শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে কলকাতার বাংলা সিনেমা

নতুনধারা
  ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০
সদ্য মুক্তি পাওয়া কলকাতার সিনেমা 'কণ্ঠ'র একটি দৃশ্যে জয়া আহসান

রায়হান রহমান

শুরুতে সুখের সংসার, পরবর্তী সময়ে সুখের ঘরে দুঃখের আগুন, নায়িকার সঙ্গে ধাক্কা থেকে প্রেম, কয়েকটি গান আর মারামারির দৃশ্য শেষে মধুর মিলন- ছকে বাঁধা এই বাংলা সিনেমার দিন অনেকটাই শেষ হয়ে আসছে কলকাতার বাংলা সিনেমায়। পয়সা খরচ করে দিনের পর দিন এসব সিনেমা দেখতে এখন পুরোপুরি নারাজ দর্শক। জিৎ, দেব, অঙ্কুশ, কোয়েল, পায়েল, শুভশ্রীদের দেখতে এখন দর্শকের মন টানছে না। যার কারণেই বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে বাণিজ্যিক ছবির মন্দা। দর্শক খরায় ভুগছে কলকাতার বাণিজ্যিক ছবি।

পরিবর্তনের এই ধারা শুরু করেন কিছু সুযোগ সন্ধানী নির্মাতা। একের পর এক নির্মাণ করেছেন স্বল্প বাজেটের আর্ট ফিল্ম কিংবা বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র। যদিও শুরুতে শৈল্পিকতার নামে নগ্ন এবং খোলামেলা যৌনতাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মিত হতো এসব সিনেমা। যৌনতাকে পুঁজি করে বেশ কয়েকটি সিনেমা ব্যবসা করে। এর মধ্যে তুমুল অশ্লীলতারও অভিযোগ ওঠে কিছু সিনেমার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে অন্যতম হলো 'কসমিক সেক্স'। এ ছবির পরিচালক মিতাভ চক্রবর্তী নিজেই বলেছিলেন, 'এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে আঠারো বছর বয়সী কৃপা (প্রধান চরিত্রের নাম) কিভাবে যৌনতাকে আশ্রয় করে স্থূল জীবন থেকে সর্বোচ্চ স্তরে যেতে পারে।' এমন যৌনতার নিরন্তর প্রর্দশনী আর কোথাও মেলেনি। তথাকথিত শহুরে দর্শক সেসব লুফেই নিয়েছেন। একই সময় নির্মিত হয়েছে আরো ডজনখানেক যৌনতা নির্ভর সিনেমা।

তবে এসব যৌনতা থেকেও বের হয়ে এসেছে কলকাতার সিনেমা। এখন আরও গোছানো ও পরিপাটি সিনেমা তৈরি হচ্ছে এখানে। বর্তমানে সৃজিত কিংবা কৌশিকের মতো মেধাবী নির্মাতা হরমেশায় নির্মাণ করছেন গল্পনির্ভর ছবি। যেখানে সমাজের কথা বলা হচ্ছে, ব্যক্তি জীবনের চাওয়া পাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে। সমস্যা, অসংগতি, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, প্রেম বিরহসহ জীবনের নানা ধরনে আবেদন থাকছে এসব সিনেমা জুড়ে। মূলত কলকাতার সিনেমার নতুন যুগের প্রবর্তন হয়েছে অঞ্জন দত্ত, ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো নির্মাতাদের হাত ধরেই। চলচ্চিত্রে গল্পকে কিভাবে শিল্প হিসেবে উপস্থাপন করা যায় এসব মেধাবী নির্মাতারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। কলকাতার দর্শকরাও অবলোকন করেছে চলচ্চিত্রের নতুন সমীকরণ। নির্মিত হয়েছে চোখের বালি, ফ্যামিলি ও অ্যালবাম, টেক ওয়ান, আমি ও আমার গার্লফ্রেন্ড, সিনেমাওয়ালা, সমান্তরাল, নৌকাডুবি ও অন্তরমহলের মতো সিনেমা। প্রতিটি ছবির গল্পই কিন্তু কলকাতার শহরতলির মানুষে কথা বলেছে। সমাজবোধের এসব ছবিতে পরিচালকরা কখনো স্বস্তিকার মতো বাণিজ্যিক ঘরোনার অভিনেত্রীকেও সমকামিতার চরিত্রে দেখিয়েছেন। কিংবা পরমব্রতকে একজন হিজড়া চরিত্রে দৃশ্যায়ন করেছেন। এমন নতুনত্ব পশ্চিমবঙ্গে মানুষ কল্পনাও করেনি। তুমুল রোমান্টিক নায়ক পরমব্রতকে হিজড়া চরিত্রে কে না দেখতেই চাইবে বলুন? তাই হচ্ছে। এসবের সর্বশেষ সংযোজন 'কণ্ঠ'। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের এ ছবিতে রয়েছেন বাংলাদেশের জয়া আহসানও। এ ছবিতে দেখা যায়, অর্জুন একজন রেডিও জকি। হঠাৎ তার কণ্ঠে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বাদ দিতে হবে স্বর যন্ত্র। স্বর যন্ত্র বাদ দেয়ার পর অর্জুনের গলা দিয়ে অদ্ভত আওয়াজ হয়। এ নিয়েই সিনেমার গল্প। ছবিটি মুক্তির পর সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। পাশাপাশি লগ্নির টাকা উঠে ব্যবসার মুখ দেখছেন প্রযোজক।

কলকাতার অনেক দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আগের মতো ঈদ বা পুজোতে দেব না, জিৎ কার কয়টা ছবি মুক্তি পেল তা নিয়ে আমরা আর মাথা ঘামাই না। বরং কবে অঞ্জন দত্ত আবারো 'সাহেব বিবি গোলামে'র মতো সিনেমা নিয়ে পর্দায় হাজির হবেন- এমন খবর নেয়ার চেষ্টা করি। প্রচলিত ধারার নায়ক-নায়িকাদের সময় শেষ। যদিও তারাও কৌশলে এগিয়ে আসছেন বিষয়ভিত্তিক সিনেমার দিকেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50628 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1