বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বনবিলাসে মনের হরষে

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুলস্নাহ
  ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

প্রাচ্যের প্যারিসখ্যাত খুলনা শহরটা বেশ ছিমছাম, শান্ত। রাস্তায় যানবাহনের বিরক্তিকর জ্যাম নেই। আয়েশি ভঙ্গিতে একটা দিন তাই শহরটির দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার ইচ্ছে জাগলো। মাত্র ২০০ বছরের পুরনো এ শহরটি বহু ইতিহাসের সাক্ষী। ইতিহাসের হাত ছুঁয়ে উপভোগ করতে কদম বাড়ালাম এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল চারটের ঘরে। বাসস্টপে দাঁড়াতেই মিলে গেল অটো। চালকবাবুকে বললাম- 'গিলাতলা যাবেন?' মাথা নেড়ে সায় দিল সে। আমরা তড়িঘড়ি চেপে বসলাম সিটে। বেড়ানোর জন্য প্রিয়তমা উম্মে মাবাদের প্রস্তুতি ছিল না তেমন একটা। সেজন্য খানিকটা নার্ভাস লাগছিল ওকে। তবু পথের পর পথ পেরুতেই বেশ লাগছিল ওর। অনেকটা নিরিবিলি পথঘাটের পরিবেশ। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল অটো। এভাবেই একসময় পৌঁছলাম শিরোমণি। জিজ্ঞেস করলাম- 'আর কদ্দূর?' ও আমায় সবর করতে বলল। বেশ, চুপটি মেরে বসে রইলাম আমি। মিনিট পাঁচেক পথ পেরুতেই অবাক হলাম বড্ডরকম। ক্যান্টনমেন্ট বরাবর এসে দাঁড়ালো অটোটি। উম্মে আমায় বলল- 'এবার নামুন।' ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম দুজনে। দিবসের ছুটি তখন পেতে চলেছে। সন্ধ্যের আকাশে রক্তিম রেখা বিরাজ করবে করবে ভাব। কদম কয়েক চলতেই টিকেট কাউন্টার। দুটো টিকেট নিয়ে সোজা হাঁটা ধরলাম। কিছুটা পথ চলতেই নাকের ডগায় লেখা দেখলাম- 'বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও বিনোদন পার্ক'। কিছুটা পথ এগুতেই চোখে পড়ল বিশাল এক সমৃদ্ধ চিড়িয়াখানা। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, অজগর, বানর, হনুমান, কুমিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর পাখিতে ভরপুর। পুরো পার্কটা ঘুরে দেখতে বেশ সময় লেগে যায়। আমরা ছুটলাম নাম না জানা হরেক রকমের পাখির মেলার দিকটাতে। এবার আমাদের সামনে পড়ল বানরের খাঁচা। আমি একরকম মেতে উঠলাম বানরের বাঁদরামিতে। নিরুপায় উম্মে মাবাদ বানরদের দেখিয়ে বলল- 'এই নে, তোদের প্রজাতির আরেকটা এই যে!' আমি বেশ হাসলাম ওর কান্ডে। হঠাৎ করেই একটি বাচ্চার হুলেস্নাড় ভেসে এলো কানে। ছুটলাম আরও অবাক করা দৃশ্যের দিকে। ক'জনকে দেখলাম রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে মজা করছে। আমরাও খুব আগ্রহে দেখতে লাগলাম বাঘমামাকে। ইটের টুকরো আর ঢিল ছুড়লাম ক্ষণে ক্ষণে। এভাবেই গড়ালো অনেকটা সময়। চারদিক তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। বেরুবার পথ ধরতে চাইলাম। কিন্তু বেরুতে গিয়ে নজরে পড়ল নাতিদীর্ঘ এক ঐতিহ্যশালা। অনেকটা কৌতূহলী মনে ঢুকলাম দুজনে। ভেতরে গিয়ে দেখলাম নানা প্রজাতের প্রাণী। এর মাঝে হরেক রকমের জীবন্ত মাছ আর সাপের দৃশ্য ছিল সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এরই মধ্যে মাগরিবের আজান ভেসে এলো কানে। বনবিলাসের আশপাশের লাল, নীল নিয়নবাতির আলোয় বেশ লাগছিল পরিবেশটা। সন্ধ্যার আঁধারি রাতে মিলাচ্ছিল বলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুজনে পথ ধরলাম বাড়ির দিকে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ থেকে বাসে খুলনার সোনাডাঙ্গা। বাসভেদে ভাড়া ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকা। সোনাডাঙ্গা থেকে অটো বা ইজিবাইকে গিলাতলা বনবিলাস বিনোদন পার্ক। ভাড়া ৬০ টাকা। রেলপথে ঢাকার কমলাপুর থেকে সুন্দরবন বা চিত্রা এক্সপ্রেসে খুলনা। ভাড়া ৫০৫ থেকে ৯৮০ টাকা। আর নৌপথে প্রতি বুধবার পিএস মাহসুদ বা পিএস অস্ট্রিচের মতো স্টিমার ঢাকা থেকে মংলা হয়ে খুলনা যাতায়াত করে।

কোথায় থাকবেন

খুলনা শহরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারি হোটেলের মধ্যে টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল হোটেল, সিটি ইন লিমিটেড, হোটেল ক্যাসল সালাম, ওয়েস্টার্ন ইন, হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মিলেনিয়াম উলেস্নখযোগ্য। খুলনায় পর্যটকদের জন্য মানসম্মত খাবারেরও দারুণ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে চাইলে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রাতে ট্রেন বা বাসে করে ফিরতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78872 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1