শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চল্লিশ বছরে মাইলস

দেখতে দেখতে ৩৯টি বছর পার হয়ে গেল। আর কিছুদিন পরই চল্লিশে পদাপর্ণ করবে দেশের শীষর্স্থানীয় ব্যা›ডদল মাইলস। তবে অতি সহজ এবং মসৃণ পথ ছিল না, অনেক চড়াই-উতরাই পার করেই আজকের এই অবস্থানে এসেছে পরিবারটি। মাঝখানে ভাঙা-গড়ার কবলেও পড়তে হয়েছে। লিখেছেন- মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
মাইলস ব্যান্ডের সদস্যরা

শুরু থেকেই হোক শুরু...

তখন ১৯৭৯ সাল। এ সময়ই জন্ম নেয় মাইলস। এ সময় হোটেল রূপসী বাংলায় সপ্তাহে ৫ দিন অনুষ্ঠান করত দলটি।। সে সময় এই হোটেলের নাম ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পযর্ন্ত তারা সোনারগঁাও প্যান প্যাসিফিক হোটেলে বাজিয়েছিল। তখন তাদের এত নামডাক ছিল না। বাংলাদেশ টেলিভিশন এ মাইলস হিসেবে তাদের প্রথম অংশগ্রহণ ১৯৮২ সালে। ওই বছরই মাইলস? শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ১৫০০ সংগীতপিপাসু দশের্কর সামনে তাদের প্রথম সরাসরি কনসাটর্ অনুষ্ঠিত করে।

প্রতিশ্রæতির পর প্রত্যাশা...

১৯৮২ সালে তারা তাদের প্রথম অ্যালবাম বের করে ইংরেজি ভাষায়। এরপর তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথম অ্যালবাম ইংরেজিতে হওয়ায় ওই সময় কিছু লোক বলেছিল যে, মাইলস বাংলা গান রচনা করতে পারে না, তার পরই মাইলস তাদের প্রথম বাংলা মিউজিক অ্যালবাম বের করে। অ্যালবামটির নাম দেয়া হয় ‘প্রতিশ্রæতি’। এর ভেতর ‘চঁাদ তারা’ গানটি তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। তাছাড়া বাকি গানগুলোও জনপ্রিয় হয়েছিল। শ্রোতাদের মুখে মুখে বিশেষ করে তরুণদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় মাইললস। ‘প্রতিশ্রæতি’ অ্যালবামের অভাবনীয় সাফল্যের পর ১৯৯৩ সালে বাজারে মাইলসের দ্বিতীয় বাংলা অ্যালবাম ‘প্রত্যাশা’। যা বিস্ময়কর সাফল্য অজর্ন করে। এ অ্যালবামটি বের হওয়ার কয়েক মাসের ভেতরেই তিন লাখ কপি বিক্রি হয়ে রেকডর্ সৃষ্টি করে। দেশ বিদেশে মাইলসের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যয়, প্রতিধ্বনি এবং প্রতিচ্ছবি...

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে অডিও বাজারে প্রকাশ পায় ‘প্রত্যয়’, ২০০০ সালে ‘প্রতিধ্বনি’ ও ২০১৫ সালে ‘প্রতিচ্ছবি’। শুধু অ্যালবাম প্রকাশেই নয়, তারা জনপ্রিয়তায় আকাশচুম্বি সফলতা আনেন কনসাটের্ গান করেও। ১৯৯২ সালে মাইলস ব্যাঙ্গালোরের দশর্কদের চিত্তাকষর্ণ করেছিল। এবং ইন্ডিয়াতে তিন ঘণ্টার একটি ইংলিশ কনসাটর্ করে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তারা প্রথম ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে সিডি বের করে, ডিস্কো রেকডির্ং (উরংপড় জবপড়ৎফরহম) নামে লস অ্যাঞ্জেলেসের (খড়ং অহমবষবং) একটি রেকডির্ং কোম্পানি মাইলসের প্রথম সিডি অ্যালবাম বেস্ট অব মাইলস বের করে। ১৯৯৬ সালে তারা ভারতে পঁাচটি, আবুধাবি ও দুবাইতে দুইটি কনসাটর্ করে। এবং চ্যানেল এম ও এমটিভি সরাসরি এই কনসাটর্ রেকডর্ করে। ১৯৯৬ তারাই প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড ছিল, যারা প্রথম ইউএস ও ক্যানাডায় সফরে যায়। মাইলসের ইতিহাসে তাদের একটি অন্যতম কনসাটর্ হয়েছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে, যেখানে সাংবাদিকসহ প্রায় ৬০ হাজার দশর্ক হয়েছিল। এই কনসাটির্ট আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোডের্র তত্ত¡াবধানে এবং স্পন্সর ছিল পেপসি ।

আন্তজাির্তক অঙ্গনে মাইলস...

