শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

'এখনকার গান মানেই মিউজিক ভিডিও'

বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি সৈয়দ আব্দুল হাদী। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৫টি জাতীয় পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই কণ্ঠশিল্পী। ষাটের দশক থেকে শুরু করে শ্রোতাদের ভালোবাসায় আজও সিক্ত তিনি। প্রামাণ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে তার সঙ্গীতজীবন নিয়ে। শেষ বয়সে এসেও গানের সঙ্গেই বসবাস তার। সম্প্রতি তারার মেলার সঙ্গে লম্বা এক আড্ডায় বসেন তিনি। কথা বলেন চলমান ব্যস্ততা ও সংগীতের নানান প্রসঙ্গে।
মাসুদুর রহমান
  ০৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
সৈয়দ আব্দুল হাদী

তারার মেলা : শুরুতেই আপনার গানের ব্যস্ততার কথা শুনতে চাই!

সৈয়দ আব্দুল হাদী : গানের ব্যস্ততা মোটামুটি যাচ্ছে। একাধিক টিভি চ্যানেলে নিয়মিত গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি। এর মধ্যে বাংলাভিশনে প্রচার হচ্ছে 'গানে গানে দেশে দেশে'। বছর পাঁচ ধরে এই অনুষ্ঠানটি করছি। বিচিত্র ধরনের গান নিয়ে এই অনুষ্ঠানে কাজ করি। এমনও গান করা হয়, যা বহু বছর শোনা হয়নি। অনেকে প্রশংসা করেন, আমার ভালো লাগে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভিতেও একটি গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি।

তারার মেলা : উপস্থাপনায় কেমন স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করেন?

সৈয়দ আব্দুল হাদী : আমার কাছে তো বেশ ভালোই লাগে। টেলিভিশনে এ ধরনের গানের অনুষ্ঠান আমিই প্রথম শুরু করি। ১৫ বছর আগে এনটিভিতে 'কিছু কথা কিছু গান' নামে একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা শুরু করেছিলাম। অনুষ্ঠানের প্রথম শিল্পী ছিলেন মিতা হক ও সুবির নন্দী। এই অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পায়। পরে বাংলাভিশনে নতুন ভাবনা নিয়ে শুরু করি 'গানে গানে দেশে দেশে'। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা ক্ল্যাসিক গানগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করি।

তারার মেলা : গান নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠানের চিন্তা কিভাবে এলো?

সৈয়দ আব্দুল হাদী : তখন টিভি চ্যানেলগুলোতে গানের লাইভ অনুষ্ঠান হতো না। তবে গানের ভিডিও বেশ চলত। কিন্তু এখনকার মতন গানের সঙ্গে মডেলিংয়ে বিষয়টি ছিল না। তখন গান নিয়ে টিভি চ্যানেলে কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে।

তারার মেলা : মিউজিক ভিডিও নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সৈয়দ আব্দুল হাদী : এখন গান মানেই মিউজিক ভিডিও। গানের চেয়ে দেখাটাই যেন মুখ্য বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে গানের চেয়ে ভিডিওর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। দৃষ্টিকটু হলেও তাতে, যায় আসে না। খারাপ জিনিসও ভাইরাল হয়ে যায়। এখনতো ভিউয়ার্সের বিষয়টি অনেক গুরুত্ব পায়। মানের বিষয়টি ভাবা হয় না।

তারার মেলা : তারকাদের অনেককেই রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায়। রাজনীতি নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সৈয়দ আব্দুল হাদী : আমি কখনো রাজনীতি করিনি। রাজনীতির কোনো দলের সঙ্গে আমার কোনো কালেই কোনো রকম সম্পৃক্ততা ছিল না, এখনো নেই। তবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যারা ভালো কিছু করেন তার প্রতি দোয়া ও ভালোবাসা রাজনীতি সমর্থন নয়।

তারার মেলা : আপনার কি কিছু বলার আছে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য?

\হসৈয়দ আব্দুল হাদী : বলার একটাই আছে, এ দেশটা আমার, এ দেশটা তোমার, এ দেশটা সবার। সুতরাং এ দেশকে ভালো করতে হলে শুধু দেশের সরকার আর রাজনৈতিক নেতারা ভালো হলে চলবে না। দেশের সব মানুষকে ভালো হতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষ যদি তার নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্তরিকতার সহিত কাজ করে তাহলে আমার বিশ্বাস দেশ একদিন এগিয়ে যাবেই। আমি আমার দেশ ও জাতির সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি। বাংলাদেশ চিরজীবী হক।

তারার মেলা: আমাদের বর্তমান সংগীত জগৎ নিয়ে আপনার বক্তব্যে কি?

