শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদনের খেঁাজে ক্লান্ত দশর্ক

নতুনধারা
  ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সালেহীন বাবু

প্রথমে রেডিও। তারপর এলো টেলিভিশন। যুক্ত হলো বিনোদনের নানা আয়োজন। কয়েক দশকের পালাবদলে টেলিভিশনের জন্যই নিমির্ত হতে লাগল নাটক। বাংলাদেশে এক সময় নাটক মানেই ছিল বিটিভির অন্ধকার সেটে শুটিং, যেখানে দিন-রাতকে আলাদা করার উপায় ছিল না, একই সেটে হতো অনেক নাটকের দৃশ্যায়ন। তবুও মানুষ আগ্রহ নিয়ে থাকত প্রিয় নাটকের জন্য। কিন্তু কেন? কারণ সেই নাটকগুলোর গল্প দশের্কর মন ছুঁয়ে যেত। দশর্ক নাটকের মাঝে আবিষ্কার করতেন নিজেদের জীবনকে। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বইয়ের দশক পযর্ন্ত ভারতের দশর্ক বাংলাদেশের নাটক দেখার জন্য অ্যান্টেনা তাক করে থাকতেন। আমাদের নাটক সমৃদ্ধ করার জন্য বানানো হলো প্যাকেজ নাটক। এরপর নাটকের বিভিন্ন পালাবদল হলেও দশর্ক এখন টিভি নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নানা কারণে আজ দশর্ক টিভির বিনোদন নাটক নিয়ে আর উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। তাই বলে যে তারা নাটক দেখেন না, তা কিন্তু নয়। সবাই এখন নাটক দেখেন ইউটিউবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলো তাদের বৈশিষ্ট্য, কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত নাটকগুলোর জনপ্রিয়তা যেন দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

কিন্তু কেন, টিভি থেকে মুখ ফিরয়ে নিচ্ছেন দশর্ক! খেঁাজখবর নিয়ে পাওয়া গেল অনেকগুলো কারণ। দশর্ক যেভাবে প্রত্যাশা করেন নাটকগুলো সেই প্রত্যাশা পূরণের ধারের কাছেও যায় না। বরং বতর্মান টিভি নাটকের শিল্পীদের বাচনভঙ্গি ও ভাষার বিকৃতি দেখে উল্টো বিরক্তি চলে আসে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক দশর্ক। অভিযোগের স্বরে তারা বলেন, কোন চরিত্রে কিভাবে কথা বলতে হবে এটাও অভিনয়ের একটি বড় শিক্ষা। অথচ নতুনরা অনেকেই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে না। ভাষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার নামে যাচ্ছে, তাই ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ এক সময় নাটকের ভাষার প্রতি সবার আগে জোর দেয়া হতো।

বেশিরভাগ দশের্কর বক্তব্য হচ্ছে, নাটকের ভালো গল্প নেই। একই ঘরানার গল্প একই ধরনের ভঁাড়ামি দেখে দেখে ক্লান্ত তারা। নাটকের গল্প যদি ভালো না হয়। তাহলে সে নাটক প্রথমেই দশর্ক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। নাটকের অনেক পরিচালক আছেন যারা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে নামি তারকাদের দিয়ে অভিনয় করান। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের ভাইয়ের কথা মনে আছে নিশ্চয়। বাকের ভাইয়ের যখন ফঁাসি হয় তখন পুরো জাতি কেঁদেছিল। সেখানে কোনো গøামার ছিল না।

নাটকের চলমান পরিবেশ নিয়ে দশের্কর পাশাপাশি কথা হয় চলমান সময়ের বেশ কয়েকজন ব্যস্ত নিমার্তা ও অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে। পরিচালক মাসুদ সেজান বলেন, নাটকের মান নিয়ে দশর্করা অভিযোগ করছেন। মানহীন নাটকগুলো তারা খুব সহজেই এড়িয়ে যেতে পারছেন ইউটিউবে। এ ব্যাপারটি নিভর্র করছে চ্যানেল, নিমার্তা ও অভিনয়শিল্পীর ওপর। চ্যানেল যদি মানহীন নাটক না প্রচার করে, তাহলে নিমার্তা সেটি নিমাের্ণর চেষ্টা করবেন না। ইন্টারনেটের কারণে আমরা সহজেই মান যাচাই করতে পারছি। আমরা টিভি দশের্কর জন্যই নাটক নিমার্ণ করি। সেটা যদি তাদের মনঃপূত না হয় তাহলে ব্যথর্তা আমাদেরই।

