বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চঞ্চল চৌধুরীর চঞ্চলতা

চঞ্চল চৌধুরী। মঞ্চ ও টিভি পর্দার বাইরেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বড় পর্দায়। অভিনয় করেছেন মনপুরা, টেলিভিশন, আয়নাবাজি ও দেবীর মতো ব্যবসাসফল ছবিতে। অতি মানবীয় অভিনয়ের জন্য পরিচালকদের কাছে আস্থার নাম চঞ্চল চৌধুরী। আর দর্শকদের কাছে বৈচিত্র্যময় এক অভিনেতা। সুদীর্ঘ অভিনয় জীবনে ছুটে চলেছেন এক চরিত্র থেকে অন্য চরিত্রে। তবুও বিন্দুমাত্র ক্লান্তিবোধ ছুঁতে পারেনি তাকে। লিখেছেন রায়হান রহমান
নতুনধারা
  ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

গভীর রাত। প্রভাবশালী গাজী সাহেবের মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে হালিম হঠাৎ খুন করে বসল। কি আর করা? ছেলেকে তো বাঁচাতেই হবে! স্ত্রীর কথামত ছেলেকে বাঁচাতে বাড়ির এতিম ছেলে সোনাইকে নির্বাসনে পাঠানো হলে মনপুরা দ্বীপে। যাতে সবাই ভাবে খুনটা সোনাই-ই করেছে। এ চরে এসেই সোনাই সাক্ষাৎ পেল পরীর। দিনে দিনে পরীর সঙ্গে সোনাইয়ের প্রেম জমে ক্ষীর। মনে পড়ে দৃশ্যগুলো। অতিমানবীয় সোনাই চরিত্রে অভিনয় করা সে অভিনেতার অবয়ব চোখে ভাসলো তো? কিংবা কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বদলে ভাড়ায় জেল খাটা আয়নার কথা মনে আছে? যে কিনা চোখ বন্ধ করে বাচ্চাদের মন ভালোর সূত্র শেখায়। অথবা সাদা চুলের বৃদ্ধ লোকটাকে দেখেছেন? পাড়ার লোকরা যাকে মিসির আলী বলে ডাকে। একবার মন খুলে ভাবুন তো, এসব চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী ছাড়া অন্য কেউ অভিনয় করলে এতটা প্রাণবন্ত হতো কি? কি মিলাতে পারছেন না? চঞ্চল নিজেও পারেননি।

এক চরিত্র থেকে বের হয়ে অন্য চরিত্রে মিলে যাওয়া নাকি তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেকটা নিজের অভিনীত 'আয়নাবাজি'র সংলাপের মতোই, 'ভোর হলে পরেই চরিত্র বদলায়'। তিনিও তাই। আজ এ চরিত্র তো কাল আরেক চরিত্র। মাসের পঁচিশটা দিন এভাবেই যায়। কখনো হাতে চিত্রনাট্য, কখনো সেই চিত্রনাট্যের চিত্রায়ন নিয়ে পরিকল্পনা, কখনো বা চলচ্চিত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তত করা। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটিই করে আসছেন এ অভিনেতা। অকপটে নিজেই বললেন, 'আমরা আসলে একটা নন-প্রফেশনালিজমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি নাটকের মানুষ। প্রতিদিনই নাটকের কাজ করতে হয়। চেষ্টা থাকে প্রত্যেকটি নাটকে কাজ করার আগে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়া। সবসময় হয়তো পারি না। তবুও আমার দর্শকদের হতাশ করতে চাই না। অনেক দিন ধরে অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে চিত্রনাট্য হাতে এলেই বুঝতে পারি চরিত্রটাকে কিভাবে দাঁড় করাব। এখন তো অনেকেই চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণ করে। আমি সেসব নাটকে কাজ করি না। সবসময় চেষ্টা থাকে শতভাগ উজাড় করে কাজ করার।'

