শীতের মৌনতা ভেঙে বাতাসে লেগেছে বসন্তের দোলা। দিকে দিকে রঙিন ফুলের সমারোহ আর দখিনের বাতাসই বলে দিচ্ছেÑ বসন্ত এসেছে। বসন্ত ফুলের উচ্ছ¡াসে হাসছে আকাশ, কঁাপছে বাতাস, দুলছে আম্রমুকুল। পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে নেমেছে আগুন ঝরা উচ্ছলতার ঢল। ঋতুরাজ বসন্ত বাঙালি আর বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নিয়ে আসে প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন। আর এমনই দিনে বাড়তি এক টুকরো বিনোদন দিতে আসছে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ নামের একটি ভিন্নধারার চলচ্চিত্র। আগামীকাল শুক্রবার ৫২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে চলচ্চিত্রটি। নাম ‘ফাগুন হাওয়ায়’ হলেও এর গল্প ও প্রেক্ষাপট ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের। আগামী ২১ ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে মুক্তি পাচ্ছে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটি। এরই মধ্যে চলচ্চিত্রটির গান, পোস্টার ও ট্রেলার প্রশংসা কুড়াচ্ছেন দশর্কমহলে। এমনকি খোদ সেন্সর বোডর্ও সাধুবাদ জানিয়েছেন এমন একটি চলচ্চিত্র উপহার দেয়ার জন্য। চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী হবে আগামীকাল ১৫ ফেব্রæয়ারি বিকেলে বঙ্গবভনে। প্রদশর্নীর উদ্বোধন শেষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলচ্চিত্রটি উপভোগ করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
‘ফাগুন হাওয়ায়’ চলচ্চিত্রে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও সিয়াম আহমেদ। শুটিংয়ের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রটি নিয়ে অন্যরকম এক প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আসছেন এই দুই অভিনয়শিল্পী। মুক্তির আগে প্রচারণা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পুরো চলচ্চিত্রেই তাদের গায়ে জড়ানো রয়েছে পঞ্চাশের দশকের পোশাক! সাজ সজ্জা দেখেও বোঝার উপায় নেই যে তারা এই সময়ে বাস করেন! শুধু পোশাকে নয়, তিশা-সিয়াম একাট্টা হয়েছেন বাংলা ভাষার মান রক্ষায়! বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে হাতে হাত রেখে রাজপথে নেমেছেন তারা। এমন ইঙ্গিতই ছবির প্রথম পোস্টারে স্পষ্ট। এই ছবিতে ৭০ বছর আগের এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন তিশা। একজন ভাষা সৈনিকের ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে।
‘ফাগুন হাওয়ায়’ নিয়ে তিশা বলেন, খুব ঘোরের মধ্যে আছি। একদিকে প্রচারণায় ব্যস্ত, অন্যদিকে টেনশন হচ্ছে দশর্করা এটাকে কিভাবে নেবে আর আমার অভিনয়কেও কতটা পছন্দ করবে! যদিও চেষ্টার কোনো ত্রæটি করিনি। যতটুকু সম্ভব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছি। এখানে আমার চরিত্রের নাম দীপ্তি। মেডিকেল পড়ুয়া এক সনাতন ধমার্বলম্বী মেয়ে সে। মেয়েটি খুব সাহসী। যে খুব ভালো গান করে। মফস্বল একটি শহরে থেকেও থিয়েটার করে। রুচিশীল জীবন যাপন করে। অন্যায়ে প্রতিবাদ করা তার সভাব জাত ব্যাপার। তিশা জানান, ‘এই ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্ ব্যাপারটি হলো ছবির সেট, প্রপস। যেমন এখানে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি ব্যাবহার করা হয়েছে। ৭০ বছর আগে এক কলেজ শিক্ষাথীর্র পোশাক কেমন ছিল, সে কীভাবে কথা বলতো, তার চলা ফেরার ধরন কেমন ছিল সেটা ফুটিয়ে তুলতে হচ্ছে। নিমার্তা চমৎকারভাবে আমাকে সেসব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। অনেক ভালো লাগছে অভিনয় করতে।’
তিশা আরও বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আমাদের সিনেমায় যারা জেনে কাজ করেন তাদের মধ্যে তৌকীর আহমেদ অন্যতম। আমার সৌভাগ্য যে, আমি কাজটি করেছি। আমার বিশ্বাস, এটি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ ছবির একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে আমি গবির্ত।’
সিয়াম প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘সিয়াম অনেক ভালো করছে। মনেই হচ্ছে না ওর সঙ্গে প্রথম অভিনয় করছি। আর বলিউডের অভিনেতা যশপাল শমার্ অভিনয় করছেন আমাদের সঙ্গে। অনেক ভালো লাগা কাজ করছে।’
সিয়াম বলেন, ‘আমি অভিনয় করতে ভালোবাসি। মনের তাগিদে অভিনয় করি, নিছক জীবিকার তাগিদে নয়। তাই নিজেকে নানাভাবে বাজিয়ে দেখতে চাই। আর তৌকীর ভাইয়ের সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ কে হারাতে চাইবে? যার কাছ থেকে কেবল শেখাই যায়। আর এই চলচ্চিত্রটির প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্ব পূণর্। হিরো-হিরোইন হলো ছবির গল্প, যার প্রেক্ষাপট আমাদের ভাষা আন্দোলন।’
উল্লেখ্য, টিটো রহমানের ছোট গল্প ‘বউ কথা কও’-এর অনুপ্রেরণায় নিমির্ত চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এখানে আরও অভিনয় করেছেন বলিউডের অভিনেতা যশপাল শমার্, আবুল হায়াৎ, আফরোজা বানু, ফারুক হোসেন, সাজু খাদেম, আজাদ সেতু, হাসান আহমেদ প্রমুখ।