বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

একই ধারায় মা-মেয়ে

মা। ছোট্ট একটি শব্দ হলেও এর গভীরতা সীমাহীন। যার পরিমাপ কিংবা পরিধি নির্ণয় করা সম্ভব নয়। সব সংকোচ- অসংকোচ প্রকাশের জায়গা তো কেবল একটাই। আগামী রোববার বিশ্ব মা দিবস। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ 'মা'। এর সঙ্গে 'মেয়ে' শব্দটি যোগ করলে আরও দৃঢ় এবং গাঢ় হয় সম্পর্কের গভীরতা। মা-মেয়ের ভালোবাসার সম্পর্ক চিরন্তন। এই সম্পর্ক আরও প্রগাঢ় হয়, যদি দুজনেই একই ধারায় প্রবাহিত হয়। তারকা জগতের এমনই এক মা-মেয়েকে নিয়ে আমাদের আজকের তারার মেলার আয়োজন। লিখেছেন মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ০৯ মে ২০১৯, ০০:০০
মেয়ে নভেরা রহমানের সঙ্গে মোমেনা চৌধুরী

মা মোমেনা চৌধুরী। দেশের একজন বিশিষ্ট অভিনেত্রী। টিভি, চলচ্চিত্র, মঞ্চ সবখানেই তার সরব উপস্থিতি। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা একক অভিনয়ের নাটক 'লালজমিন' তার অভিনীত এ সময়ের সর্বাধিক আলোচিত মঞ্চনাটক। মেয়ের নাম নভেরা রহমান। যিনি অমিতাভ রেজার নির্মাণাধীন আলোচিত সিনেমা 'রিক্সা গার্ল' খ্যাত নায়িকা। অবশ্য কয়েকদিন আগে এই সিনেমার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'নাঈমার রঙ'। জন্মের পর থেকে নয়, বরং জন্মের আগে থেকেই মায়ের গর্ভে থাকতেই অভিনয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে নভেরার। মায়ের গর্ভে যখন ধীরে ধীরে প্রাণ সঞ্চার হতো, মঞ্চে মোমেনার অভিনয়ের ডায়লগ যেন নভেরার কানে ভেসে আসত। তাইতো জন্মের পর থেকেই অভিনয়কে জীবনের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছেন।

মোমেনা চৌধুরীর বলেন, 'ও যখন আমার পেটে একটু একটু করে বড় হচ্ছে তখন আমি মঞ্চে অভিনয় করছি। তখন অনুভব করতাম নতুন একটা জীবন আসছে। ওর বয়স যখন ৪০ দিন তখন টাংগাইলে নাটকের শো করতে গিয়েছিলাম। মঞ্চের পাশে ট্রাংকের উপর নভেরাকে শুইয়ে রেখে অভিনয় করেছি। আমি যখন মঞ্চে উঠেছি তখন আমার নাটকের সহকর্মীরা ওর পাশে থাকতেন। মঞ্চ থেকে নেমে আবার ওর কাছে যেতাম।'

যে মেয়ে মায়ের কোলের মতো মঞ্চকেই আপন করে নিয়েছেন, নাটকের আবহকে ঘুমপাড়ানির গানের মতো মনে করেছেন, তার তো অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। মোমেনা বলেন, 'ও যখন একটু একটু করে বড় হতে থাকল তখন দেখতাম অভিনয়ের প্রতি বিশেষ করে নাটক সম্পর্কিত বিষয়ের প্রতি তার ঝোঁক বাড়ছে। আমিও নিষেধ করিনি। ওর ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিতাম।'

বর্তমান সমাজের বাবা-মায়েরা নিজের মতো করে সন্তানকে বড় করতে চান। নিজের স্বপ্ন-ইচ্ছেকে চাপিয়ে দেন সন্তানের ওপর। সন্তানের স্বাধীনতা-ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বলতে কিছু থাকে না। ব্যতিক্রম কেবল অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী। মেয়ে নভেরাকে তার স্বাধীনতা দিয়েই বড় করেছেন। নিজের ইচ্ছেকে চাপিয়ে দেননি। মোমেনা বলেন, 'আমার দুই সন্তান। ছেলে বড়, মেয়ে ছোট। শুধু নভেরা নয়, ছেলেমেয়ে দুজনকেই আমি স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছি। ওরা দুজনেই সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় ভালো আছেন। যেসব বাবা-মা নিজের চাওয়া-পাওয়াকে সন্তানের চাওয়া পাওয়া করে দেন আমার মনে হয় তারা ভুল করেন।'

মায়ের পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি নভেরা। নিজের মেধায় প্রতিষ্ঠিত হতে কানাডায় অভিনয় ও ডিরেকশনের ওপর পড়ালেখা করেছেন। কানাডায় একটা থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছে নভেরা। কানাডায় নাটকে অভিনয়, কস্টিউম ডিজাইন, লাইট প্রক্ষেপণ, মেকআপসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করেছে নভেরা। ইচ্ছে করলে সেখানেই থেকে যেতে পারতেন কিন্তু তা করেননি। বিদেশে থেকে দেশের প্রতি তার ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি পায়। দেশকে, দেশের মানুষকে খুব মিস করতেন। এ কারণে ২০১৭ সালের শেষের দিকে ফিরে আসেন নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশে। দেশে ফিরে 'শূন্যন' নামে একটি নাট্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এই অভিনেত্রী। অভিনয় নিয়ে দেশেই কিছু একটা করতে চান।