এ বিষয়ে বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান শামীম শাহেদ বলেন, আমাদের দেশে অত্যধিক চ্যানেল প্রচারের জন্য অনুমতি পেয়েছে। ফলে প্রতিটি চ্যানেল সচল রাখার জন্য অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হচ্ছে। কারণ বিজ্ঞাপন ছাড়া আয়ের কোনো উৎস নেই। এখন ইউটিউবে মানুষ নাটক দেখছেÑ এটি অনেক আনন্দের বিষয়। কারণ এখানে নাটকগুলো থেকে যায়। এ জন্য ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সাদরে গ্রহণযোগ্য। টেলিভিশন মিডিয়ার দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবেÑ চ্যানেলগুলো যেন নিজস্ব আয়ে চলতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এত বড় সেক্টরে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাগে।

তিনি আরও বলেন, টিভি নাটকে অনেক শিল্পীরাই যথাসময়ে পারিশ্রমিক পান না। প্রযোজকরা টাকা নিয়ে নানা টালবাহানা করে। এমনকি শিল্পীদের পারিশ্রমিকের পরিমাণও কমে গেছে। সে কারণে নাটকের অনেক শিল্পীরাই এখন হতাশ। সুযোগ পেলেও অনেক তারকারা টিভি নাটক নিয়ে তেমন একটা উৎসাহ দেখান না।

এ বিষয়ে সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, আজ একটি নতুন কাজ করতে গেলে ভয় পাই। কারণ লগ্নিকারকরা আমাদের যে পরিমাণ টাকা দেন তা দিয়ে ভালো একটি নাটক তৈরি করা কঠিন হয়ে যায়। তার মধ্যে আবার টিভি চ্যানেলগুলো সময়মতো টাকা দেয় না। আমি মনে করি, টিভি চ্যানেলগুলোর আমাদের ওপর আরও নজর দেয়া দরকার। এত প্রতিক‚লতা পাড়ি দিয়ে একটা নাটক দশের্কর কাছে এসে পৌঁছায়। তবে নাটক দেখার সেই ‘ক্রেজি দশর্ক’ কমে গেছে ইদানীং। এসব অভিযোগ নীরবে হজম করে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই নাট্যকার আর পরিচালকদের সামনে।

তৌকীর আহমেদ বলেন, গল্প, লোকেশনে ভিন্নতা, শিল্পীরা মন দিয়ে কাজ করছেন নাÑ এসব কারণে টিভি নাটক থেকে দশর্করা সরে যাচ্ছেন। নাটকের এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বাজেট স্বল্পতার সমস্যাকে উপড়ে ফেলতে হবে।

এদিকে ইউটিউবে নাটক দেখা অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এখানে কোনো বিজ্ঞাপন ভীতি থাকে না। সময় অপচয়ের কোনো বিষয় থাকে না। আরও সুবিধা হলো যখন ইচ্ছে তখন নাটকটি দেখা যায়। তারকারাও অভিনয় করে যারপর নেই খুশি। কারণ এসব নাটকে অভিনয় করলে তারকাদের টাকার কোনো ভেজাল থাকে না। যখন একটি নাটক দশর্কপ্রিয়তা পায় তখন ভিউয়াসের্র সংখ্যা বেড়ে যায় । এত করে সেই তারকাও জনপ্রিয়তা পায়।

এ বিষয়ে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী বলেন, এটা খুবই ভালো, অনলাইনে প্রডাকশন প্রদশর্নী নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। কারণ এখানে নতুন কিছু দেখানোর সুযোগ থাকে। যেটা চ্যানেলে থাকে না। ফলে চ্যানেল বুঝতে শিখবে, যেন তেন প্রডাকশন দেখিয়ে এখন আর পার পাওয়া যায় না।

বিদেশি চ্যানেল, বিদেশি সিরিয়াল সবের্শষ ইউটিউবের কল্যাণে দেশি টিভি নাটক আস্তে আস্তে ডুবতে বসেছে। এ বিষয় থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পরিচালকদের বাণিজ্যিক চিন্তা বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও জরুরি। সেই সঙ্গে সৃজনশীল মানুষকে যুক্ত করতে হবে এই পেশায়। তবেই টিভি নাটক দশের্কর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা সবার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33630 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1