শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবের নায়লা একেবারেই ভিন্ন

নায়লা নাঈম। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্বল্প বসনের খোলামেলা একটি মুখচ্ছবি। পর্দায় এই গস্নামার গার্লের রগরগে উপস্থিতি দেখে কেউ তাকে বলেন, 'হটকেক' কেউ বা আবার বাংলার 'সানি লিওন' বলে মন্তব্য করেন। 'মালাইকা অরোরা'র সঙ্গেও তুলনা করতে চান অনেকে। কারণ নায়লা নাঈমই একমাত্র সেলেব্রেটি, যিনি কেবল আইটেম গানেই পারফর্ম করেন। তবে যেন-তেন কিংবা গতানুগতিক আইটেম গানে নয়, বেছে বেছে এবং খ্যাতিমান পরিচালকদের ছবির গানে দেখা যায় তাকে। তবে পর্দায় 'হট কেক' কিংবা 'চকোলেট গার্ল' হিসেবে উপস্থিত হলেও বাস্তবের নায়লা আবার একেবারেই ভিন্ন। শিক্ষিত, রুচিশীল নায়লা নাঈম পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও ঠিক যেন পাশের বাড়ির মেয়েটার মতোই শান্তশিষ্ট, সাদা-মাটা। চলনে-বলনে ও পোশাক-আশাকেও বেশ শালীন এবং সাধারণ। আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই কাজ শেষে বাসায় ফেরেন তিনি। কোনো প্রকার, আড্ডা-বাজি কিংবা হই-হুলেস্নারে নেই তিনি। লিখেছেন- মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ২৮ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

আমার কোনো 'না' নেই...

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় জমকালো অনুষ্ঠান চলছে। এক এক করে তারকাদের আগমনে ক্রমশ ঝলমলে হয়ে উঠছে রেস্তোরাঁ। কিন্তু বড় বড় তারকাদের দেখেও অনেকটা নিরুত্তাপ আসর। আহামরি কোনো কুশলবিনিময় নেই। কিন্তু নিস্তেজ নিরুত্তাপ পরিবেশ হঠাৎ করেই যেন পাল্টে যায় নায়লা নাঈমের উপস্থিতিতে। না, অশালীন নয়, অনেকটা শালীন পোশাকেই এসেছিলেন নায়লা। এ কারণে প্রথম পলকে আন্দাজ করতে না পারলেও পরক্ষণেই হই চই পড়ে যায়। ওকান করতে করতে হলভর্তি মানুষের কাছে পৌঁছে যায় নায়লার আগমন বার্তা। সঙ্গে সঙ্গে সেলফি জোয়ারে ভাসতে থাকেন সবাই। আর নায়লাও হাসিমুখে সবার সঙ্গে সেলফি-বন্দি হচ্ছেন। এ কারণে মূল অনুষ্ঠানই যেন ভেস্তে যেতে বসে। আয়োজকদের কড়া বারণেও সামাল করা যায়নি নায়লা ভক্তদের।

বাড়ি ফেরার তাড়া থাকলেও অনুষ্ঠানস্থল থেকে রেস্তোরাঁর গেটে আসতে সময় লেগে যায় অনেক। নায়লার সঙ্গে সেলফি তোলার সারিতে ছিলেন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব শ্রেণির লোক। এই আইটেম কন্যা কাউকেই নিরাশ করেননি। একে একে সবার সঙ্গেই ক্যামেরায় ফ্রেম বন্দি হন সেদিন।

নায়লা নাঈম বলেন, 'আমার সঙ্গে কেউ ছবি কিংবা সেলফি তুলতে চাইলে আমি কখনো না করি না। কোনো প্রকার বিরক্তও হই না। বরং আগ্রহ দেখাই। হয়তো নিজের খুব তাড়াহুড়ো থাকে, শরীর কিংবা মন খারাপ থাকে তারপরও হাসি মুখে তাদের সঙ্গে ছবি তুলি। ভক্তদের সমস্যা বুঝতে দেই না। এমনও হয়েছে সেলফি-ছবি তুলতে তুলতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি, তারপর ছবি তুলছি। এটা আমার কাছে ভালো লাগে।'

আমার কাছে সবাই সমান...

