একেই বলে ভাগ্য। কখনো কখনো মানুষ চায় এক, হয় আরেক। ভাগ্য তাকে নিয়ে যায় অচেনা এক গন্তব্যে। তবে ভাগ্যের সেই পাওয়াটাকে গুরুত্ব দিলে সফলতা শতভাগ। যেমনটি হয়েছে ছোটপদার্র বতর্মান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর বেলায়। অনেকের মতো অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে মিডিয়ার পথে পা বাড়াননি। তামাশার ছলে গুরুত্বহীন কয়েকটি ছবিই তার জীবন বদলে দেয়। বাবা চাইতেন ছেলে বড় হয়ে আমির্ অফিসার হবে। অন্যদিকে নিজের ইচ্ছে ছিল পাইলট হয়ে আকাশে উড়ে বেড়ানোর। কিšুÍ শেষমেশ কোনোটাই হলো না। অনেকটা নিজের অজান্তেই হতে হলো অভিনেতা।
নিশো বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি অভিনেতা হব। আজিমপুর স্টাফ কোয়াটাের্র থাকাবস্থায় এক আপা আমাকে বারবার বলতেন তুই দেখতে শুনতে ভালো; মিডিয়ায় কাজ করিস না ক্যান। তার কথায় আমি কোনো পাত্তাই দিতাম না। ২০০০ সালের দিকে, একবার তার কথায় কিছু ফটোশুট করতে বাধ্য হই। সেই ছবি তোলাই যে আমার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেবে তা ভাবিনি। সেই ছবিগুলো অনেকের কাছে ভালো লাগে। সেই থেকে শুরু। তারপর অনেক ফটোশুট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মডেল হওয়া ও র্যাম্পে কাজ করার সুযোগ হয়।’
নিশো তখনো স্বপ্ন দেখেননি পেশাদার অভিনেতা হওয়ার। পড়ালেখার পাশাপাশি চলছিল তার এসব টুকটাক কাজ। এরপর ২০০৫ সালে ডাক পড়ে নাটকে অভিনয়ের। গাজী রাকায়াতের ‘ঘর ছাড়া’ ধারাবাহিক নাটকে প্রথম কাজ করেন তিনি। এটি বাংলাভিশনে প্রচারিত হয়েছিল। নিশো বলেন, ‘ঘর ছাড়া’ নাটকের আগে আমি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। অমিতাভ রেজার ‘মেরিল পাউডার’ ছিল প্রথম বিজ্ঞাপন। এ পযর্ন্ত ১৫-১৬টি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছি। সব কটি থেকেই দশর্কদের সাড়া পেয়েছি। ‘ঘর ছাড়া’ নাটক তাকে সত্যিই ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে আসে। এ নাটকে অভিনয় করে নাটক পাড়ায় সবার নজরে আসেন তিনি। অভিনয় করতে থাকেন একের পর এক নাটকে। ধীরে ধীরে তার ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। বছরের পর বছর পেরিয়ে অভিনয়ের এক যুগেরও বেশি সময় পার করেছেন নিশো। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে বারবার ভাঙতে চেয়েছেন। ফলে তার অভিনয় দশের্কর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই প্রচলিত নায়ক হতে চাই না। তাই বিভিন্ন ধারার গল্পে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। গতানুগতিক প্রেমের গল্পের নাটকের বাইরে ভিন্ন ধারার গল্পেও কাজ করি। এখন নায়কের চরিত্রে অভিনয় করছি কিন্তু ১০ বছর পর আমাকে আর এই নায়কের চরিত্রে দেখা সম্ভব হবে না। তখন বাবা কিংবা এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত একজন অভিনয় শিল্পী হয়ে কাজ করে যেতে চাই।’
ভাসের্টাইল এই অভিনেতার ব্যস্ততার ফিরিস্তি অনেক। খÐ নাটকের পাশাপাশি অভিনয় করছেন ধারাবাহিক নাটকেও। হিমেল আশরাফের ‘এক লক্ষ লাইক’, ইমরাউল রাফাতের ‘সিনেম্যাটিক’, সুমন আনোয়ারের ‘সুখী মীরগঞ্জ’ ও ‘ইডিয়ট’, সাজ্জাদ সুমনের ‘ছলে বলে কৌশলে’, আরবি প্রিতমের ‘সেমি কপোের্রট’ শীষর্ক ধারাবাহিকগুলোতে কাজ করছেন। গেল বছরে কতগুলো নাটকে কাজ করা হয়েছে তা হলফ করে বলতে না পারলেও শতকের ঘর পার হয়েছে অনেক আগেই।
এ সময়ের নাটকগুলোর মান কেমন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেকেই হতাশার কথা বলেন। সিনিয়রদের কেউ কেউ বলেন, ‘আগের মতো এখন আর নাটক হচ্ছে না। আমি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। আগে আমাদের ফ্যামিলি ড্রামা বেশি নিমার্ণ হতো। এখন এটির বাইরে নানা রকম গল্পের নাটক নিমার্ণ হচ্ছে। টেকনিক্যালিও অনেক উন্নত হয়েছে। নতুন অনেক নিমার্তাই ভালো কাজ করছেন। আগামীতে আমাদের নাটকের মান আরো ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ দীঘর্ সময় ধরে টিভি পদার্য় দাপিয়ে বেড়ালেও এই অভিনেতাকে এখনো দেখা যায়নি কোনো চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রের প্রস্তাব পাননি তা কিন্তু নয়। ব্যাটে-বলে না মেলায় ডজনখানেক চলচ্চিত্রের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। নিশো বলেন, ‘চলচ্চিত্রের চরিত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে দু/এক মাস সময় চাইলে পরিচালক ও প্রযোজক তাতে রাজি হন না। তারা দ্রæত শুটিংয়ে যেতে চান, যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। নকল নয়, মৌলিক গল্পের ছবিতে কাজ করতে চাই। তবে পেশাদার মনোভাব নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা মানে ঝুঁকি নেয়া। বছরে একটি বা দুটি কাজ করে টিকে থাকা খুব কঠিন। নানা কারণেই চলচ্চিত্রের অনেকেই এখন নাটকে কাজ করছেন বাধ্য হয়ে। আমাকে পাশাপাশি নাটকও চালিয়ে যেতে হবে। এটা আমি করতে চাই না। আবার টিকে থাকার জন্য যেসব সিনেমায় অভিনয় করতে হবে, সেগুলোও আমি ধারণ করি না। তারপরও সিনেমায় অভিনয় করা আমার আগ্রহ আছে। চলচ্চিত্রে যে কাজটাই করি তা যেন ভালো হয়।’
চলচ্চিত্রে নিজেকে কিভাবে দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছোট পদার্র অভিনেতাকে দশর্ক কেন বড় পদার্য় দেখবে? যদি সেটিতে নতুন কিছু অথবা চমক না থাকে। সত্যি বলতে, আমি নিজেকে বড় পদার্য় ভাঙতে চাই। কারণ, আমি কখনো একটি নিদির্ষ্ট সীমানার মধ্যে থাকতে চাই না।’
নিশো অভিনয়ে আইডল হিসেবে মনে করেন প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীকে। এ নিয়ে তিনি বলেন, হুমায়ুন ফরিদীর অভিনয় আমার হৃদয় ছঁুয়ে যায়। আমাকে অভিনয়ে প্রেরণা জোগায়, উৎসাহিত করে।