বাইরে তখন আষাঢ়ের আবহাওয়া। এই বৃষ্টি এই রৌদ্র অবস্থা। আবহাওয়া অফিসের পূর্বভাষের তথ্য কথা না রাখলেও, কথা রেখেছেন অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। তার বেঁধে দেয়া সময়ই বসেছেন তারার মেলার আসরে। বুক পকেটে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হতে হলো ঢাকাই চলচ্চিত্রের এ দাপুটে নায়িকার। মিমও কম যান না। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দিয়েছেন। শুরুটা করেছিলাম সমালোচনা দিয়ে। মিডিয়া গলি থেকে পাড়ার গলির চায়ের দোকান- সর্বত্র উড়ে বেড়ায় কান কথা। 'মিমের অভিনয়ের চেয়ে নাচের ধার বেশি।' প্রসঙ্গটা তুলতেই মিমের চোখে মুখে হাসির ফোয়ারা। উত্তর দিলেন প্রশ্ন দিয়ে, 'মিম যদি অভিনয় না জানতো, তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেল কেন?'
আসলেই তো! ঘটনাটা ২০১৪ সালের। খালিদ মাসুদ মিঠুর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল 'জোনাকির আলো' নামের একটি চলচ্চিত্র। একজন সমাজকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করে মুগ্ধতার চাদরে মুঁড়িয়েছেন গোটা চলচ্চিত্র পাড়াকে। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। গোটা দেশ যখন মিমনামায় ব্যস্ত, তখন খবর এলো অন্য। বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে ছবিটি। ব্যবসায় সফল হতে গিয়েও হলো না 'জোনাকির আলো'। এ বিষয়ে কথা হলো চিত্রনায়িকা মিমের সঙ্গে। বৃষ্টিমাখা দিনে মিষ্টি মুখে টেনে আনলেন অতীতের সে অভিজ্ঞতাও। বললেন, 'সব ছবিকেই যে হিট হতে হবে এমনটি নয়। উদাহরণ দেয়ার মতো অনেক ছবি আছে, যেসবের মেকিং ও গল্প ভালো। বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে। তবুও ব্যবসায় সফল হয়নি। আর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কিন্তু কোন ছবিটি ব্যবসায় সফল হলো, আর কোন ছবিটি হলো না তার ওপর নির্ভর করে দেয়া হয় না। এটি প্রদান করা হয় একজন শিল্পী তার চরিত্র পর্দায় কতটা প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করছেন তার ওপর।'
বলতে দ্বিধা নেই, সময়ের অন্যতম মেধাবী অভিনেত্রী তিনি। রূপালী পর্দায় মিম রোশনাইয়ে মুগ্ধ দু'বাংলার চলচ্চিত্র প্রেমীরা। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েই শোবিজ অঙ্গনে পা রাখেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছিলেন উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে। দেখা গেল একটি ছবি খুব ভালো ব্যবসায় করেছে আবার পরের ছবিটিই মুখ থুবড়ে পড়ছে। তবুও স্ব-মহিমায় এ নায়িকা চালিয়ে যাচ্ছেন অভিনয় যুদ্ধ।
২০১৫ সাল থেকেই মিমের ক্যারিয়ারে ছোঁয়া লাগে সফলতার। সে বছর মুক্তি পায় 'পদ্ম পাতার জল'। অল্প কিছু সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও ভালো ব্যবসায় করে ছবিটি। এর পরপরই যৌথ প্রযোজনার ছবি 'বস্নাকে' অভিনয় করে দুই বাংলায় পরিচিতি পান এ অভিনেত্রী। 'সুইটহার্ট' ও 'আমি তোমার হতে চাই'সহ আরো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ব্যবসায় সফল হয় তার।
বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনের অবস্থা প্রায় নাজুক। দু-একটা সিনেমার কথা বাদ দিলে, সিংহভাগ চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আগ্রহ হারাচ্ছেন লগ্নিকারকরা। এত প্রতিকূল পরিবেশেও সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনায় থাকছেন চিত্রনায়িকা মিম। খবরটা গতমাসের। নাম ঠিক না হওয়া একটি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এতে পারিশ্রমিক হিসেবে নেবেন ১২ লাখ টাকা। যা বাংলাদেশি কোনো অভিনেত্রীর জন্য সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। এ বিষয়ে মিম বলেন, 'আমি বছরে তিন-চারটির বেশি ছবি করি না। ফলে পারিশ্রমিক না বাড়িয়ে উপায় নেই। অন্যরা বছরে আট-দশটি ছবি করে। তাদের পারিশ্রমিকের গড় করলে দেখা যাবে তারাও আমার মতোই আয় করে।'
তবে সব কিছু ছাপিয়ে পর্দার মিমই দর্শকদের প্রিয়। আইটেম গান হোক, আর রোমান্টিক সংলাপ সব জায়গায় মিমের বৈত্র্যিময় উপস্থিতি অন্য সবার চেয়ে আলাদা। ফলে দর্শকরা হন্যে হয়ে জানতে চায় মিমের নতুন কাজের বৃত্তান্ত। জানালেন সে খবরও। মিম বলেন, 'শিগগিরই নতুন একটি ছবির শুটিং শুরু হবে। রোজার ঈদের আগেই পাকাপাকিভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি ছবিটির সঙ্গে। যদিও এখনো নাম ঠিক হয়নি। এ ছাড়াও কলকাতায় বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ে কথা-বার্তা চলছে। মাঝে একটি ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত হলেও নানা কারণে কাজ করা হয়নি। তবে ব্যাটে বলে মিলে গেলে অচিরেই কলকাতার সিনেমাতে আবারো দেখা যেতে পারে।'
চলচ্চিত্রের বাহিরেও বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করছেন বিদ্যা সিনহা মিম। সম্প্রতি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিজ্ঞাপনে কাছ করেছেন তিনি। প্রচারও হচ্ছে সে বিজ্ঞাপন। শুধু তাই নয়, নিজেকে ফিট রাখতে প্রতিনিয়ত ঘাম ঝড়াচ্ছেন জিমে। অনুমান করাই যায়, নতুন ছবিতে থাকছে মিমচমক। নতুন চমক নিয়ে আরেকদিন না হয়ে চমকে দেব। আজ এ পর্যন্তই।