুল অভ্যাস হরহামেশাই চুলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চুল ধোয়া-শুকানো-আঁচড়ানো সব মিলিয়ে ভুল হওয়ার জায়গা অনেক। তবে একটু খেয়াল করলে এগুলো সংশোধন করে নেয়া যায় অনায়াসেই।

তবে চুলে দেখভাল আর যত্ন নেয়া মানেই কিন্তু দামি শ্যাম্পু আর তেল ব্যবহার করা নয়। সুস্থ চুলের জন্য দরকার সুশৃঙ্খল ডায়েট, চুলে ধরন বুঝে প্রসাধনীর ব্যবহার এবং নিয়মিত পরিচর্যা। চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান হলো একটি সুপরিকল্পিত ব্যালেন্স ডায়েট। যেখানে থাকবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন (বিশেষ করে ভিটামিন-ই) এবং মিনারেল। চুল পড়া হ্রাস, চুলের গ্রোথ এবং উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য কিছু খাবার আছে যার নিয়মিত গ্রহণে চুল থাকে সুস্থ। এসব খাদ্যগুলো হলো- সবুজ শাক-সবজি, ডিম, বাদাম, মাছ ইত্যাদি। ব্যালেন্স ডায়েটের পর চুলের দরকার নিয়মিত পরিচর্যা। নিয়মিত পরিচর্যা বলতে আবার প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা বা তেল দেয়াকে বোঝায় না। চুলের ধরন বুঝে প্রসাধনী নির্বাচন করে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন তা ভালোভাবে প্রয়োগ করলেই তা সুস্থ চুলের জন্য যথেষ্ট। তবে প্রতিদিন শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধোয়া সম্ভব না হলেও, আমরা প্রতিদিন মুখ-হাত-পা যেভাবে পরিষ্কার করি, সেভাবে চুলও পরিষ্কার করা উচিত। সুস্থ চুলের জন্য পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, চুলের ওপর কম চাপ দেয়া। অর্থাৎ বেস্না ডাইং, আয়রনিং, হেয়ার স্প্রে, হেয়ার হাইলাইট থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা। আর যদি অগত্যা দূরে থাকা না-ই যায়, তাহলে উন্নতমানের প্রসাধনী ব্যবহার করা এবং যত দ্রম্নত সম্ভব তা চুলকে আবার স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনা। চুলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য এই তিনটি কাজ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চুলকে শুধু সৌন্দর্যে একটি অংশ না ভেবে, সুস্থ দেহের একটি অংশ ভাবলে তা বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বাড়াবে মানসিক প্রশান্তিও।

ধরন বুঝে চুলের যত্ন

শুষ্ক বা তৈলাক্ত চুল: ত্বকের মতো, বংশগতির প্রভাবে চুল অনেক সময় শুষ্ক বা তৈলাক্ত হয়। পরিবেশগত কারণ এ জন্য অনেকটা দায়ী। অতিরিক্ত সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহারেও চুল অনেক সময় রুক্ষ করে দিতে পারে। আবার উল্টোটাও সত্যি। অনেকে একদম সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করেন না। কিন্তু জবজবে করে তেল মাখেন। এতে চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়। চুলে বেশি তেল দিলে বিশেষ ক্ষতি হতে পারে, খুশকি বেশি হতে পারে, ময়লা জমতে পারে। প্রবাদ আছে, তেলা মাথায় তেল দেয়া উচিত নয়। এটি বাস্তব সত্য। চুলের পুষ্টি আসে মূলত শরীরের ভিতর থেকে। তবে যাদের মাথা বা চুল শুষ্ক কিংবা রুক্ষ, তারা তেল দিতে পারবেন। তেল গোসলের আগের চেয়ে গোসলের পরে দেয়া ভালো। গন্ধহীন বিশুদ্ধ নারিকেল তেল মাখা ভালো। গন্ধযুক্ত নারিকেল তেল ব্যবহারে অনেক সময় অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। মাথায় কখনো ভিজে চপচপে করে তেল মাখা উচিত নয়। নিয়ম হলো, চুল সামান্য ভেজা থাকাবস্থায় অল্প নারিকেল তেল দিয়ে মাথার ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করা। এতে মাথায় ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। কখনো জোরে জোরে মাথার ত্বক বা চুলের গোড়ায় তেল ঘষা উচিত নয়। বেশি জোরে ঘষলে চুল বেশি উঠতে পারে। গোড়ায় যাতে আঘাত না লাগে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তাই। শ্যাম্পু দেয়ার পর বেশি টানাহেঁচড়া করলে চুল আলগা হয়ে যায়। ব্রাশ বা চিরুনি দিয়ে জোরে আঁচড়ালেও সমস্যা হতে পারে।

