সাদামাটা, নরম-কোমল. ছোট-ছোট চুলের অন্যরকম এক মুখশ্রী। কেউ বলেন আবেদনময়ী, কেউ বলেন, পাশের ঠিক সেই মেয়েটি আবার কেউ বা বলেনÑ দামি অভিনেত্রী। বলা হচ্ছে হলিউডের দ্যুতিময় অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসনের কথা। এক জীবনে কত রকম বেশেই না পদার্য় হাজির হতে হয়েছে তাকে। অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসন সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যিনি এমনসব অনন্য কিছু চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। নিজের অভিনয় দক্ষতা এবং রূপ সৌন্দযের্র মাধুযর্ দিয়ে ইতোমধ্যে জয় করে নিয়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি দশর্ক হৃদয়। বিভিন্ন জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে আবেদনময়ী অভিনেত্রী হিসেবে প্রায়ই ঘোষণা করা হয় তার নাম। যদিও আবেদনময়ী বিষয়টাকে মোটেও মানতে রাজি নন তিনি। বরং আবেদনময়ীর এই জরিপকেই অপছন্দ তার। আবার অনেক সময় নিজেকে নারী ভাবতেও আপত্তি করতে দেখা গেছে তাকে। বাস্তবে একজন খ্যাতিমান ম্যাসাজ পালাের্রর মালিক ছিলেন, যিনি নারী হয়েও ছোট চুলে, পুরুষের পোশাকে, পুরুষের বেশে সত্তর ও আশির দশকে পালাের্রর ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। এও শোনা যায়, মিস জিল নামের এ নারী একটা সময় লিঙ্গ পরিবতর্ন করে পুরুষও হয়েছিলেন। নিজেকে তিনি ‘মিস্টার জিল’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত করে তুলেছিলেন।

থাক এসব পুরনো কথা। নতুন খবর হলো বিশ্বের বাঘা বাঘা অভিনেত্রীদের পেছনে ফেলে আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দামি অভিনেত্রী হিসেবে নিবাির্চত হয়েছেন স্কারলেট জোহানসন। সম্প্রতি প্রতিবছরের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বিজনেস ম্যাগাজিন ‘ফোবর্স’ উপাজের্নর ভিত্তিতে বিশ্বের শীষর্ অভিনেত্রীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আয় করা তারকাদের তালিকা প্রকাশ করেছে ফোবর্স। গতবারের তুলনায় তালিকায় এবার বেশ কিছু পরিবতর্ন দেখা গেছে। ফোবর্স ছাড়াও সম্প্রতি আরও একটি ম্যাগাজিন ২০১৮ সালের বিশ্বের শীষর্ আয়কারী ৫ জন অভিনেত্রীর নাম প্রকাশ করেছে। সেখানে ৪০ দশমিক ৫ মিলিয়ন মাকির্ন ডলার আয় করে ২০১৮ সালে বিশ্বের সবোর্চ্চ আয় করা শীষর্ ৫ অভিনেত্রীর তালিকায় শীষের্ রয়েছেন স্কারলেট জোহানসন। ‘মাভের্ল’ সিনেমাটিক ইউনিভাসের্ নাতাশা রোমানফ বা বø্যাক উইডো চরিত্রের অভিনয় করে এ বছর বাজিমাত করেছেন স্কারলেট জোহানসন। ২০১৭ সালের তুলনায় তার আয় বেড়েছে চার গুণ। ভক্তদের জন্য সুখবর হলো ২০১৯ অ্যাভেঞ্জারসের চতুথর্ কিস্তিতে আবারও অনস্ক্রিনে দেখা যাবে তাকে। এখন পযর্ন্ত অধর্শত চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও তার মতে তার শ্রেষ্ঠ অজর্ন, ‘দ্য হসর্ হুইস্পারার’ (১৯৯৮)। মডেলিং ও অভিনেত্রী পরিচয়ের পাশাপাশি গায়িকা হিসেবেও খ্যাতি অজর্ন করেছেন স্কারলেট। ‘বিফোর মাই টাইম’ গানটির জন্য তিনি ২০১৩ সালে অস্কারে মনোনীত হন। এক কন্যাসন্তানের জননী স্কারলেট জোহানসনের নিট সম্পত্তির পরিমাণ ১৪০ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া ২০০৭ সালে প্লেবয় ম্যাগাজিন জরিপে শ্রেষ্ঠ অবেদনময়ী অভিনেত্রীর খেতাব পান।

