মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশীয় টিভিতে বিদেশি সিরিয়াল

এত নাটকের ভিড়ে গত কয়েক বছর ধরে ভিনদেশি পুরনো টিভি সিরিয়াল প্রচারের যেন প্রতিযোগিতা চলছে দেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোয়। এটাকে অপসংস্কৃতি উল্লেখ করে এর আগে এসব সিরিয়াল বন্ধের জন্য আন্দোলনও চলেছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়ালের প্রচার। সম্প্রতি আরও কয়েকটি সিরিয়ালের প্রচার শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সিনিয়র নাট্যব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ড. ইনামুল হক

দেশীয় চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের বিষয়ে আমার কোনো নেতিবাচক মন্তব্য নেই। আমরা আগেও দেখেছি বিটিভিতে বিদেশি বিভিন্ন সিরিয়াল প্রচার হতো। শিক্ষিত দশের্করা ইংরেজি ভাষা শেখার আগ্রহ প্রকাশ করত। বিশ্বায়নের যুগে আমাদের থেমে থাকলে হবে না। অন্যদেশের কৃষ্টি-কালচার সম্পকের্ও আমাদের জানতে হবে। তাই বিদেশি সিরিয়াল প্রচারে কোনো সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না। এটা কখনো আমাদের সংস্কৃতির জন্য হুমকি নয়। তবে এটা প্রচারে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অবাধে নয়, সিমিত হওয়া দরকার। বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল থেকে আমরা তাদের অভিনয়, মেকাপ-ড্রেসাপ, ক্যামেরার ব্যবহার, শিল্পনিদের্শনা সম্পকের্ জানতে পারছি। তাদের সামাজিক অবস্থা দেখতে পারছি। তাই এটাকে আমি খারাপ মনে করছি না। বাংলায় ডাবিং হওয়ার কারণে আমাদেশের ছেলেমেয়েরাও কণ্ঠ দিতে পারছে । এতে করে কণ্ঠশিল্পীরাও লাভবান হচ্ছে। কাজের ক্ষেত্র পাচ্ছে। আর এসব সিরিয়ালে তো কোন অশ্লীলতা প্রচার হচ্ছে না। আমার মতের সঙ্গে কেউ একমত না হলেও বলব বিদেশি সিরিয়াল প্রচার হওয়া মন্দের কিছু নেই। সীমিতভাবে প্রচার হতে পারে।

আতাউর রহমান

একসময় বিটিভিতে ইংলিশ ধারাবাহিকগুলো প্রচার হতো। ডালাস, ম্যাকাইভার, ডাইন্যাস্টি, চালির্স এঞ্জেলস, ফলগাই, রুটস নামের একাধিক বিদেশি টিভি সিরিয়াল বিটিভিতে প্রচার করা হয়েছে। এসবের ভাষা ছিল ইংরেজি। সবাই যে ইংরেজি ভাষা বুঝত তা কিন্তু নয়। তবুও দশর্ক ছিল প্রচুর। অভিনয় দেখে গল্পটা বুঝতে পারত। টিভি সিরিয়ালগুলোর নিমার্ণশৈলী বিশেষ করে পারিবারিক কাহিনীই দশর্কদের আগ্রহের মূল বিষয় ছিল। সপ্তাহে একবার প্রচার করা হতো সিরিয়ালগুলোর নতুন পবর্। এখন যেটা হয় সেগুলো বাংলায় ডাবিং করা। অন্য দেশের অভিনয়শিল্পীদের কাজ। এর মাত্রাটা দিনদিন বাড়ছে। বিভিন্ন চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে। একটা শেষ হলেই আরেকটি শুরু হচ্ছে। এটা আমার কাছে ভালো লাগে না। এটা করা উচিত নয় বলে আমার মনে হয়। এতে করে আমাদের দেশীয় নাটকের দশর্ক কমিয়ে দিচ্ছে। আমাদের নাটক ও পেশাগতভাবে যারা নাটকের সঙ্গে জড়িত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দিলারা জামান