চুল ধোয়ার নিয়মকানুন

শ্যাম্পু করার আগে ভালোভাবে চুল ভিজিয়ে নিন। তাড়াহুড়া করে সম্পূর্ণ চুলে একবারে শ্যাম্পু লাগানো উচিত নয়। কয়েকটি ভাগে ধীরে ধীরে শ্যাম্পু লাগাতে হবে। শ্যাম্পু করার সময় এলোমেলোভাবে হাত চালিয়ে চুলে জট লাগানো যাবে না; বরং চুলের দৈর্ঘ্য বরাবর শ্যাম্পু করতে হবে। শ্যাম্পুর আগে তেল ম্যাসাজ করা প্রয়োজন। তেল ম্যাসাজ করার অন্তত আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন, চাইলে আগের রাতে তেল ম্যাসাজ করে রাখতে পারেন। যাদের চুল খুবই রুক্ষ প্রকৃতির, তারা শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। তবে মাথার ত্বকে কন্ডিশনার লাগানো যাবে না।

চুল শুকাতে তাড়াহুড়া নয়

চুল শুকাতে তাড়াহুড়া করবেন না। গোসল সেরে এসে কিছুক্ষণ ফ্যানের নিচে বসুন। টেবিল ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যানের হাওয়াও কাজে লাগাতে পারেন। তোয়ালে ব্যবহার করুন আলতোভাবে। চুল বা মাথার ত্বক মোছার কাজটিও করুন হালকাভাবে। তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে দিন। হেয়ার ড্রায়ার পারতপক্ষে ব্যবহার না করাই ভালো। তবু খুব প্রয়োজন হলে ড্রায়ারের ঠান্ডা হাওয়ায় চুল শুকিয়ে নিতে পারেন। সকালে অফিসে যাওয়ার তাড়া থাকলে একটু আগেই গোসল সেরে নিন, নইলে ভেজা চুল নিয়ে বিপত্তি বাধবে।

চুল আঁচড়াতে

সারা দিনে এক থেকে দুবারের বেশি চুল আঁচড়ানোর প্রয়োজন নেই। খুব বেশি চুল আঁচড়ালে বেশি চুল পড়ার আশঙ্কা থাকে। প্রয়োজনবোধে চুলে আঙুল চালিয়ে চুল ঠিক করে নিতে পারেন। ভেজা চুল আঁচড়ানো উচিত নয়। কখনো যদি ভেজা চুল আঁচড়াতেই হয়, তাহলে মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। আর চুল অতিরিক্ত অগোছালো প্রকৃতির হলে 'সিরাম' ব্যবহার করতে পারেন; তাহলে চুলের অগোছালো ভাবটা কমবে, বারবার চিরুনি ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।

মূলত, প্রসাধন নির্বাচনে প্রকৃতির যত কাছে থাকা যায়, তত ভালো। প্রাকৃতিক উপাদানের প্রসাধন অনেক বেশি নিরাপদ। এ কারণে আগে মানুষের অ্যালার্জি কম হতো। অ্যালার্জি মূলত সিনথেটিক যুগের সমস্যা। চুল যাতে রুক্ষ বা লালচে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রোদ এড়িয়ে চলা ভালো। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত ক্লোরিনমিশ্রিত পানিতে গোসল ঠিক নয়। চুলের পরিচ্ছন্নতা কিংবা রক্ষার দায়িত্ব নিজের। কাজেই চুল সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, আকর্ষণীয় করে তোলার চাবিকাঠিও যে যার নিজের হাতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<68769 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1