২০০১ সালে মাইলস নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কনসাটের্র জন্য আমন্ত্রিত হয় দলটি। ওই কনসাটের্ আরও ছিল জুনুন এবং সিল্ক রুটিন ব্যান্ড। মাইলস তাদের সঙ্গে সেই প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। মাইলস তাদের ৪০ বছরের পথচলায় প্রায় চারশত কনসাটর্ করেছে এবং চ্যারিটি শো করেছে অনেক। মাইলস তাদের পঞ্চম অ্যালবাম ‘প্রত্যয়’ বের করার পর দু মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা ভ্রমণে যায়। ১৯৯৭ সালের দিকে তারা নিউ ইয়কর্ (ঘবি ণড়ৎশ) ডালাস (উধষষধং) ওকলাহোমা(ঙশষধযড়সধ) শিকাগো (ঈযরপধমড়) এবং ফ্লোরিডায় (ঋষড়ৎরফধ) ২,৫০০ হাজার দশের্কর সামনে কনসাটর্ করে। মাইলসের গান ইন্ডিয়ান এফএম রেডিওতে বাজানো হতো। পরবতীের্ত বিবিসি মাইলসের একাধিক সাক্ষাৎকার নেয়। এবং তাদের একাধিক সংগীত পরিবেশন করে। লন্ডনের বাংলা সংবাদপত্র জনমত (ঔধহড়সড়ঃ) পত্রিকায় মাইলসের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ১৯৯৮ সালে মাইলস আবার কলকাতায় কনসাটর্ করে। তারা কিছু সংখ্যক মিউসিক ভিডিও বের করে, যা এমটিভিসহ আরও কিছু চ্যানেল এ প্রকাশিত হয়েছে। তাদের ‘মাইলস (ঠড়ষ.১)’ ‘বেস্ট অব মাইলস (ঠড়ষ.২)’ বের হওয়ার পর তারা বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বিস্ময়কর চল্লিশ বছর...

সাফলের খাতায় একসময় কালিমার দাগ পড়ে দ্ব›েদ্বর মাধ্যমে। সফলতার দীঘর্ পথ পাড়ি দিয়ে ২০১০ সালে ব্যান্ড ছেড়ে দেয়ার প্রথম ঘোষণা দেন শাফিন আহমেদ। যদিও অল্প সময়ের ব্যবধানে তারা ফের একসঙ্গে মঞ্চ মাতান গিটার হাতে পাশাপাশি দঁাড়িয়ে। এরপর আবারও মাইলস-এ ভাঙন দেখা দেয় ২০১৭ সালে। আবারও ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে দশর্ক মাতিয়ে চলছেন মাইলস। আর কদিন পর মাইলসের ৪০ বছর পূণর্ হবে। চার দশকের এই পথচলাকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় এই ব্যান্ড দল। এ নিয়ে শাফিন বলেন, দেশের কোনো ব্যান্ড একই লাইনআপ নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দেয়নি। যে দুটি ব্যান্ডের ৪০ বছর পূণর্ হয়েছে তাদের লাইনআপেও অনেক পরিবতর্ন চোখে পড়বে। যদিও ব্যান্ড গঠনের দু-তিন বছর পর আমি, হামিন ও মানাম মাইলসে যোগ দিলেও তখন থেকে একজোট হয়েই কাজ করে যাচ্ছি। দলের বাকি দুই সদস্য মাইলসের সঙ্গে আছে বিশ বছরের বেশি সময় ধরে। যে জন্য আমাদের সবার কাছেই মাইলসের চার দশকের এই যাত্রা বিস্ময়কর। তাই ব্যান্ডের ৪০ বছর পূতিের্ক স্মরণীয় করে রাখতে দেশে ও বিদেশে বণার্ঢ্য সব আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।

শাফিন আহমেদ বলেন, আগামী বছর অথার্ৎ ২০১৯ সালে আমরা নানা আয়োজনের মাধ্যমে চার দশক উদ্যাপন করব। যেহেতু নতুন বছর শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি তাই এখনই এ নিয়ে কোন পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করছি না। সময় হলে তা ঘটা করেই জানান হবে।

লাইন আপ

মাইলসের বিখ্যাত গানের তালিকায় রয়েছে ‘চঁাদ তারা সূযর্’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘জাদু’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম’, ‘কতকাল খুঁজবো তোমায়’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘পিয়াসী মন’সহ অসংখ্য গাস, যা মানুষেন মুখে মুখে এখনো শোনা যায়।

মাইলসের বতর্মান সদস্যরা-শাফিন আহমেদ (বেজ গিটার, কণ্ঠ), হামিন আহমেদ (ডাক নাম টুকন) (গিটার, কণ্ঠ), মানাম আহমেদ (কি-বোডর্), ইকবাল আসিফ জুয়েল (গিটার), সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূযর্ (ড্রামস)। অতীতে যারা সদস্য ছিলেনÑ প্রয়াত হ্যাপি আখন্দ - কি-বোডর্, কণ্ঠ, রবিন - কি-বোডর্, কণ্ঠ, ফরিদ রশিদ - বেজ গিটার, কণ্ঠ, ল্যারি বাম্বি - গিটার, ইস্তিয়াক- গিটার ও কামাল মাইনুদ্দিন - ড্রামস। এক সময়ের আরও যারা ছিলেন তাদের মধ্যেÑ কাইয়ুম - বেজ গিটার, মিল্টন - ড্রামস, শহিদুল হুদা - ড্রামস, মাহাবুব রশিদ Ñ ড্রামস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20332 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1