শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিন্দু থেকে সিন্ধুর গল্প

অডিও, চলচ্চিত্র কিংবা বিজ্ঞাপন চিত্রের জিঙ্গেল- সবখানেই কনার আনাগোনা। এখনকার ৮৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনের ভয়েস কনার। শত ব্যস্ততার মাঝেও ক্লান্তির বিন্দুমাত্র ছাপ নেই কনার চোখেমুখে। খুব অল্প সময়েই তিনি তরুণ প্রজন্মের নয়নমণিতে পরিণত হয়েছেন...
তারার মেলা রিপোর্ট
  ১৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
দিলশাদ নাহার কনা

বিন্দু বিন্দু জলের মতই বিশাল এক সিন্ধু গড়ে তুলেছেন কনা। গুটি গুটি পায়ে একটু একটু করে খুব সাধারণ থেকে অসাধারণ এক গায়িকায় পরিণত হয়েছেন এই কণ্ঠশিল্পী। বলা চলে, বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ও ব্যস্ততম এক শিল্পীর নাম কনা। প্রতি নিয়তই তিনি নতুন নতুন গান নিয়ে শ্রোতাদের সামনে হাজির হচ্ছেন। অডিও, চলচ্চিত্র কিংবা বিজ্ঞাপন চিত্রের জিঙ্গেল- সবখানেই তার আনাগোনা। এখনকার ৮৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনের ভয়েস কনার। শত ব্যস্ততার মাঝেও ক্লান্তির বিন্দুমাত্র ছাপ নেই কনার চোখেমুখে। খুব অল্প সময়েই তিনি তরুণ প্রজন্মের নয়নমণিতে পরিণত হয়েছেন।

বড় বোন ও পরিবারের উৎসাহেই গানের ভুবনে পা রাখেন কনা। বড় বোন এক ওস্তাদের কাছে গান শিখতেন। বোনের হারমোনিয়াম ও তবলার সঙ্গেই খেলা করে সময় কাটাতেন কনা। আর সেই সুবাদেই আয়ত্ত করেন হারমোনিয়া ও তবলার সুর। কনা তখন ক্লাস ওয়ানে পড়েন। বয়স বেশি হলে ৫ কিংবা ৬ বছর। গান-বাজনার প্রতি এমন আকর্ষণ দেখে বাবা-মা তাকে শিশু একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় সঙ্গীতের পথে কনার অবিরাম ছুটে চলা। ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় কনার প্রথম একক অ্যালবাম 'জ্যামিতিক ভালোবাসা'। দু'বছর বিরতির পর বাজারে আসে 'ফুয়াদ ফিচারিং কনা' অ্যালবামটি। ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় তার তৃতীয় অ্যালবাম 'সিম্পলি কনা'।

এরই মধ্যে কনা দেশের অনেক জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভিনদেশি সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। বাংলার পাশাপাশি সিংহলি ভাষায়ও গান গেয়েছেন।

সব বয়সের সঙ্গেই তিনি নিজের কণ্ঠকে মিলিয়ে নিতে পারেন কনা। ছোটবেলায় আফজাল হোসেনের পরিচলনায় 'বেঙ্গল বিস্কুট'র বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছিলেন কনা। ছোট্ট মেয়ের কণ্ঠে 'কামড়ে কামড়ে মজা' কাথাটি সেই সময় বেশ প্রশংসিত হয়। মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রবির বিজ্ঞাপন চিত্র 'বাঁশ'-এ কণ্ঠ দিয়েও তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা তার কণ্ঠে দিয়েছেন জাদু, যা দিয়েই তিনি জয় করছেন সব বয়সের মানুষের মন।

