ব্যথর্তা দিয়েই শুরু হয় চলচ্চিত্রের ২০১৮ সাল। বছরটি শুরু হয় সরকারি অনুদানের ছবি ‘পুত্র’ দিয়ে। ফেরদৌস এবং জয়া আহসান অভিনীত এ ছবিটি মুক্তি পায় ৫ জানুয়ারি। ছবিটি নিয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এমনকি তথ্যমন্ত্রী নিজেও সবাইকে ছবিটি দেখার আহŸান জানান। কিন্তু তারপরেও ফ্লপের কাতারে পড়ে ছবিটি। এরপর বেশ ওইসময়ে যতগুলো ছবি মুক্তি পেয়েছে তার সবগুলোই ব্যবসায়িকভাবে ব্যথর্ হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ‘দেমাগ’। এই ছবিতে না ছিল কোনো ভালো নিমার্ণ আর না ছিল কোনো ভালো গ্রেডের অভিনয় শিল্পী। একই সময়ে মুক্তি পায় দেশীয় ছবির হাডর্থ্রব নায়িকা শাবনূর অভিনীত ‘পাগল মানুষ’ চলচ্চিত্রটি। এই ছবির শুটিং চলাকালীন পরিচালক মারা যাওয়ায় বাকি দায়িত্ব পরে পরিচালক বদিউল আলম খোকনের ওপর। যদিও তিনি শেষ পযর্ন্ত নায়িকা শাবনূরকে নিয়ে কোনো কিছু দেখাতে পারেননি। যা কিনা এই ছবিই চিত্রনায়িকা শাবনূরের সব চেয়ে বাজে। এরপর মুক্তি পাওয়া দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনা ছবি ‘হৈমন্তি’ আর ‘জিও পাগলা’ও মুখ থুবরে পড়ে। এরপর একে একে মুক্তি পায় চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ ও চিত্রনায়িকা তাসনিয়ার ‘ভালো থেকো’, শাকিব খানের ‘আমি নেতা হব’। ছবিটির পোস্টার আর শাকিব খানের নতুন লুকে দশর্ক হলে হুমড়ি খেয়ে ঢুকলেও ছবির মান ছিল খুবই বাজে বলে মন্তব্য করেছেন দশর্ক। ‘নূরজাহান’, ‘রাঙা মন’, ‘পাষাণ’, ‘স্বপ্নজাল’ ছবিগুলোও দশর্ক টানতে ব্যথর্ হয়। যদিও চিত্রনায়িকা পরীমনির ক্যারিয়ারে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের স্বপ্নজাল ছবিটি ছিল সব থেকে বড় টানির্ং পয়েন্ট। এ ছাড়া চিত্রনায়ক বাপ্পী ও চিত্রনায়িকা মাহীয়া মাহির ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ ছবিটি দশর্কদের কিছুটা হলমুখী করলে এই ছবির নায়ক-নায়িকার কিছু দ্ব›েদ্ব প্রযোজকের কিছুটা লোকসান গুনতে হয়েছিল। এরপর মুক্তি পায় চিত্রনায়ক আলমগীরের পরিচালনায় ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিটি। এই ছবির অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ আর কলকাতার ঋতুপণার্ সেন। তবে ছবিটি তেমন কোনো ব্যবসা করতে পারেনি। একই সঙ্গে মুক্তি পায় চিত্রনায়িকা ববির সায়েন্সফিকশন নিয়ে ‘বিজলী’ ছবিটি। যদিও তা কোনো দশর্ক সাড়া পায়নি। এরপর মুক্তি পায় ‘আলতা বানু’, ‘প্রেমের কেন ফঁাসি’ ও ‘ ধূসর কুয়াশা’ ছবিগুলো। এগুলো ছিল এ বছরের সবচেয়ে সেরা ফ্লপ ছবি।
তবে বরাবারের মতো এবারও ‘নাম্বার ওয়ান পজিশন’ ধরে রেখেছেন শাকিব খান। শেষমেষ এপার-ওপার বাংলা আর সাফটাচুক্তির ‘চালবাজ’ ছবি দিয়ে ব্যবসায়িক সিনেমার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন সেরা। তবে যৌথ প্রযোজনার ছবি শাকিব খানের ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিটিও বছরের ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ দুটি ছবি ছাড়াও এ বছর শাকিব অভিনীত ‘আমি নেতা হব’, ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়্যা’, ‘সুপারহিরো’, ‘পাঙ্কু জামাই’, ‘ক্যাপ্টেন খান’ ‘নাকাব’ সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে। ছবিগুলো গড়ে ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছে বলা চলে। ছবিগুলোতে শাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে আলোচনায় ছিলেন বুবলিও।
এবারের ঈদে ছোট পদার্র মোশারফ করিম ও সিয়াম আহমেদের ‘কমলা রকেট’ ও পোড়ামন টু’ ছবিগুলো। ‘কমলা রকেট’ তেমন কোনো ব্যবসা না করতে পারলেও মৌলিক গল্পের ছবি ‘পোড়ামন টু’ দেশীয় কোম্পানির স্পন্সর নিয়ে ব্যবসায়িকভাবে সাফল্য ছিল তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজের ঘরে। এরপর নতুন গেটাপে চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী ‘নায়ক’ নিয়ে এলেও গল্প আর নায়িকার কাছে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দশর্ক আর বাপ্পী ভক্তরা। অন্যদিকে চিত্রনায়ক সাইমন সাদিকের দুটি চলচ্চিত্র ‘জান্নাত’ ও ‘মাতাল’ মুক্তি পেলেও তাতে কোনো সাড়া পাননি তিনি।
এদিকে ব্যবসায়িকভাবে সফলতার পাশাপাশি বছরের সেরা আলোচিত ছবি বিবেচনা করা হচ্ছে জয়া আহসান প্রযোজিত ‘দেবী’ ছবিটি। হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের ‘দেবী’ উপন্যাস অবলম্বনে সরকারি অনুদানে নিমির্ত এই ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন অ ন ম বিশ্বাস। ‘দেবী’ ছবিতে অভিনয় করেছেনÑ মিসির আলি চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, রানু চরিত্রে জয়া আহসান, নিলু চরিত্রে শবনম ফারিয়া, আনিস চরিত্রে অনিমেষ আইচ, সাবেত চরিত্রে ইরেশ যাকের। অভিনেত্রী হিসেবেও বছর জুড়ে বেশ আলোকিত ছিলেন জয়া। দেবীর পর মুক্তি পাওয়া জাজ মাল্টিমিডিয়ার বহুল আলোচিত ছবি ‘দহন’। ধারণা ছিল, ছবিটি হয়তো বছরের সেরা ছবির তালিকায় নাম লেখাবে। কিন্তু যতটা গজেের্ছ, ততটা বষেির্ন। প্রত্যশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারেনি সিয়াম-পূজা চেরী অভিনীত এই ছবিটি। সবের্শষ গত ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ফেরদৌস ও মৌসুমী অভিনীত ‘পোস্ট মাস্টার ৭১’ ছবিটিও দশর্ক টানতে ব্যথর্ হয়।
তবে অনেকেই বলেছেন, এ বছরে নানা রকমের ঝামেলা আর এফডিসিতে সেন্ট্রাল সাভার্র বসানো নিয়ে তেমন ভালো কাটেনি চলচ্চিত্রের বছর। আগামী বছরের জন্য সরকারের দেয়া দুইশতাধিক প্রজেক্টর মেশিন আর সব হল ডিজিটাল করার দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।