সৈয়দ আব্দুল হাদী : সময় এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন। মানুষের জীবনযাত্রার রূপ পাল্টে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব হচ্ছে। গান এখন সম্পূর্ণ বিনোদন হয়ে গেছে। আমাদের সময় আমরা ভাবতাম গান কিভাবে শিল্প সম্মত করা যায়। এখন ভাবা হয় কিভাবে গান হিট করা যায়। ভালো কি বা মন্দ এর বিচার তো বর্তমানে করা যায় না। এখন স্থূলতার সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক নেই। শিল্প মানেই সুন্দর। এখন এরা সময়ের সঙ্গে এগুচ্ছে, এগিয়ে যাক। এগুতে হবে ভবিষৎ এর জন্য।

তারার মেলা : এ সময়ের শিল্পীরা কেমন করছে বলে আপনার মনে হয়?

\হসৈয়দ আব্দুল হাদী : এ সময়ের শিল্পীদের অনেকেই খুব মেধাবী। অনেকেই ভালো করছে, আবার কেউ কেউ ভালো করার চেষ্টা করছে।

তারার মেলা: গানের বাইরে কী নিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করেন?

সৈয়দ আব্দুল হাদী: গানের বাইরে আমি পড়াশোনা করি। লেখালেখিও করি। উপস্থাপনা করতে হলে একজন মানুষকে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়।

তারার মেলা : শুনেছি আত্মজীবনী লিখেছেন। কতদূর এগুলেন?

সৈয়দ আব্দুল হাদী : হঁ্যা, নিজের সঙ্গীত জীবন নিয়ে আত্মজীবনী লিখছি। ব্যস্ততার ফাঁকে লিখি। তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে লিখছি। নিজের ভালোলাগা থেকেই এই কাজটি করছি। আমি আসলে যখন যা করি নিজের ভালোলাগা থেকেই করি। অন্যকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়। গানের বেলাতেও তাই। ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকেই

গান করি।

\হ

তারার মেলা : আপনাকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে?

\হসৈয়দ আব্দুল হাদী : ৩৫ মিনিট ব্যাপ্তির প্রমাণ্যচিত্রটির নাম রাখা হয়েছে 'দ্য লেজেন্ড সৈয়দ আবদুল হাদী'। সত্যি বলতে, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পক্ষে আমি ছিলাম না। আগেও অনেকে বলেছেন। কিন্তু রাজি হইনি। কারণ, আমার কাছে মনে হয় প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণের মতো যোগ্যতা আমি এখনও অর্জন করতে পারিনি। তারপরও যখন কাজটি হয়ে গেছে ভালো লেগেছে।

তারার মেলা : প্রায় অর্ধশত গানের সংকলন করেছেন। ভাবনার শুরুটা কিভাবে?

সৈয়দ আব্দুল হাদী: আমার বেশিরভাগ গান চলচ্চিত্রের। ষাটের দশকে আমিসহ অনান্য শিল্পী মিলে যখন গান করতাম আমাদের অনেক গানই জনপ্রিয় ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের অনেক গানের চেয়ে আমাদের গান ভালো হলেও তার কোনো রেকর্ড ছিল না। সে ভাবনা থেকেই মূলত ৪৬টি গান সংকলনের কাজটি করা হয়েছে। দায়িত্ববোধ থেকেও এটি করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।

তারার মেলা : বর্তমানে চলচ্চিত্রের গান কেমন হচ্ছে বলে মনে করেন?

সৈয়দ আব্দুল হাদী: আগেই বলেছি আমার বেশিরভাগ গান চলচ্চিত্রের। এখনকার চলচ্চিত্রের গান আমি ঢালাওভাবে খারাপ হচ্ছে কখনও বলব না। কিছু কাজ তো অবশ্যই ভালো হচ্ছে।

তারার মেলা : দীর্ঘ সংগীত জীবনের প্রাপ্তি কতটুকু?

সৈয়দ আব্দুল হাদী : আমি সমবসময় বলেছি, সঙ্গীতের কাছ থেকে আমার বিশেষ কিছু চাওয়া নেই। কোনো কিছু পাব সে আশায় কখনও গান করিনি। তাই প্রাপ্তি কি সেটি কখনও ভাবিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, বোধহয় অনেক মানুষের মনে প্রবেশ করতে পেরেছি। তাদের ভালোবাসা আমার অর্জন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56490 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1