জ্বলতে সুরুজকে নিচে
১৯৬৯ সালে প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরীর প্রযোজনায় জহির রায়হানের উদুর্ ছবি ‘জ্বলতে সুরুজকে নিচে’। এতে অভিনয় শুরু করেছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। এটিই ছিল তার নায়িকা হিসেবে প্রথম ছবি। যদিও এর আগে একই পরিচালকের ‘সংসার’ ছবিতে শিশু শিল্পী হয়ে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। ‘জ্বলতে সুরুজকে নিচে’ ছবির কাজ শুরু হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বেশ জটিল হয়ে ওঠে। জহির রায়হান রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনিও পাকিস্তানের শোষণ মেনে নিতে পারছিলেন না। হয়তো চেয়েছিলেন স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে ছবি নিমার্ণ করবেন কিন্তু পরবতিের্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। জহির রায়হানও হারিয়ে যান সবার থেকে। কালের গহবরে হারিয়ে যায় ‘জ্বলতে সুরুজকে নিচে’।
বেগম রোকেয়া
১৯৯৫ সালে বেশ ঘটা করে মহরত হয়েছিল ‘বেগম রোকেয়া’ ছবির। সুভাষ দত্তের পরিচালনায় এ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবানার। তার স্বপ্নের ছবি ছিল ‘বেগম রোকেয়া’। মহরতের পর অল্প কিছু কাজও হয়েছিল। প্রায় দুই যুগ সময় পেরিয়ে গেছে, পরিচালক সুভাষ দত্ত চলে গেছেন না ফেরার দেশে, শাবানা ছেড়েছেন চলচ্চিত্র । কিন্তু ছবিটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। হয়তো ছবিটি নিয়ে এখনো শাবানার আক্ষেপ রয়ে গেছে।
রতœগভার্ মা
জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা নিপুণ চলচ্চিত্রে আসেন ২০০৬ সালে। দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেত্রীর প্রথম ছবির নাম ‘রতœগভার্ মা’। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন নায়ক মুন্না। ছবিটির শুটিংও হয়েছিল। নিপুণের সেই ছবিটি আজও মুক্তি পায়নি। কি কারণে? তা আজও সুস্পষ্ট নয়। ভবিষ্যতেও মুক্তির কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না, তা কারো জানা নেই। তবে নিপুণের ‘পিতার আসন’ প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি।
আলগা নোঙর
এটি ১৯৯০ সালের চট্টগ্রামের একটি গল্প। তখন মানুষের হাতে হাতে এ সময়ের মতো মোবাইল ফোন ছিল না। মানুষ তখন চিঠি লিখত। সে সময়ের একটি প্রেম কাহিনী। ওয়াহিদ তারেকের পরিচালনায় এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ছোটপদার্র অভিনেত্রী কাজী নওশাবা ও নবাগত মিল্টন। এ ছবির শুটিং শেষ হয়েছে পঁাচ বছর আগে। দীঘর্ সময় পেরিয়ে গেলেও ছবিটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। এত দিনেও ছবিটি মুক্তি না পাওয়ায় বিব্রতবোধ করছেন এ ছবির একাধিক অভিনয় শিল্পী। কবে নাগাদ মুক্তি পাবে তাও অজানা তাদের।
রানাপ্লাজা
গামের্ন্টস শ্রমিকদের সংগ্রামী জীবন ও বহুল আলোচিত রানাপ্লাজার ভয়াবহ দুঘর্টনা নিয়ে নজরুল ইসলাম নিমার্ণ করেন ‘রানা প্লাজা’। এ ছবিতে অভিনয় করেন সময়ের আলোচিত নায়িকা পরীমনি ও সাইমন সাদিক। ছবিটি নিমাের্ণর শুরু থেকেই বিভিন্ন কারণে আলোচনায় এসেছে। ছবিটির মুক্তি নিয়ে বিষয়টি সুপ্রিমকোটর্ পযর্ন্ত গড়ায়। সবের্শষ ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ছবিটি আজও মুক্তি পায়নি। পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ছবিটির প্রচারের পেছনে ৬০ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছি। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এমনিতেই আমাদের বতর্মানে চলচ্চিত্রের অবস্থা খারাপ। চলচ্চিত্রটি প্রদশর্ন করতে না পারায় আমরা লোকশানের মধ্যে আছি। ছবিটি নিয়ে শুরু থেকেই বড় ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে। আমরা তো ছবিটি বানিয়েছি মানুষকে সচেতন করার জন্য।
ছায়াছবি
