মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বস্ন্যাক হোলের বৈচিত্র্যময় দিক

শামিমা জান্নাত
  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

বস্ন্যাক হোল এমন একটি মহাজাগতিক বস্তু যার সর্বগ্রাসী ক্ষুধার হাত থেকে কারও মুক্তি নেই। বেরিয়ে আসতে পারে না আলোও। অত্যন্ত শক্তিশালী অভিকর্ষ বলের টানে সবকিছুকেই নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে বস্ন্যাক হোল। এরপর গিলে ফেলে। তাই এই ব্রহ্মান্ডের কোনো বস্ন্যাক হোলেরই ছবি তোলা সম্ভব হয়নি এতদিন। তবে এবার পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে বস্ন্যাক হোলের রেডিও তরঙ্গকে দেখা হয়েছে। সেই রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে বস্ন্যাক হোলের ছবি তোলা।

আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমাদের গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা বস্ন্যাক হোলটির পাশাপাশি আমাদের চেয়ে ৫ কোটি ৩৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গ্যালাক্সির 'এম-৮৭' মাঝখানে থাকা বস্ন্যাক হোলের ছবি তুলেছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ। দুটি বস্ন্যাক হোলের বিরলতম এই ছবি অনলাইনে প্রকাশিত হবে এই এপ্রিলে।

এই ব্রহ্মান্ডে আমাদের ঠিকানা মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে। আমাদের থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে বস্ন্যাক হোল 'স্যাজিটেরিয়াস এ*'। গত এক শতাব্দী ধরে এই বস্ন্যাক হোল নিয়ে পৃথিবীবাসীর যে অপার কৌতূহল ছিল তা হয়তো মিটবে এই মাসেই। বহু চেষ্টা করে দুই বছর ধরে তোলা হয়েছে বস্ন্যাক হোল 'স্যাজিটেরিয়াস এ*'র ছবি। মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা সেই ভয়ঙ্কর বস্ন্যাক হোলটির ওজন আমাদের সূর্যের ভরের ৪০ লাখ গুণ! বৃত্তাকার এই দানবের ব্যাস ২ কোটি ৪০ লাখ কিলোমিটার।

ভয়ঙ্কর দৈত্যাকার এই বস্ন্যাক হোলটির ছবি তোলার মতো অসাধ্য সাধন করেছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)। যা বানানো হয় পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক দিয়ে। যেটি কাজ শুরু করেছিল দুই বছর আগে, ২০১৭ সালে।

প্রয়াত কিংবদন্তি পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংই প্রথম অঙ্ক কষে বলেছিলেন, 'বস্ন্যাক হোলস আর নট সো বস্ন্যাক।' বস্ন্যাক হোলরা পুরোপুরি কালো হয় না। তাদেরও কিছুটা 'আলো' থাকে। সেই আলোটা অবশ্য দেখা সম্ভব হয় না। কারণ সেই আলোটা বেরিয়ে আসে অসম্ভব ঠান্ডায়। অথচ তার চেয়ে অনেক বেশি গরম এই ব্রহ্মান্ডের কসমোলজিক্যাল মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি)। সেই 'আলো'র ওপারে যে বস্ন্যাক হোল রয়েছে তাও জানা যায় না। শুধু বোঝা যায়, ওপারে যেন কিছুই নেই। রয়েছে শুধুই শূন্যতা।

বস্ন্যাক হোলের কাছাকাছি যে জায়গাটা থেকে কিছুটা হলেও আলো বেরিয়ে আসতে পারে, স্টিফেন হকিং সেই জায়গাটার নাম দিয়েছিলেন 'ইভেন্ট হরাইজন'। যা রয়েছে গোটা বস্ন্যাক হোলটার চার পাশে। বস্ন্যাক হোলটাকে চার দিক থেকে ঘিরে।

বস্ন্যাক হোল জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে নক্ষত্র, ধুলোবালি আর গ্যাসের মেঘকে নিজের দিকে টেনে আনে। সেগুলো বস্ন্যাক হোলের পেটে গিয়ে পড়ার আগে দ্রম্নত ছুটে আসার সময় একে অন্যকে ধাক্কা মারে। ধাক্কা মারে বস্ন্যাক হোলের চার পাশে থাকা ধুলোবালি আর জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘকে। তার ফলে সৃষ্টি হয় এক ধরনের আলোর। যাকে বলা হয় এক্স-রে। যা আমরা দেখতে পাই না। তবে ইভেন্ট হরাইজনে প্রচুর আধানযুক্ত কণা থাকায় বস্ন্যাক হোলের চারপাশের ওই এলাকায় অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ডের জন্ম হয়। সেই শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোর মধ্যদিয়ে ইভেন্ট হরাইজন থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে আরও এক ধরনের আলো। যা আসলে রেডিও তরঙ্গ। যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেকগুণ বেশি। তা অনেক অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। মূলত সেই রেডিও তরঙ্গকে ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে দেখে তোলা হয়েছে বস্ন্যাক হোলে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46026 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1