নিজ কণ্ঠগুণে ক্রমশ ওপরের দিকে উঠছেন দিলশাদ নাহার কনা। এরই মধ্যে চলচ্চিত্র ও ভিডিও গানে নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে দিয়েছেন কনা। কণ্ঠগুণে ক্রমশ ওপরের দিকে উঠছেন দিলশাদ নাহার কনা। এরই মধ্যে চলচ্চিত্র ও ভিডিও গানে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। ইউটিউবের ভিউ বিচারে নারী কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন তিনি। সম্প্রতি দুই কোটি ভিউয়ের ঘর অতিক্রম করেছে তার গাওয়া 'ইচ্ছেগুলো' গানের ভিডিওটি। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে এটি উন্মুক্ত করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি। গত মাসে অডিও-ভিডিও বাজারে প্রথম দুই কোটি ভিউয়ের রেকর্ড গড়েন কনা। 'রেশমী চুড়ি' নামের সেই গানটি প্রকাশ পেয়েছিল তিন বছর আগে, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ। অন্যদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই শিল্পীর গাওয়া 'ইচ্ছেগুলো'ও একই রেকর্ড অর্জন করে। তবে সেটি মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে। সে হিসেবে 'ইচ্ছেগুলো' গানটির মাধ্যমে কনা নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন নিজেই। 'ইচ্ছেগুলো' গানটিতে কনার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের আকাশ সেন। শরীফ আলদীনের কথায় এটির সুর করেছেন নাজির মাহমুদ আর সংগীতায়োজন করেছেন মুশফিক লিটু। গানটির ভিডিওতে মডেল হয়েছেন মুম্বাইয়ের আজহার সাইনি ও বাংলাদেশের তাসনুভা তিশা। এতে আছে কনার উপস্থিতিও। ভিডিওটি নির্মাণ করেছেন একে পরাগ।

সব রেকর্ড ভেঙে দেয়ার অনুভূতি জানিয়ে কনা বলেন, 'অবশ্যই বিচিত্র এক অনুভূতি কাজ করছে আমার মনে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো মেয়ে শিল্পীর মিউজিক ভিডিওর সর্বোচ্চ ভিউয়ার্স হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য খুবই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার বিষয়। যখন ভিডিওটি করেছিলাম তখন মনে হয়েছিল ভালো কিছু একটা হবে। এত ভালো হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। শুধু বাংলাদেশে নয়, বাইরে অনেক দেশের দর্শক ভিডিওটি দেখেছে। এটা ভাবলেই আনন্দে মন ভরে যায়।'

\হরেশমীচুড়ি গান নিয়ে কনা বলেন, গানটির সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক কলকাতার আকাশ সেনের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয়। সে নিজ থেকেই গানটি বানিয়ে আমাকে পাঠায়। শুনেই ভালো লাগে। যখন ভিডিওর পরিকল্পনা হচ্ছিল, তখন সেই বলেছিল কলকাতার শিবরাম শর্মার কথা। ভিডিওটির শুটিং ঢাকার ফোক স্টুডিওতে হলেও অনেকে ভেবেছিলেন কলকাতায় হয়েছে। অনেকেই বলেন, গানটি 'চিটিয়া কালাইয়ার' নকল। এটা আমার শত্রম্নপক্ষের প্রচারণা। দুএকজন লোক সব সময়ই আমার পেছনে লেগে থাকে। আগেও এমনটা করেছে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন গানটির কথা, সুর, সঙ্গীতায়োজন কোনো কিছুর সঙ্গেই এই গানটির মিল নেই। কে কী বলল, এসব নিয়ে আমি চিন্তিত নই। দিন শেষে শ্রোতারা কীভাবে গ্রহণ করল সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

গান এখন ভিডিওনির্ভর হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কনার বক্তব্য, খুব সহজে মানুষের কাছে গান পৌঁছানো আর জনপ্রিয়তা পাওয়ার একমাত্র উপায় ভিডিও। তাই গান তৈরির সময়ই ভিডিওর কথা মাথায় রাখতে হয়। গানের কথার সঙ্গে মিল রেখে গল্প আর গস্ন্যামারকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি এসব গানের ভিডিও জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের। তাই আমরা সেই পথেই এগুচ্ছি। কারণ সারা বিশ্বেই এখন শ্রোতারা ইউটিউবে অথবা মোবাইলে গান শুনছে। আমরা গত বছর থেকে এ ধারাটিতে অভ্যস্ত বেশি হয়েছি। তো বেশির ভাগ গানই ডিজিটালি প্রকাশ হচ্ছে। সঙ্গীতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি।

বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল ও ভয়েস ওভারের ব্যস্ততা নিয়ে কনা বলেন, দেশে এখনকার ৮৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনের ভয়েস ওভার আমার। টিভি ছাড়লে যখন নিজের কণ্ঠ শুনতে পাই, তখন ভালোই লাগে। মজার বিষয় হচ্ছে, আমি এমনভাবে ভয়েস ওভারগুলো দেই, অনেকে ধরতেই পারে না এটা আমার কণ্ঠ।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<40780 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1