ভক্তদের সেলফি বিলাসে তিনি সবাইকে সমানভাবেই মূল্যায়ন করেন। ছোট-বড়, ধনী-গরিব তার কাছে কোনো তফাৎ নেই। তিনি বলেন, 'দর্শকের ভালোবাসাতেই আজ আমি নায়লা নাঈম। তাদের জন্যই তারকা খ্যাতি পেয়েছি। কেউ ভালোবাসলে তার মর্যাদা দেয়া উচিত। সে যেই হোক। আমার কাছে সব ভক্তই সমান। একজন কাজের বুয়া-রিকশাওয়ালা যেমন, একজন কোট-টাই পরা ভদ্রলোকও তেমন। কাউকেই ছোট চোঁখে দেখি না। আমার সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে কাউকে ফিরিয়ে দিয়েছি এমন নজির নেই। আমি সবার ভালোবাসাকে সম্মান করি।'

অযথা সময় নষ্টের পক্ষে আমি নই...

কাজ ছাড়া সময়ের অপব্যবহার একদমই অপছন্দ তার। তাই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া হয় না তার। নায়লা বলেন, 'আমি সব সময়ই সময়কে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আড্ডা বাজি আমার ভালো লাগে না। তাই ঘুরতেও যাওয়া হয় না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানেও আমি যাই না। যদিও যাই প্রযোজন সেরে চলে আসি। অযথা সময় নষ্টের পক্ষে আমি নই।'

তবে কি ঘরকুনো স্বভাবের এই তারকা! তারকারা কি কখনো এমনটি হয়? তারা তো নিজেদের প্রচারেই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু নায়লা এমন কেন? ঘরে তার কে কে আছেন? এই তারকা জানালেন, তার ঘরে আছেন বাবা-মা ছোট ভাই। বাবা কৃষিবিদ ছিলেন। এখন অবসরে। ছোটভাই জার্মানিতে পড়ছে।

ঢাকার একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ থেকে ২০১২ সালে স্নাতক শেষ করেছেন নায়লা। এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক হেলথ বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ঢাকার দুটি চেম্বারের নিয়মিত রোগী দেখেন আলোচিত এই মডেল। রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরায় দুটি চেম্বারে রোগী দেখতে দেখতে কেটে যায় সারাদিন।

রোগীরা আমাকে দেখে বিস্মিত হন...

রোগীদের চিকিৎসক যখন তারকা নায়লা নাঈম তখন রোগীর মধ্যে কেমন মানসিকতা তৈরি হয়? জবাবে নায়লা বলেন, 'রোগী তো রোগীই। অনেক রোগীই চেম্বারে এসে ডাক্তারের চেয়ারে আমাকে দেখে বিস্মিত হন। পর্দার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পান না। মার্জিত পোশাক, আস্তে কথা বলা, রোগীদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার- এসবে অবাক হন অনেকেই।'

অল্প খরচ, কিংবা বিনামূল্যে রোগী দেখা হয় কী? নায়লা বলেন, 'চেম্বারে তো আসলে গরিব লোকেরা আসেন না। গরিবরা সাধারণত সরকারি মেডিকেলে যান। তবে, ইন্টার্নি করার সময় গরিব রোগিরাও আসতেন। তাদের ভালো চিকিৎসা দিতাম।'

নায়লা নাঈম রোগী দেখার পাশাপাশি সময় দেন খিলগাঁওয়ে নিজের রেস্টুরেন্টে। অভিনয় করেন বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে। তবে অবসরে ঘুমান বলে জানান। চলচ্চিত্র খুবই কম দেখা হয়। ৭/৮টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তাই, বাংলা চলচ্চিত্রে আইটেম গান নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র ভালোর দিকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন। সমসাময়িক নায়িকাদের মধ্যে মাহিয়া মাহি, পরীমনি এবং নায়কদের মধ্যে সাকিব খান ও আরেফিন শুভ অভিনয় ভালো লাগে।

নায়িকা হওয়ার সময় নেই...