দেশীয় চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের পক্ষে আমি নই। এটা হোক আমি তা চাই না। অমাদের দেশে অনেক ভালোভালো নাটক প্রচার হচ্ছে সেগুলো দশের্করা দেখবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু কিছু চ্যানেলে নিয়মিত বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে চালানো হচ্ছে। এটা আমাদের শিল্পসাহিত্যে ও সংস্কৃতি প্রসারে বিরাট প্রতিবন্ধকতা করছে। কারণ এতে অন্যদেশের সংস্কৃতি দেখানো হচ্ছে। যে গল্প দেখানো হচ্ছে, যে জীবনের কথা বলা হচ্ছে সে গল্প ও জীবন আমরা চিনিনা। এটা ভিন্ন সংস্কৃতির অন্য জীবনের গল্প। আমরা যে পরিবেশে যে সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি কিংবা হচ্ছি এটার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। এসব সিরিয়াল প্রচারে আমাদের দেশের টেলিভিশন নাটক ও সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশীয় নাটক প্রচারে আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমাদের নিজস্ব গবের্র ঐতিহ্য আছে, তা বাদ দিয়ে অন্যদের সংস্কৃতি প্রচারে আগ্রহ না থাকাটাই উচিত। আমাদের টেলিভিশন অঙ্গনটা এখন একটি ইন্ড্রস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে বলা যায়। অভিনয় ও পরিচালনাকে এখন অনেকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। টিভি নাটককে কেন্দ্র করে অনেকের জীবিকা নিবার্হ হচ্ছে। তাই বিদেশ প্রীতি না হয়ে স্বদেশপ্রীতির প্রতি নজর দেয়া দরকার। বিগ বাজেটে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার না করে দেশীয় নাটক প্রচারে এগিয়ে আসা দরকার।

আবুল হায়াত

বিদেশি সিরিয়াল এর আগেও আমাদের দেশে চলেছে। এখনো চলছে এটা ভবিষ্যতেও চলবে। তবে হ্যঁা, সরকারকে এইসব বিদেশি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিদেশি অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি নিধার্রণ করে দিতে হবে। যেমন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কত শতাংশ সময় আপনি বিদেশি অনুষ্ঠান চালাবেন এবং কোন সময় চালাতে পারবেন তা আইন করতে হবে। এটা দেশীয় সংস্কৃতিকে নিরাপত্তা দেবার জন্যেই করতে হবে। দেশীয় শিল্পী, কলাকুশলীদের স্বাথর্রক্ষার জন্যে। আমাদের স্বাথর্ আগে রক্ষা করে তারপর যতটুকু সম্ভব বিদেশি অনুষ্ঠান বিদেশি চ্যানেল দেখাতে হবে। নিজেদের স্বাথর্ জলাঞ্জলি দিয়ে, নিজেদের শিল্পকে ধ্বংস করে বিদেশি চ্যানেল, বিদেশি অনুষ্ঠান আমরা কেন দেখাব। পৃথিবীর সব দেশই নিজেদের শিল্প রক্ষায় নানা ধরনের সুরক্ষা দিয়ে থাকে। আমাদেরও সেটি করতে হবে।

বৃন্দাবন দাস

দেশীয় চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার নিয়ে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এখনো আগের মতই চলছে। সত্যি বলতে আমরা বিদেশপ্রীতি। সব ক্ষেত্রেই নিজের চেয়ে অন্যেরটা পছন্দ করি। বাংলায় ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়ালের পক্ষে অনেকেই নানা যুক্তি দেখান। কিন্তু আমার কাছে সেই সব সিরিয়ালগুলো মানসম্পন্ন মনে হয়নি। কয়েকটি সিরিয়ালে যা দেখেছি তাতে আহামরি কিছু নেই। আসলে আমরা সব ক্ষেত্রে লাভের কথা চিন্তা করি। কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই তাৎক্ষণিক লাভ খুঁজি।-দেশের জন্য ভালোমন্দ চিন্তা খুব কম করি বলেই এই অবস্থা। দেশের সংস্কৃতির প্রতি দায় বদ্ধতা না থাকলে যা হয়। দেশীয় চ্যানেলে বাংলায় ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল প্রচার হওয়া ইতিবাচক নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে ভাবেন কিনা আমার জানা নেই। তবে হ্যঁা, শিক্ষণীয় বিষয় হলে চলতে পারে। পিক আওয়ারে না হয়ে অফ পিক টাইমে চলতে পারে। সপ্তাহে একদিন কিংবা দুই দিন প্রচার হতে পারে। কিন্তু পিক আওয়ারে আমাদের অনুষ্ঠানগুলো না চালিয়ে বিদেশি সিরিয়ালগুলো চালানো শুভ লক্ষণ মনে হয় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<19197 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1