স্কারলেট জোহানসনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন আরেক নামকরা অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। অভিনয়ের চেয়ে জাতিসংঘের শরণাথীর্ সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মানবিক কাজে বেশি সময় দিচ্ছেন তিনি। তারপরও আয়ের দিক থেকে তিনি রয়েছেন শীষের্দর তালিকায় দ্বিতীয়তে। সিনেমায় মেজর রোলে অভিনয়ের জন্য তার ডিমান্ড ডবল-ডিজিট মিলিয়ন মাকির্ন ডলার। ২০১৮ সালে তার আয় ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলার। এ আয়ের বড় অংশটি এসেছে ডাকর্-ফ্যান্টাসি ঘরানার ‘ম্যালেফিসেন্ট টু’র পারিশ্রমিক থেকে। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তিনবার গোল্ডেন গোব পুরস্কার, দুবার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার এবং একবার একাডেমি পুরস্কার পান। একাধিকবার তিনি ‘বিশ্বের সেরা সুন্দরী’ নিবাির্চত হয়েছেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার এ অভিনেত্রী ধূসর চোখ। ১৯৮২ সালে ‘লুকিন টু গেট আউট’ চলচ্চিত্রে শিশু চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্র জগতে আবিভার্ব হয়। পেশাদার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ‘সাইবগর্ ২’ (১৯৯৩)-এ। জোলির সন্তানসন্ততির সংখ্যা ৬; সম্পদের পরিমাণ ১৬০ মিলিয়ন ডলার।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন জেনিফার অ্যানিস্টন। সাবেক ‘ফ্রেন্ডস’ স্টার জেনিফার অ্যানিস্টনের ২০১৮ সালের আয়ের অনেকটা এসেছে এমিরেটস এয়ারলাইনস, স্মাটর্ওয়াটার ও এভিনোর প্রচার থেকে। ১৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে তিনি রয়েছেন সবোর্চ্চ আয় করা শীষর্ ১০ অভিনেত্রীর মধ্যে তৃতীয়তে। তবে আগামী বছর তার আয় বাড়বে আরও বেশি। রিজ উইদারস্পুনের সঙ্গে আসন্ন ‘অ্যাপল’ সিরিজের প্রতি পবের্র জন্য তিনি নিচ্ছেন প্রায় ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। বতর্মানে তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১৫০ মিলিয়ন ডলার। বিখ্যাত মাকির্ন টিভি ধারাবাহিকে ফ্রেন্ডসের জনপ্রিয় ‘যাের্চল গ্রিন’ চরিত্রে অভিনয় করে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান। এ চরিত্রের জন্য তিনি একবার করে অ্যামি, গোল্ডেন গেøাব ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার পান। টেলিভিশন সিরিজের পাশাপাশি সিনেমারও দারুণ জনপ্রিয় জেনিফার অ্যানিস্টন। তিনি হলিউডের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূণর্ অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই কমেডি চলচ্চিত্র।

কাজলরেখা'র মন্দিরা

তালিকায় চতুথর্ স্থানে আছে জেনিফার লরেন্সের নাম। অস্কারজয়ী ‘দ্য হাঙ্গার গেমস’ অভিনেত্রীর সাম্প্রতিক মুভি ‘মাদার!’ ও ‘রেড স্প্যারো’ বক্স অফিসে প্রত্যাশিত ব্যবসা না করতে পারলেও আসন্ন ‘এক্স-মেন’ সিরিজের মুভি এবং ইউরোপিয়ান ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘ক্রিশ্চিয়ান ডিওর’ (সারাবিশ্বে ‘ডিওর’ নামেই পরিচিত) তার সঙ্গে চুক্তি তাকে নিয়ে এসেছে সবোর্চ্চ আয় করা শীষর্ ১০ অভিনেত্রীর মধ্যে চতুথের্ত। ২০১৮ সালে তার আয় ছিল ১৮ মিলিয়ন ডলার। বতর্মানে তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১৩০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে জেনিফার লরেন্স সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ছিলেন। তার প্রথম উল্লেখযোগ্য অভিনয় ছিল ‘দ্য বিং ইংভাল শো’ নামের একটি সিটকমে। অভিনয়ের জন্য তিনি দশর্কজনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি অস্কার পুরস্কার লাভ করেন। অস্কারে দ্বিতীয় সবর্কনিষ্ঠ সেরা অভিনেত্রীর খেতাব লাভ করেন তিনি। তার উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি।

পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন খ্যাতিমান অভিনেত্রী রিজ উইদারস্পুন। সাম্প্রতিক মুক্তি পাওয়া ‘অ্যা রিংকেল ইন টাইম’ বক্স অফিসে হতাশাজনক ব্যবসা করলেও রিজ উইদারস্পুনের আয় পুষিয়ে গেছে ‘বিগ লিটল লাই সিজন দুই’-এর পবর্প্রতি ১ মিলিয়ন ডলার বেতন থেকে। ২০১৮ সালে তার আয় ১৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। শিশুশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে এখন ফোবের্সর সবোর্চ্চ আয় করা শীষর্ ১০ অভিনেত্রীর মধ্যে রয়েছেন পঞ্চমে। তিন সন্তানের জননী রিজ উইদারস্পুনের সম্পদের নিট পরিমাণ ১৫০ মিলিয়ন ডলার। ৫ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার এ অভিনেত্রী ১৯৯৮ সালে তিনি তিনটি খ্যাতনামা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেগুলো হচ্ছেÑ ওভারনাইট ডেলিভারি, পিজেন্টভিল ও টোয়াইলাইট। পরবতীর্ বছরে সমালোচকভ‚ষিত চলচ্চিত্র ‘ইলেকশন’-এ তাকে দেখা যায়। ২০০২ সালে তার অভিনীত ‘সুইট হোম আলাবামা’ এখন পযর্ন্ত ক্যারিয়ারে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি।