মন্দিরে মন্দিরে বাজছে ডাক-ঢোল। ধূপ-ধুনো আর নাচে-গানে চলছে দেবীর বন্দনা। মহালয়া থেকে বিসর্জন, প্রতিটি মুহূর্ত রঙিন করে রাখতে সপ্তাহজুড়েই চলছে নানা আয়োজন। সাজ-পোশাকে ভিন্ন ট্রেন্ড এলেও সেই আদি বনেদি লুকটা ধরে রাখার চেষ্টা থাকে সবার। বিশেষ করে গহনার ক্ষেত্রে। গহনার বৈচিত্র্য আপনার পুরো সাজটাকেই দিতে পারে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সঙ্গে নানা অনুষঙ্গ মিলিয়ে নিলেই আপনি এক্কেবারে তৈরি পুজোর বাকি দিন কটিতে।
পুজোর গহনায় প্রতিবার দেখা যায় বিভিন্ন মোটিফে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে লোটাস, পুরনো মুদ্রার আদলে তৈরি পেনডেন্ট, দুর্গার মুখের আদল, বিডেড কয়েন ও নিত্য-নতুন ট্রাইবু্যনাল মোটিফ। সঙ্গে এ বছরও পুজোয় ক্রেজ রয়েছে সবুজ, নীল, লাল, গোলাপি রঙের মিলমিশে আফগান জুয়েলারি। নেকপিস ও দুলের পাশাপাশি স্টেটমেন্ট নাকছাবিও পেয়ে যাবেন আফগানি ধাঁচে। গত দু'তিন বছর ধরেই নাকছাবিতে মজেছে আঠেরো থেকে আশি। পিওর সিলভার, সোনার জল করা, কস্টিউম, অক্সিডাইজড মেটালের ছোট-বড় নানা মাপের ও নকশার নোজপিনে ছেয়ে গেছে সাইট। পেয়ে যাবেন ওয়্যার ও ক্লিপ অন দুই ধরনেই। ইয়াং জেনারেশনের কাছে বিড?স ও চেন টাসলের কম্বিনেশন করা, স্টেটমেন্ট নেকপিস পপুলার হয়েছে, একইভাবে কদর বেড়েছে থ্রেড টাস?ল ও পমপমের কম্বিনেশন করা নেকপিস ও দুলের। মেটালের থ্রি টায়ার্ড নেকলেস, বিডসের মাল্টিলেয়ার্ড নেকলেস, আফ্রিকান গহনার আদলে তৈরি রংবেরঙের খুদে বিডসের চওড়া চোকার, নেকপিস ও দুলও এবার ট্রেন্ডিং। মিরর ও থ্রেডের কারুকাজ করা ঝুমকো, কানপাশা, পেনডেন্ট, এমনকি ব্যাঙ্গেলও চোখে পড়ার মতো। পেতলের তৈরি জ্যামিতিক ও অ্যাবস্ট্রাক্ট শেপের ইয়াররিং পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। একইরকম ডিজাইন দেখা যাচ্ছে তামাতেও। মিউটেড ম্যাট গোল্ড ও মিউটেড সিলভার- এই দুই রঙের ধাতুর ব্যবহারে তৈরি জুয়েলারি পেয়ে যাবেন খাঁটি রুপো ও মেটাল দুই ধরনেই। পুজোর কদিন জমকালো সাজের সঙ্গে মানানসই কস্টিউম জুয়েলারির যাবতীয় পেয়ে যাবেন অনলাইনে। কুন্দন, পোলকি, এনামেল পেন্টেড জুয়েলারি এ বছর ট্রেন্ডে রয়েছে। মাংটিকা, কানবালা, ঝুমকো, বালা, আংটি, নেকপিসের পাশাপাশি ক্লিপ অন ও পিয়ার্সড নাকের জন্য পেয়ে যাবেন হরেক নকশার কস্টিউম, নাকছাবি ও নথ।
ঘুঙুর বিডসের ক্রেজও রয়েছে। নানা ধরনের টাসলের সঙ্গে ছোট-বড় ঘুঙুর দিয়ে তৈরি নেকপিস চোকার বা কানের দুলে রয়েছে নতুনত্ব। কিছু কিছু জায়গায় পায়ের ঘুঙুরের মতোই দেখতে গলার চোকারেরও দেখা মিলবে। ঝুমকো আর ত্রিশূলের একটা কম্বিনেশন এবার খুব চলবে। ত্রিশূল ডিজাইন প্রথমে রুপোতে পপুলার হয়েছিল, এখন সিলভার অক্সিডাইজে, ম্যাট গোল্ডেনেও তৈরি হচ্ছে ত্রিশূল টপ, লকেট। ত্রিশূল ডিজাইন চোখে পড়ার মতো। টেক্সটাইলের গহনা এ বছর সর্বত্র পাওয়া যাবে। গত বছর একটু কম ছিল, এ বছর রাস্তার ছোট-বড় দোকানেও পাবেন টেক্সটাইলের বিভিন্ন ধরনের কালারফুল লম্বা হার, বালা, দুল। পমপম দুল বা হার গত বছরও ছিল, এ বছরও আরও বেশি করে দেখা মিলবে।
