শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিউরোসায়েন্স গবেষণায় অগ্রগতি

মনোযোগ এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি মানুষের মানসিক প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত তাৎপযর্পূণর্। মনোযোগ প্রক্রিয়া ছাড়া মানসিক কাযর্ক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু দীঘির্দন এ বিষয়টি সম্পকের্ উল্লেখ করার মতো কোনো অজর্ন হয়নি। স্নায়ু এবং জিনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে তা বিজ্ঞানীরা জানতেন না। বেশ কিছু স্নায়ুজীববিজ্ঞানী গত দুদশকে মনোযোগবিষয়ক বিজ্ঞানকে উন্নত অবস্থানে নিয়ে গেছেন...
পাবর্নী দাস
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
নিউরোসায়েন্সের ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে ছবি : ইন্টারনেট

নিউরোসায়েন্সের ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে পসনার, ক্যান্ডেল প্রমুখ বিজ্ঞানীর অজর্নকে এগিয়ে নিয়েছেন তরুণ গবেষকরা। মানুষের আবেগ, চিন্তা-ভাবনা, যুক্তি সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের একেকটি বিভাগ বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত। পরস্পরের সঙ্গে বিভাগগুলোর যোগসূত্র খুঁজে মস্তিষ্ককে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। তাদেরই একজন মিখাইল পসনার। মিখাইল পসনার আবেগ মনোযোগের সঙ্গে মস্তিষ্কের সম্পকের্র ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।

মনোযোগ এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি মানুষের মানসিক প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত তাৎপযর্পূণর্। মনোযোগ প্রক্রিয়া ছাড়া মানসিক কাযর্ক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু দীঘির্দন এ বিষয়টি সম্পকের্ উল্লেখ করার মতো কোনো অজর্ন হয়নি। স্নায়ু এবং জিনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে তা বিজ্ঞানীরা জানতেন না। বেশ কিছু স্নায়ুজীববিজ্ঞানী গত দুদশকে মনোযোগবিষয়ক বিজ্ঞানকে উন্নত অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিজ্ঞানী মিখাইল পসনার।

ইতিমধ্যে মনোযোগবিষয়ক গবেষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে আন্তজাির্তকভাবে খ্যাতি অজর্ন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিখাইল পসনার। স¤প্রতি একটি জানাের্ল মনোযোগবিষয়ক গবেষণাকে পসনার তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত করেন। এগুলোর প্রথমটি হচ্ছে ইন্দ্রিয় সংবেদন সংক্রান্ত ঘটনাগুলোকে পরিস্থিতি অনুযায়ী পযের্বক্ষণ এবং প্রয়োজন অনুসারে এগুলোর পযের্বক্ষণে পরিবতর্ন আনা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে এর মধ্যে কোন তথ্যগুলোকে ফ্রন্টাল লোবে প্রক্ষেপ করতে হবে তা চিহ্নিত করা। ফ্রন্টাল লোবে প্রক্ষেপ করার অথর্ হচ্ছে তথ্যগুলোকে কোনো বিশেষ পরিকল্পনায় ব্যবহারের জন্য পাঠিয়ে দেয়া। আর এই তথ্যগুলো সম্পকের্ জীবটি বেশ সচেতন থাকে। গবেষণার তৃতীয় অংশটি হচ্ছে সতকর্ অবস্থা ধারণ করা। মনোযোগের সঙ্গে সতকর্ অবস্থা বিশেষভাবে জড়িত হলেও দুটো একই বিষয় নয়।

উচ্চ মস্তিষ্ক তথা সেরেব্রাল কটের্ক্স চারটি অংশে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে ফ্রন্টাল লোব, অক্সিপিটাল লোব, টেম্পোর‌্যাল লোব এবং প্যারেইটাল লোব। এদের মধ্যে অক্সিপিটাল লোব দৃশ্য অঞ্চল ধারণ করে, টেম্পোরাল লোব স্মৃতি গঠনে, সংরক্ষণে এবং প্রয়োজন হলে সচেতন মনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে, ফ্রন্টাল লোব সচেতন বোধ ধারণ ও পরিকল্পনায় সাহায্য করে। তাহলে প্যারেইটাল লোব কি করে ? প্যারেইটাল লোব যেটা করে সেটা হচ্ছে মনোযোগ প্রক্রিয়াকে ধারণ করে। আমরা যখন কোনো বিষয়ে মনোযোগী হয়ে পড়ি তখন আমাদের মস্তিষ্কে প্যারেইটাল লোবের স্নায়ুগুলো একটি সুনিদির্ষ্ট বিন্যাসে গতিশীল হয়।অথার্ৎ মনোযোগ প্রক্রিয়াকে উপস্থাপনের জন্য প্যারেইটাল কটেের্ক্রা একটি স্নায়ুবিক ব্যবস্থা আছে। এই স্নায়ুবিক ব্যবস্থা হচেছ বেশকিছু ছোট ছোট স্নায়ুবিক সাকিের্টর সমন্বয়ে তৈরি একটি বৃহৎ স্নায়ুবিক সাকির্ট।