মা-মেয়ে দুজনের চেহারায় দারুণ মিল। বিশেষ করে চোখের মায়া দুজনেরই সমান। মায়ের সঙ্গে তো মেয়ের চেহারার মিল থাকবেই এটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন মোমেনা। তবে দুজনে শিল্পী বলে হয়তো মিলটা একটু বেশিই।

নভেরা শান্তশিষ্ট অনেক আধুনিক একটি মেয়ে। অভিনয়ের জগতে মা তার আইডল। মা যেমন নাটক নিয়েই কাটালেন তার জীবনের প্রায় পুরো অংশ, মেয়েও তেমনি নাটকে সময় দিতে চান। তবে মায়ের চেয়ে মেয়ে অনেক বাস্তববাদী। আজকের মোমেনা চৌধুরী একদিনে হননি। সহজভাবে জীবনকে পাননি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এতদূর এসেছেন। মা হয়ে নিজের মেয়ে নোভেরাকে নিয়ে অনেক কিছু বললেও নিজের গর্ভধারিণী মাকে নিয়ে তার কোনো স্মৃতি নেই।

\হমোমেনা বলেন, '৫ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছি। তাই মাকে নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে মায়ের একটি ছবি আছে আমার কাছে। যখন মাকে খুব মনে পড়ে তখন সেই ছবিটা দেখি। একটা পরিবারে মায়ের গুরুত্বের শেষ নেই। ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর অনেক সংগ্রাম করে আমি বড় হয়েছি। অনেক কষ্ট করেছি। আসলে কোনো কিছু সহজে পাওয়ার চেয়ে সংগ্রাম করে পাওয়াটা অনেক ভালো। সহজে কিছু পেলে তার মর্ম বোঝা যায় না। আজকাল নতুনেরা সহজেই পেতে চান। সহজে যা পাওয়া যায় সহজেই তা হারিয়ে যায়।'

তবে নিজের মেয়ে নোভেরাকে নিয়ে তিনি ভিন্ন মত পোষ করেন। নোভেরা সহজেই কিছু পাওয়ার পক্ষে নন। নিজেকে তারকা খ্যাতি পাওয়ার জন্যও তার কোনো চেষ্টা নেই। অনেকটা প্রচার বিমুখ। তাই হয়তো তার কাজগুলো ততটা খবরে প্রকাশ পায় না।

মায়ের চোখে মেয়ে কেমন? জবাবে মা মোমেনা বললেন, 'আমার মেয়ে বলে বলছি না, নিরপেক্ষভাবেই বলছি নভেরা খুব লক্ষ্ণী মেয়ে। খুবই শান্ত কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে অনায়াসে। দেশের প্রতি তার অনেক মায়া। সে জন্য বিদেশে গিয়েও থাকতে পারেনি। দেশের টানে ফিরে এসেছে। ও ভালো অভিনয় করে। দিনে দিনে আমি ওর ফ্যান হয়ে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে নভেরা ভালো ছবিও আঁকতে পারেন।' প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় মা দিবস। মায়ের সংজ্ঞা নিয়ে মোমেনা বলেন, 'আমার কাছে মায়ের সংজ্ঞা হচ্ছে ত্যাগ। যে মা যত ত্যাগী হন সে ততই স্বার্থক। ভোগের জন্য নয়, সন্তানের স্বার্থের জন্যই সবর্দা চিন্তা করেন। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন মায়ের গর্ভ থেকে।' মায়ের কথায় একমত পোষণ করেন নভেরা।

মা-মেয়ে দুজনেই ব্যস্ত সময় পার করছেন নাটক-অভিনয়ে। মোমেনা চৌধুরী বর্তমানে 'লালজমিন' নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। নাটটি নিয়ে তিনি ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। ২০১১ সালে এর প্রথম মঞ্চায় হয়। ইতোমধ্যে নাটকটির ২০৬টি মঞ্চায় হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল বঙ্গভবনে নাটকটি দেখে প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রীও নাটকটি দেখবেন বলে প্রত্যাশা করেন মোমেনা। একক অভিনীত এ নাটকটি মঞ্চে আনার আগে মাকে সাহস জোগিয়েছেন কন্যা নভেরা। নভেরা এই নাটকের মিউজিক তথা আবহ তৈরি করেছেন।

মঞ্চের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও সরব মোমেনা চৌধুরী। এসএ টিভিতে 'তুমি আছ তাই', এটিএন বাংলায় 'সোনাবান' এবং এনটিভিতে 'মায়া মসনদ' নামের তিনটি ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে। এ ছাড়া কোয়ান্টম ফাউন্ডেশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করেন মোমেনা। কাজ করতে করতেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চান এই অভিনেত্রী। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো প্রত্যাশা নেই তার। তবে চান একজন ভালো মানুষ হিসেবে, সবার ভালোবাসা নিয়ে যেন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন।

অন্যদিকে মেয়ে নোভেরা বর্তমানে অনিমেষ আইচের 'নাঈমার রঙ' ছবিটি নিয়ে ব্যস্ত আছেন। বেশি কাজ না করে ভালোমানের অল্প কাজ করতে চান। ছবিটির কাজ শেষ হওয়ার আগে কোনো কিছুই বলতে চাননা নভেরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<48524 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1