এ তো গেল গহনা। এবার সাজে পোশাকের অনুষঙ্গ মিলিয়ে নিলে আপনি প্রস্তুত দশমীর দিনটি পর্যন্ত স্নিগ্ধতা ছড়াতে। প্রথমে আসা যাক বেজ মেকআপের ক্ষেত্রে। বেজ মেকআপই আসলে মেকআপের ভিত্তি। বেজ মেকআপের জন্য পুজোর সারা দিনের সাজে অবশ্যই আপনার স্কিন অনুযায়ী ম্যাচ করে বা এক-দুই শেড উজ্জ্বল মেকআপ নির্বাচন করা প্রয়োজন। যেহেতু গরমের সময় তাই ঘাম থেকে বাঁচতে মেকআপ হতে হবে ওয়াটারপ্রম্নফ। এ সময় দিনের বেলায় সূর্যের তাপ থাকে প্রচুর। তাই ত্বক সানবার্নমুক্ত রাখতে অবশ্যই সান প্রোটেকটেড ফিল্টার-সমৃদ্ধ মেকআপ নির্বাচন করা প্রয়োজন। বেজ মেকআপ অ্যাপস্নাই করার পর চেহারা বা ত্ব্বকের ন্যাচারাল শেড ঢাকা পড়ে এক ধরনের ফ্ল্যাট লুক আসে। তাই প্রতি ক্ষেত্রেই ডার্ক শেড ব্যবহার করে আবারও চেহারার শার্পনেস ঠিক করে নিতে হবে। তাই বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন আপনার পূজার সাজ যেন হয় হালকা। শুধু তাই নয়- পরিপূর্ণ মেকআপের ক্ষেত্রে সঠিক বস্নাশনের ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বস্নাশনের ওপর ন্যাচারাল লুক অনেকটাই নির্ভর করে। তাই বস্নাশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্বকের রঙের সঙ্গে মানানসই বস্নাশন ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের রং মেকআপে বস্নাশনের সঠিক ব্যবহার সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ফর্সা, উজ্জ্বল শ্যামলা বা মাঝারি রং এবং কালো। ত্বকের রঙের ওপর নির্ভর করে বস্নাশনের রং পরিবর্তন হবে। আপনি ফর্সা হলে একটু হালকা রঙের বস্নাশন ব্যবহার করতে হবে। মেকআপ লাগানোর পর আপনার গালে ব্রাশ দিয়ে বস্নাশন লাগিয়ে ভালোভাবে মুখের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। তবে কালো রঙের আধিকারী মেয়েদের ক্ষেত্রে গোলাপি অথবা হালকা কমলা রঙের বস্নাশন অনেক ভালো লাগবে। এছাড়া রং হাইলাইট করতে হালকা সোনালি আভা দিলেও ভালো মানাবে। প্রথমে অ্যাঙ্গেল ব্রাশ দিয়ে বস্নাশন লাগিয়ে হাত দিয়ে হালকা করে একটু বেস্নন্ড করে নিতে হবে। এতে রং মুখের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যাবে। ডার্ক স্কিনের জন্য সোনালি রংই সবচেয়ে ভালো হয়। এতে আপনার গালে একটি সুন্দর আভা ফুটে উঠবে।
এরপর যার কথা না হলে পুরো সাজটাই বৃথা, তা হলো লিপস্টিক। দুর্গাপূজায় মেয়েদের এক পঁ্যাচে লাল-সাদা গরদ শাড়ি, চুলের সাজে খোঁপা বা খোলা রাখা লম্বা চুল, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে লাল টিপ, হাতে শাখা-এ সাজে খুব সহজেই ঠোঁটে লাল লিপস্টিকই সবার পছন্দ। তবে এ ক্ষেত্রে চোখের মেকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চোখের মেকআপকে গুরুত্ব দিতে চাইলে ঠোঁটকে হালকা রাখতে হয়। আবার একটু গস্নসের ব্যবহারেই হালকা লিপস্টিক দেয়া ঠোঁটটাই বেশি গুরুত্ব পেয়ে যায়। কিন্তু এ গরমের সময় পূজার দিনের সাজে লিপগস্নস আপনাকে বেমানান লাগতে পারে। তাই বুঝে নিন কোনটি আপনার জন্য মানানসই। মুখে মেকআপ না করেও নজর কাড়তে পারেন দারুণ শেডের লিপস্টিক দিয়ে।
দিনের বেলায় বেছে নিন কাঁথাস্টিচ বা মধুবনি শাড়ি। শাড়িজুড়ে সুতোয় বোনা গল্পের সঙ্গে একটু ফ্যাশনেবল গহনায় আপনি সহজেই হয়ে যাবেন অন্য সবার মধ্যে অনন্যা। নবমীর দিন রাতে বেছে নিন ট্রেন্ডি কোনো সালোয়ার-কামিজ। ট্রেন্ডি সালোয়ার-কামিজে আপনার অ্যাপিয়ারেন্সে আসবে বৈচিত্র্য। পূজার শেষদিন দশমী। দশমী মানেই সিঁদুর খেলা। আবহমান লালপেড়ে সাদা শাড়ির দিন। তবে লাল রঙের রাজশাহী র' সিল্ক, সিল্ক কলমকারী বা গঙ্গা-যমুনা পাড়ের গাদোয়াল শাড়িতেও হয়ে উঠতে পারেন অন্যদের চেয়ে আলাদা, নজরকাড়া বাঙালি নারী।
রঙ বেরঙ ডেস্ক