২০১৩ সালে তরুণ নিমার্তা মোস্তফা কামাল রাজ নিমার্ণ করেন তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘ছায়াছবি’। ছবিটি নিমার্ণ শেষে সেন্সরেও গিয়েছে। মুক্তির উদ্দেশ্যে এর অডিও রিলিজের পাশাপাশি ছায়াছবির প্রমোও প্রচার করেছিল চ্যানেল নাইনসহ বিভিন্ন চ্যানেলে। কিন্তু ছবিটি আজও প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। ‘ছায়া-ছবি’ চলচ্চিত্রটি অথার্য়ন করেছে চ্যানেল নাইন। ছবিতে অভিনয় করেছেন পূণির্মা, আরেফিন শুভসহ অনেকে।
দ্য ডিরেক্টর
দীঘর্ সময় পেরিয়ে গেলেও মুক্তি পায়নি বহুল আলোচিত ও সমালোচিত চলচ্চিত্র ‘দ্য ডিরেক্টর’। কামরুজ্জামান কামু পরিচালিত এ ছবিটি সেন্সরে যায় ২০১৩ সালের ফেব্রæয়ারিতে। বোডর্ কতৃর্ক নিষেধাজ্ঞার দÐও বয়ে বেড়াতে হয়েছে। অভিযোগ ছিলÑ অপযার্প্ত মূল কাহিনী, অশ্লীল সংলাপের ব্যবহার, আগ্নেয়াস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, নিবির্চারে মানুষ হত্যা, আইনহীনতা ও লাম্পট্য জীবনযাপনকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন এবং চলচ্চিত্র নিমার্তাদের হেয়ভাবে উপস্থাপন ও চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা জন্মায় এমনভাবে কাহিনী চিত্রায়ন। তবে সমস্ত অভিযোগ উতরে সংশ্লিষ্ট কলাকুশলী ও চলচ্চিত্রপ্রেমী সাধারণ মানুষের আন্দোলন ও দাবির মুখে সেন্সর ছাড়পত্র পায় দ্য ডিরেক্টর। এত কিছুর পরেও ছবিটি দেখতে পারছে না দশর্ক। এতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা পপি, মারজুক রাসেল, মোশাররফ করিম ও তানভিন সুইটি।
না মানুষ
‘না মানুষ’ ছবি দিয়ে অনিমেষ আইচের পরিচালক হওয়ার কথা ছিল চিত্রপাড়ায় । মৌসুমী হামিদকে নিয়ে যাত্রা হয়েছিল এর। কিন্তু কিছু দিন শুটিংয়ের পর বন্ধ হয়ে যায়। আজও এর কোনো খবর নেই। বাকি কাজ শেষ হয়ে এ ছবিটি মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। পরিচালকের ভাষ্যমতে, এর প্রডিউসাররা কেউ দেশে নেই। টাকার অভাবে এর কাজ বন্ধ হয়ে আছে। অনিমেষ বলেন, এটা আসলে আর জীবনেও হবে না। এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমার শিল্পী যারা ছিলেন তারা সবাই বড় হয়ে যাচ্ছে, শিশুশিল্পীরা বেড়ে উঠছে, আর কীভাবে হবে। ‘না মানুষ’ ছবির কাজ বন্ধের পর এই পরিচালকের ‘জিরো ডিগ্রী’ ২০১৫ সালে ও ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ ২০১৭ সালে মুক্তি পায়।
স্বপ্নের বিদেশ
প্রায় ১২ বছর ধরে আটকে আছে নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘স্বপ্নের বিদেশ’। আগের ছবি হলেও ডিজিটাল যুগে এসেও এর কোনো গতি নেই। এ ছবির নায়ক ছিলেন বতর্মান সময়ের হিরো দ্য সুপারস্টারখ্যাত নায়ক শাকিব খান। ছবিটি অনিশ্চিত হয়ে আছে দুটি কারণে। প্রথমত, ইতিমধ্যে শাকিব খানের সঙ্গে ছবিটির মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, ছবির লন্ডনপ্রবাসী প্রযোজকের আগ্রহ কম। প্রযোজক নিজেও এ ছবির আরেক নায়ক। বিপরীতে নায়িকা নদী। নদী নামের এই নায়িকাও প্রায় নিখেঁাজ। এমতাবস্থায় এই ছবি শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ভালোবাসা সাদাকালো
২০০৮ সালে শুটিং শুরু হয়েছিল গোলাম মোস্তফা শিমুল পরিচালিত ‘ভালোবাসা সাদাকালো’ সিনেমার শুটিং। দীঘর্ সময় পেরিয়ে গেলেও ছবিটি আজও মুক্তি পায়নি। এ ছবিতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন নজরুলসংগী শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা। আরও অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ, পূণির্মা, পপি ও মাহমুদুজ্জামান বাবু।
শ্যাওলা
২০১৬ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে মহরত হয় ‘শ্যাওলা’ ছবির মহরত। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছবির নায়ক ফেরদৌস ও কলকাতার নায়িকা পায়েল মুখাজির্। গ্রামীণ পটভূমির গল্পের এ ছবিটি পরিচালক এহসান ও বাপ্পি। পায়েলকে নিয়ে এ ছবির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল কুমিল্লায়। এরপর বন্ধ রয়েছে ছবির পুরো কাজ। টানা দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ছবিটির নতুন কোনো খবর নেই।