শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাপ-বেটির গল্প...

বাবা। দু' অক্ষরের একটি শব্দ হলেও মায়ের মতোই বাবাও যেন নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক ঠিকানা। বাবা মানে নির্ভরতা, শর্তহীন নিরাপত্তা, বাবা মানে বিশালতা। বাবাহীন জীবন যেন ধূসর মরুর ঊষর বুক, শ্বাপদ সংকুল বনে দুরু দুরু হৃৎকম্পন; বাবাহীন জীবন ছোট্ট ডিঙ্গি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়ার দুঃসাহসিক চেষ্টার নাম। বাবাকে নিয়ে নানা রকমের কাব্য তো আছেই, আছে অসংখ্য গানও। 'মন্দ হোক আর ভালো হোক বাবা আমার বাবা, পৃথিবীতে বাবার মতো আর আছে কে বা; 'বাবা আমার মাথার মুকুট চোখের মণি মা, তাদের ছাড়া এই পৃথিবী ভাবতে পারি না'- আরও কত কী! বাবা দিবস উপলক্ষে বাবা চিত্রতারকা আলমগীরকে নিয়ে তারার মেলার সঙ্গে লম্বা এক আড্ডায় মেতে ওঠেন কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। নায়ক আলমগীরকে ছাপিয়ে যেখানে মুখ্য হয়ে উঠেছেন বাবা আলমগীর।
মাসুদুর রহমান
  ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০০
আলমগীর এবং আঁখি আলমগীর

কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও ছোটবেলায় শিশুশিল্পী হিসেবে 'ভাত দে' ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার ইচ্ছাতেই আর অভিনয় করা হয়নি। শুরুতে ক্লাসিক্যাল শিখলেও জনপ্রিয় ধারার গান করে কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। পড়াশোনা আইন নিয়ে হলেও তিনি এখন পেশাদার এক সংগীতশিল্পী। নাম তার আঁখি আলমগীর। নামের সঙ্গেই পরিচয় মিলেছে বাবার। যিনি দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা চিত্রনায়ক আলমগীর। পেয়েছেন ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাবা-মেয়ে দুজনই দুই ধারায় প্রতিষ্ঠিত। মেয়েকে নিয়ে বাবা আলমগীর যেমন গর্বিত তেমনই বাবাকে নিয়েও গর্ববোধ করেন মেয়ে আঁখি। তিনি বলেন, 'আমার বাবা একজন স্বনামধন্য অভিনেতা। সবার প্রিয় এই মানুষটাকে বাবা হিসেবে পাওয়াটা আমার জন্য সত্যিই গর্বের। আমি মনে করি, বাবা একজন ফাইটার। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেন। মানুষ কি বলল না বলল তাতে যায় আসে না। আমরা নিজেরা নিজেদের মতো করে ভালো আছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার শুকরিয়া, এমন বাবার ঘরে আমার জন্ম হয়েছে। জন্ম আমার ধন্য...'

বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ে বাবা-মেয়ের গভীর সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। মধুর সম্পর্কেও চেয়ে এখন যেন নিজ স্বার্থই প্রাধান্য পাচ্ছে। কারণে অকারণে বাবা-মেয়ের মধ্যে স্পর্কের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে আঁখি বলেন, 'কোনো দূরত্ব নয়, বাবা- মেয়ের সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতন। মায়েদের সঙ্গে মেয়েরা একটু ফ্রি হলেও বাবাকেও বন্ধুর মতন হতে হবে। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আমার বাবা। আমি নতুন কোনো গান বাঁধার সময় দর্শকদের ভালো লাগার পাশাপাশি ভাবি, গানটা বাবার ভালো লাগবে তো। এখনো একটু ফুসরত পেলেই বাবার সঙ্গে আড্ডা দিই। বাবার সঙ্গে অনেক কিছুই অগোচরে শেয়ার করি। ছোটবেলায় যেমনটা পারতাম না।'