যতবারই চলচ্চিত্রে হাজির হয়েছেন, ততবারই সুপার হিট। কখনো কি মনে হয়েছে নাটকের চঞ্চল চৌধুরীর থেকে চলচ্চিত্রের চঞ্চল চৌধুরী বেশি জনপ্রিয়? এমন প্রশ্নে কিছুটা সময় নিলেন উত্তর দিতে। বললেন, 'কখনো সেভাবে ভেবে দেখিনি। নিজেকে এভাবে ভাগ করার পক্ষে নই। হয়তো চলচ্চিত্রে মানুষ আমাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে 'মনপুরা' থেকেই। এটা আমার সৌভাগ্য। এটা ঠিক নাটকের চেয়ে বড় পরিসরে কাজ হয় চলচ্চিত্রে। সেখানে বাজেট থাকে বেশি, কাজ ও করা হয় যত্ন নিয়ে। আমি সবসময়ই বলি, নাটকের চেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রই থেকে যায়। এক সময় মনে করা হতো নাটক অস্থায়ী শিল্প। প্রতিদিন একই জিনিস দেখতে দেখতে দর্শকরাও ক্লান্ত হয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষ চলচ্চিত্র নিয়েই বেশি চর্চা করে। আমি নিজেকে একজন অভিনেতা হিসেবেই ভাবতে পছন্দ করি।'

অভিনেতা! তার মানে কত শত চরিত্রে অভিনয় করতে হয় আপনাকে। কখনো কি মনে হয়েছে নিজের অভিনীত চরিত্রগুলো ব্যক্তি চঞ্চল চৌধুরীর থেকেও শক্তিশালী? এবার আর সময় নিলেন না তিনি। 'কখনো এ বিষয়টি নিয়ে ভাবিনি। ভাবার কারণও নেই। ব্যক্তি চঞ্চলকে কখনোই তার অভিনীত চরিত্রগুলো ছাপিয়ে যেতে পারেনি। ব্যক্তি চঞ্চল আর চঞ্চল অভিনীত চরিত্র দুটো আলাদা জিনিস। একটির সঙ্গে আরেকটির তুলনা করা মুশকিল। বিভিন্ন সময়ই অনেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি, তবে সেসব চরিত্র আমার চেয়ে ব্যক্তিসম্পন্ন ছিল না। তাই যদি হতো তবে আমার পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে যেতো,' বললেন, মনপুরার সোনাই চঞ্চল চৌধুরী।

নাটকের মানুষ হয়েও, চলচ্চিত্রাঙ্গনে তার দর্শকপ্রিয়তা রয়েছে। পরিসংখ্যান মতে অনেক নিয়মিত চলচ্চিত্র শিল্পীর চেয়ে তার ছবি বেশি ব্যবসা সফল। তবুও মাসের পর মাস বুঁদ হয়ে থাকেন নাটকে। কালেভাদ্রে দেখা মিলে বড় পর্দায়। আর এসেই বাজিমাত। কথা বললেন সেসব নিয়েও। ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিসির আলী খ্যাত এ অভিনেতা বললেন, আমি চলচ্চিত্রের নিয়মিত মানুষ নই। বছরে বা দু'তিন বছরে একটি ছবি করি। চিত্রনাট্য পছন্দ হলেই কাজ করি। সবসময় চাই আমার নামের সু-বিচার করতে। মনপুরা চলচ্চিত্রে কাজ করার পরে আমাকে নিয়ে দর্শকের আলাদা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়। আমার কাছে মনে হয়, আমার কমিটমেন্টের জায়গাটা ঠিক আছে বলেই দর্শক আমাকে গ্রহণ করে। চলচ্চিত্রে যারা নিয়মিত তারাও যদি যত্ন নিয়ে কাজ করে তবে দর্শক তাদেরও গ্রহণ করবে। কারণ তারা আমার চেয়ে বেশি মেধাবী বলে আমি মনে করি।

কথার পৃষ্ঠে কথার জন্ম। এভাবেই আড্ডা চলতো বহুদূর। তবে শব্দের সীমারেখায় টানতে হচ্ছে দাড়ি। যাওয়ার আগে ছোট্ট করে বলে যাই, চঞ্চল চৌধুরীরও রয়েছে ব্যক্তিগত জীবন। ব্যক্তি জীবনে তারও হাসি পায়, কান্না পায়। অবসর কাটে তার পরিবারের সঙ্গেই। ছুটির দিনগুলোতে সময় দেন নিজের ছেলেকে। বাপ-বেটা তখন মেতে উঠেন খুঁনসুটিতে। সময় করে ছেলেকে স্কুলেও আনা নেয়া করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের একাধিক ব্যবসায় সফল ছবির এ অভিনেতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<49593 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1