মস্তিষ্কের যেকোনো কাযর্ক্রম ব্যাখ্যার জন্য কাজটির সাথে সম্পকির্ত স্নায়ুবিক সাকির্ট আবিষ্কার অত্যন্ত তাৎপযর্্যপূণর্। যেমন ভাষার সাথে জড়িত স্নায়ুবিক সাকির্ট আবিষ্কার করে বিজ্ঞানী স্টেভেন পিঙ্কার হয়েছেন পৃথিবী বিখ্যাত। আবার স্মৃতি ও শিক্ষার সাথে জড়িত স্নায়ুবিক সাকির্ট আবিষ্কার করে বিজ্ঞানী এরিক ক্যান্ডেল পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। তাই অনায়াসেই বলা যায় মিখাইল পসনারের মনোযোগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত স্নায়ুবিক সাকির্ট বিশেষ গুরুত্বপূণর্।

এক বা একাধিক সুনিদির্ষ্ট কাযর্ক্রম পরিচালনার জন্য যখন বেশকিছু স্নায়ু পরস্পরের সাথে সিন্যাপস বরাবর সংযুক্ত হয় তখন ঐ সংযুক্ত স্নায়ুগুলোকে একত্রে স্নায়ুবিক সাকির্ট বলে। স্নায়ুবিক সাকির্ট কাজ করে সাকিের্ট থাকা স্নায়ুগুলোর মধ্যে বিরাজমান জিনসমূহের সাহায্যে। তাই কোন স্নায়ুবিক সাকির্ট সম্পকের্ ভালোভাবে জানতে হলে ঐ স্নায়ুবিক সাকিের্টর সাথে জড়িত জিনসমূহ সম্পকের্ ভালোভাবে জানতে হবে। মনোযোগের স্নায়ুবিক সাকিের্টর সাথে জড়িত প্রায় ১৮৫টি জিন আবিষ্কারে ভূমিকা রেখে মিখাইল পসনার কতটা গুরুত্বপূণর্ কাজ করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এভাবে মনোযোগ প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করার পর পসনার তার গবেষণায় নিয়ে আসেন আবেগ প্রক্রিয়াকে। তিনি দেখান, মনোযোগের সঙ্গে আবেগের বিশেষ সম্পকর্ রয়েছে। কোনো একটি সময়ে কোনো মানুষের সামনে অসংখ্য উদ্দীপক থাকলে সে অবশ্যই আবেগ উদ্দীপক বিষয়ের দিকে নিরপেক্ষ বিষয়গুলোর তুলনায় বেশিক্ষণ মনোযোগী হবে। পসনার মনোযোগের সঙ্গে আবেগের সম্পকর্ তুলে ধরতে যেয়ে স্পটলাইটের ধারণা নিয়ে আসেন। তিনি একে বলেন মেন্টাল স্পটলাইট। আবেগ সংক্রান্ত উদ্দীপকের ক্ষেত্রে এই মেন্টাল স্পটলাইটটি ছোট পরিসরে থাকে। স্পটলাইটের ক্ষেত্রে যেটা হয়, স্পটলাইট যতো ছোট হয় আলোর তীব্রতা ততো বেশি হয় । তেমনি আবেগ উদ্দীপক বিষয়ের ক্ষেত্রে মেন্টাল স্পটলাইট ছোট থাকে তাই এই ক্ষেত্রে মনোযোগ থাকে তীব্র। নিরপেক্ষ বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে মেন্টাল স্পটলাইট বিস্তৃত থাকে। তাই নিরপেক্ষ বিষয়ের ক্ষেত্রে মনোযোগ বিস্তৃত বা হালকা থাকে।

পসনার আবেগের সঙ্গে জড়িত লিম্বিক সিস্টেম অঞ্চলের স্নায়ুগুলোর সঙ্গে প্যারেইটাল কটের্ক্স অঞ্চলের সুনিদির্ষ্ট স্নায়ুগুলোর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেন। অথার্ৎ তিনি সম্পূণর্ নতুন ধরনের একটি স্নায়ুবিক পথমালা আবিষ্কার করেন। আবেগের সঙ্গে মনোযোগের সম্পকর্ খঁুজতে হলে এই পথ ধরেই এগুতে হবে। বতর্মানে আবেগ ও মনোযোগের সম্পকর্ নিয়ে কাজ করছেন এমন বিজ্ঞানীরা সেটাই করছেন। তারা পসনার আবিষ্কৃত স্নায়ুবিক পথমালাকেই অনুসরণ করছেন। যেমন সম্প্রতি আন্তজাির্তক বিজ্ঞান পত্রিকা জানার্ল অব কগনিশন নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত প্রবন্ধে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী জেনি এরিকসন আবেগ ও মনোযোগের সম্পকর্ দেখাতে গিয়ে পসনার আবিষ্কৃত স্নায়ুবিক পথমালার কথা উল্লেখ করেছেন। জেনি এরিকসন এই পথমালার সাথে জড়িত কয়েকটি জিন ও নিউরোট্রান্সমিটার আবিষ্কার করেছেন। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী এজি ডিকেন্স এবং জাপানের বিজ্ঞানী সিয়াং চেন আবেগ ও মনোযোগের সম্পকর্ দেখাতে গিয়ে পসনার আবিষ্কৃত স্নায়ুবিক পথমালার কথা উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজের বিজ্ঞানী এরিক জেমস বলেন, ‘ মনোযোগ আর আবেগ স্নায়ুর সূত্রে গঁাথা। এই বিষয়টি সুস্পষ্ট করা মস্তিষ্কবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি অসাধারণ সংযোজন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12448 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1