সম্প্রতি নায়লা অভিনীত দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত 'অন্ধকার জগৎ' ও হাবিবুল ইসলাম হাবিবের 'রাত্রির যাত্রী'। 'রাত্রির যাত্রী' ছবিতে কাজ করেছিলেন তিন বছর আগে। 'অন্ধকার জগৎ' ছবির পর আর কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করেননি বলে জানান নায়লা। এ দুটি সিনেমাতেও তাকে দেখা গেছে চিরচেনা রূপে। আইটেন কন্যা নয়, চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে কি কখনো দেখা যাবে না? জবাবে নায়লা বলেন, 'একটি আইটেম গানে সময় লাগে একদিন/দুদিন। কিন্তু একটি ছবির নায়িকা হয়ে কাজ করতে গেলে সময় দিতে হবে কম করে হলেও এক মাস। এতো সময় আমার নেই। তাই আইটেম গানেই কাজ করছি।'

তাহলে কি চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই? অনেকেই তো আইটেম গার্ল থেকে নায়িকার থাতায় নাম লেখান। 'পেশা হিসেবে মিডিয়ায় কাজ করারই কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না। যতটুকু করছি শখের বশে, ভালোলাগা থেকে করছি। পেশা হিসেবে নেয়ার ইচ্ছে নেই'- বলেন নায়লা।

সম্প্রতি জিসবা ফার্মার একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করলেন নায়লা। এতে তার সহশিল্পী 'ঢাকা অ্যাটাক্ট' খ্যাত অভিনেতা তাসকিন আহমেদ। বিজ্ঞাপন নিয়ে নায়লা বলেন, 'খুব ভালো একটি কাজ হয়েছে। এটি নির্মাণ করেছেন রিয়াদ রহমান। কোক স্টুডিওতে এর শুটিং হয়েছে। তাস কিনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভালোছিল। দর্শকদের বিজ্ঞাপনটি ভালো লাগবে।'

ধর্মকর্মের প্রতি আমারও সম্মান বোধ আছে।'

সানি লিওনকে অনুসরণ করি না, সম্মান করি...

২০১৩ সালে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। পাশাপাশি ভার্চু্যয়াল জগতে খোলামেলা ছবি প্রকাশ করে সমালোচিত হয়েছেন। পর্ণ তারকা সানি লিওনির সঙ্গে তুলনাও করা হয় তাকে। এ নিয়ে গতবছর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' প্রতিবেদনও করে। বিষয়টি নিয়ে নায়লা বলেন, 'সানি লিওন একজন তারকা, সে হিসেবে এটাকে ইতিবাচক মনে করছি। আমি এমনিতেই কিছুটা অভিব্যক্তিহীন মানুষ, সহজেই কিছুতে কিছু যায়- আসে না। তবে নেতিবাচক লেগেছে, কারণ সে একজন পর্ণ তারকা। আমি মোটেও সানি লিওনকে অনুসরণ করি না, কিন্তু তাকে সম্মান করি, তার অর্জনকে ভালোভাবে দেখি।'

ধর্মকর্মের প্রতি সম্মানবোধ আছে....

নায়লা নাঈমকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখলেও বাস্তবে তিনি অনেকটাই শালীন, সাবলীল, স্বল্পভাষী, বিনয়ী ও সাধারণ মানুষ। বিশ্বাস করেন সৃষ্টিকর্তাকেও। তিনি বলেন, 'পর্দার সঙ্গে বাস্তব মেলানো কঠিন। আমাকে কে কিভাবে দেখেন জানি না। আসলে পর্দায় তো আর একজন অভিনেত্রীর বাস্তব জীবনের নামাজ রোজা-পর্দা এসব দেখানো হয় না। সেটাতো অভিনয়ের বিষয়। তবে, আমি সাধারণ একজন মানুষ। সৃষ্টিকর্তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মকর্মের প্রতি আমারও সম্মানবোধ আছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42823 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1