২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে বাংলালিংকের কলড্রপ বিজ্ঞাপনে নতুন মুখ হিসেবে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু হয় তার। টিভি পর্দায় দর্শকরা তাকে প্রথম আবিষ্কার করেন একটি চকলেটের বিজ্ঞাপনে। তারপরে আল্পনা কাজল, চিনিগুঁড়া প্রেম, আনলিমিটেড মাস্তি, ফটোগ্রাফ, শোজ অব পোয়েট্রি ও কমপিস্নকেটেডের মতো জনপ্রিয় সব নাটকে অভিনয়ে মন ছুঁয়েছেন সবার। আর 'উড়ে যায়' মিউজিক ভিডিওতে গান গেয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। তবে বয়স অল্প হলেও কাজের মানুষ শাহতাজ। ডুবে থাকতে চান কোনো না কোনো কাজের মধ্যে। এইতো, দু'দিন হলো শুটিংয়ের কাজ মিটিয়ে ফিরেছেন নেপাল থেকে। দেশে এসেই ব্যস্ত হয়েছে ঈদের নাটকের সেটে। বললেন নিজের মুখেই, 'নেপালে গিয়েছিলাম 'নন্দিনী' নামের একটি এক পর্বের নাটকের শুটিংয়ে। দেশে আসতে না আসতেই শুরু হয়েছে ঈদের কাজ। এবার কিছু ভালো ভালো কাজ করেছি। গল্পগুলোও আলাদা। এখনই সেসব জানাতে চাই না। আগে শেষ হোক, পরে বলব।'
শুধু কি নাটক! ছোট পর্দার এই পরিচিত মুখ এখন উপস্থাপনাতেও বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। হাসতে হাসতে শাহতাজ বলেন, 'বেসরকারি একটি টেলিভিশনে বেশ কিছু দিন ধরেই 'ওয়েব লাইভ উইথ শাহতাজ' নামে শো করছি। এখানে ফর্মাল কথোপকথন হয় না। অতিথিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় কথা বলি। অনেকটা বাসায় মেহমান আসলে যেভাবে কথা হয় তেমনি করে। গতানুগতিক টিভি উপস্থাপনার ধারাকে ভাঙ্গতে চেয়েছিলাম। এটাকে কাজ হিসেবে মনে করি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মজা পাই, তাই উপস্থাপনা করছি। তবে শোটি এত বেশি প্রশংসিত হবে কল্পনাও করিনি।'
টিভি বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু। তারপরে একাধিক একপর্ব ও ধারাবাহিক নাটকে নিয়মিত দেখা গিয়েছে শাহতাজকে। বছর খানেক আগে বাম্মীর সঙ্গে 'উড়ে যায়' এবং 'দ্য হিট মাসুপ' শিরোনামে গান গেয়ে দর্শকদের মাতিছেন তিনি। কোন পরিচয় বাঁধব তাকে? এমন প্রশ্ন শোনে হেসেই খুন এই অভিনেত্রী। হাসি থামিয়ে বলতে শুরু করেন, 'গান নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস। আমাকে গান গাওয়ার কথা কাউকে বলে দিতে হয় না। যদিও টিভি বিজ্ঞাপন আর নাটকের কারণে মানুষ আমাকে চিনে। দর্শকরা ভালোবাসে। তাই এসবের প্রতি আমার আলদা টান আছে। ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু আমার প্রথম পরিচয় একজন অভিনেত্রী হিসেবে। কখনো সুযোগ হলে নিজেকে সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচয় দেব। কেবল তো দু'একটা গান বেরিয়েছে। দু'একটা গান গেয়েতো আর সংগীত শিল্পী হওয়া যায় না। এই রাস্তাটা অনেক বড়। কেবল তো শুরু করলাম। সত্যি বলতে প্রথম গানেই মানুষ আমাকে প্রচুর ভালোবাসা দিয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার।'
তবে কি গানেই মজে থাকতে চান শাহতাজ? এবার একটু গম্ভীর হলেন। ভারী গলায় বললেন, আমি আরো ভালো ভালো কিছু গান করতে চাই। তার মানে এই নয় যে, অভিনয়টা ছেড়ে দেব। গান নিয়ে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করারও ইচ্ছা আছে। নতুন একটা গান শিগগিরই প্রকাশ পাবে। সেটা নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে আমার। আর অভিনয়ে আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছি।
মডেলিং থেকে উপস্থাপনা, সবই তো করা হয়েছে। বড় পর্দায় দেখছি কবে? বড় পর্দার কথা শুনে কিছুটা নড়ে চড়ে বসলেন ছোট পর্দার এই সুন্দরী। অকপটে বলে ফেললেন, বড় পর্দা মানেই সব কিছু বড়। বড় বাজেট, বড় প্রোডাকশন, বড় দায় দায়িত্ব। সব কিছু মিলে বড় পর্দায় অভিনয় করার মতো যোগ্যতা আমার হয়ে উঠেনি। ভবিষ্যতে হলে, ব্যাটে বলে মিললে হয়তো বড় পর্দায় কাজ করতে পারি। আপাতত ইচ্ছা নেই।
এবার শোনা যাক কাজের অভিজ্ঞতা। তরুণ এই অভিনত্রী জানালেন সেই অভিজ্ঞতাও। 'আমার কাছে নাটকের কাজটিকে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। এখনকার নাটকে সময় পাওয়া যায় অল্প। একটা সট বড়জোড় দুইবার নেয়া হয়। বাজেটও থাকে অল্প। সবাই অল্প বাজেটে ভালো কাজ চায়। আগেতো নাটকে সময়ও থাকতো বেশি, বাজেটও ছিল ভালো। তখনকার অভিনেতা-অভিনত্রীরা স্ক্রিপ্ট পড়ার সময় পেতেন। চরিত্রকে অনুভব করতে পারতেন। আমরা সেই সময়টুকু পাই না। একটা বিজ্ঞাপনের বাজেট দিয়ে দুইটা নাটক বানানো যায়। অথচ চলিস্নশ মিনিটের মধ্যে পুরো গল্প দর্শকদের সামনে উপস্থাপনা করা কত কঠিন কাজ। তাই নাটকের বাজেট বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।' বললেন শাহতাজ।
সবশেষে ভক্তদের প্রসঙ্গ। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা সামনা সামনি, ভক্তদের কিভাবে সামলান? বললেন, 'আমার ভক্তরা অনেক ভালো। আমার কাজ তাদের কাছে ভালো লাগলে ভালো বলে, মন্দ হলেও বলে। আমিও সবসময় মুখিয়ে থাকি তাদের প্রতিক্রিয়া শোনার জন্য।'