আঁখি আলমগীরের শৈশব কেটেছে আনন্দে। দুই বোন, এক ভাইরের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। বাবা-মার প্রথম সন্তান হওয়ার সুবাধেই কী বাবার ভালোবাসটা একটু বেশি প্রাপ্য? জবাবে আঁখি বলেন, 'প্রত্যেক বাবা-মা-ই তাদের প্রতিটি সন্তানকে ভালোবাসেন। একজনের চেয়ে আরেক জনকে ভালোবাসা কম বা বেশি দিতে চান না। আমার বাবাও আমাদের তিন ভাইবোনকে সমভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন। ছোটবেলার ছোট ছোট আবদারগুলো বাবা হাসিমুখে মেটাতেন। তখন যেমন আদরে-সোহাগে লালন করেছন এখন বড় হলেও বাবার আদর এতটুকু কমেনি।'

বাবা আলমগীর সেই ছোট্ট আঁখি বড় হয়ে এখন সংসার জীবনে। হয়েছেন দুই সন্তানের মা। দূরে থাকলেও প্রতিদিন ফোনে অন্তত একবার হলেও যোগাযোগ হয় বাবা-মেয়ের। বাবাই প্রথম মেয়েকে ফোন দেন বলে জানান আঁখি।

বাইরে থেকে চাকচিক্যময় মনে হলেও আসলে আঁখির জীবন ছিল সাদামাটা। কোথাও আধিক্য ছিল না মোটেই। সবকিছুই পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। তিন বছর বয়স থেকে গান শিখতে শুরু করেন। গান শিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক, ওস্তাদ আখতার সাদমানী এবং সঞ্জীব দে-র কাছ থেকে। উৎসাহ পেয়েছেন পরিবারের সবার কাছ থেকে। বাবা-মাই তার সবচেয়ে বড় ভক্ত এবং সমালোচক। আঁখি বলেন, 'বাবা আমার গানের বড় সমালোচক। গানে কোথাও কোনো ত্রম্নটি থাকলে তা ধরে ফেলেন। কোনো ছাড় দেন না। আবার ভালো হলে তার জন্য ধন্যবাদ দিতেও ভুল করেন না। বাবা চান নিজ যোগ্যতা, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অন্যের ওপর ভর করে নিজের সাফল্য আনা যায় না।' মেয়ের গানের ভক্ত ও সমালোচক বাবা আলমগীরের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আঁখি বলেন, 'আমার বাবা খুব খুব-ই পেশাদার মানুষ। তিনি খুব ভালো করেই জানেন কাকে দিয়ে কোন কাজটা হবে। বাবা বেশ কিছু চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তার পরিচালনায় মাত্র দুটি ছবিতে গান করার সুযোগ পেয়েছি। একটি 'নির্মম' ও অন্যটি 'একটি সিনেমার গল্প'।'

আঁখি কলেজে পড়ার সময় প্রথম সিনেমায় পেস্ন ব্যাক করেন পরিচালক দেলোয়ার ঝন্টুর ছবিতে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিটিভি আর বাংলাদেশ বেতারে গান করতে শুরু করেন। ১৯৯৭ সালের ৭ জানুয়ারি তার একক গানের প্রথম ক্যাসেট বাজারে আসে। ১৯৯৮ সাল থেকে স্টেজে গাইতে শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম শিল্পী, যার জন্য ভারতের বিখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায় কয়েকটি গান লেখেন, প্রণব ঘোষের সুরে আঁখি সেই সব গান করেছেন। মেয়ে আঁখির কাছে বাবার সবচেয়ে যে বিষয়টি ভালো লাগে তা হলো অবশ্যই ব্যক্তিত্ব। কিন্তু বাবার কাছে মেয়ের কোনো বিষয়গুলো ভালো লাগে তা নিয়ে আঁখি বলেন, 'বাবা একটু গুরুগম্ভীর টাইপের। অন্যদের কাছে শুনেছি বাবা আমাকে নিয়ে বলেন আঁখি একজন ভালো মা। আঁখির মতো হও। এটা সব সময় বলেন।' বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে সময়ের এই সংগীতশিল্পীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সন্তানের কাছে বাবা কী? প্রতিত্তরে আঁখি আলমগীর বলেন, 'সন্তানের কাছে বাবা মানেই এক নির্ভরতা। আমার কাছে বাবা মানে, একটা ঘরের ছাদ। সবকিছু থেকে পরিবারকে প্রটেক্ট করে। সারা বছর অভিনয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাবা আমাদের পরিবারের খেয়াল রাখতেন। শুটিং শেষে রোজ রাতে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53273 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1