শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গানের পাখি ঐশী

মাসুদুর রহমান
  ০৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
ফাতিমাতুয-যাহরা ঐশী

তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী ফাতিমাতুয-যাহরা ঐশী। সুরপ্রেমী মানুষের কাছে তিনি গানের মেয়ে ঐশী হিসেব পরিচিত। খুব অল্প সময়েই হৃদয় ছোঁয়া সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে মন জয় করে নিয়েছেন শ্রোতামহলের মন। তার গান যেমন উন্মাদনা ছড়ায় তেমনিই আবার হৃদয়ের গভীরে কাঁদায়। ফোক কিংবা রক স্টাইলের গানে ভিন্নতা ছড়িয়ে প্রশংসিত হয়েছেন এই শিল্পী। তবে ভিন্ন ধাঁচের গানও করেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে গানের ভুবনে পরিচিতি পান ঐশী। আধুনিক সময়ের রক ব্যান্ড ও উন্নত কালচারের সয়লাবে যখন ভরপুর, তখন বাংলার সংগীতাঙ্গনে ফোক গান নিয়ে যারা সাড়া জাগিয়েছেন তাদের একজন ঐশী। তার কণ্ঠে বাংলার মানুষের প্রাণের ফোকসংগীত যেন যুগপোযোগী হয়ে এসেছে। সুন্দরভাবে ফোক গানগুলো আধুনিক রক ফিউশনের মাধ্যমে তার কণ্ঠ দিয়ে জয় করতে সক্ষম হয়েছে দেশ-বিদেশের লাখো শ্রোতাদের হৃদয়। ফোক গান নিয়ে ঐশী বলেন, 'কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সব ধরনের গানই আমার ভালোলাগেতবে বেশি গাওয়া হয় ফোক গান। ফোক গানে একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়।' এবারের ঈদেও জি সিরিজ থেকে প্রকাশ হয়েছে তার একটি ফোক গান।

বিভিন্ন করপোরেট অনুষ্ঠান, স্টেজশো, টেলিভিশনে ঐশীর গান মুগ্ধ করে শ্রোতাদের। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও সুর ছড়িয়েছেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় কনসার্টে দর্শক মাতিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সুর আর ঢঙে খুব অল্পসময়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তরুণ শিল্পী হিসেবে। তবে এই পরিচয়ে এখন নিজেকে প্রকাশ করতে চান না। ঐশী বলেন, 'আমি যেমন একজন অতি সাধারণ মানুষ তেমনই  ক্ষুদ্র একজন গানের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। সংগীতশিল্পী হিসেবে কিছুটা পরিচিতি পেলেও এখনো নিজেকে শিল্পী মনে করি না। শিল্পী হওয়া অনেক বড় বিষয়। প্রচুর সাধনা করতে হয়।' গানের সাধনার পাশাপাশি ঐশী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সাধনও করে যাচ্ছেন। ঐশী পড়ছেন রাজধানী ঢাকার  একটি প্রসিদ্ধ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে। সারা বছর গান নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পড়াশোনায় গাফলতি নেই তার। ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও সাজিয়ে রেখেছেন সেভাবে। তিনি বলেন, 'গান আমার নেশা তবে পেশা হিসেবে একজন ডাক্তার হতে চাই। গান ছাড়া বাকি জীবনের চিন্তা করতে পারি না। গান আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। তাই গান নিয়েই থাকতে চাই সারা জীবন।' রক্ত সঞ্চালন ছাড়া যেমন জীবন ভাবা যায় না তেমনই, গান ছাড়াও শিল্পীর জীবন যেন অচল। গেল ঈদের ওই সময়টাতে অন্যান্য শিল্পীরা যখন ব্যস্ত ছিলেন গানে। পরীক্ষার কারণে ঐশীর সময় কেটেছে তখন পড়ার টেবিলে। পাড়াশোনার এত চাপেও গাইতে হয়েছে ঐশীকে। ঈদের দিন রাতে একুশে টিভিতে লাইভ প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন চ্যানেলে ঈদের অনুষ্ঠানে গাইতে দেখা গেছে এই শিল্পীকে। ঈদের দুইদিন পর কনসার্ট করেছেন জামালপুরে। পরীক্ষা থাকায় ঢাকার বাইরে আরও কয়েকটি প্রোগ্রাম ছাড়তে হয়েছে তাকে। এবারের ঈদে ঐশীর কয়েকটি নতুন গান প্রকাশ পেয়েছে।

এর মধ্যে সাইফুদ্দিন ইমনের কথায় 'খাজা বাবা' গানটি প্রকাশ করে গান ছবি ইন্টারটেইনমেন্ট। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাস। অনুপম মিউজিক থেকে মনিরুজ্জামানের কথায় নতুন একটি গানের রেকর্ডি করেছেন ২১ মে। গানটির কম্পোজিশন করেছেন রাফাত। জি সিরিজের একটি ফোক গান ছাড়াও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডেক থেকে প্রকাশিত হয় তার গাওয়া 'ইস্টিশন-২'। কবি মাসুদ পথিকের লেখা 'ইস্টিশন' শিরোনামে একটি গান তার পরিচালিত নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়। নিজের সুরে গানটিতে কণ্ঠ দেন বেলাল খান। সেই সময় শ্রোতামহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল গানটি। এবার তৈরি হয়েছে এর সিকুয়্যাল ইস্টিশন টু। এবার গীতিকবি এক হলেও পরিবর্তন হয়েছে সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীর। বদলেছে গান প্রকাশের মাধ্যমও। চলেরে মনের গাড়ি/যাবো রে আজ তোর বাড়ি/আমিতো চিনি না আমার বাড়ি/যাবো তোর বাড়ি- এমন কথায় মাসুদ পথিকের এবারের গানটির সুরারোপ করেছেন মুরাদ নূর। গেয়েছেন ঐশী। সংগীতায়োজন করেছেন মুশফিক লিটু। গানটি নিয়ে ঐশী বলেন, 'পথিক ভাই গুণী মানুষ। জনপ্রিয় গান ইস্টিশনে'র সিকুয়্যাল হবে শুনেই ভালো লেগেছে। নূর ভাই ট্র্যাক পাঠানোর পর বেশ কয়েকবার শুনি। শুনে বেশ মুগ্ধ হই।'

চলতি মাসের ২২ তারিখে শেষ হয়েছে ঐশীর চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা। পরীক্ষার পর আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঐশী। গত ২৩ ও ২৬ তারিখে আরটিভি ও বৈশাখী টিভিতে গানের রেকর্ডি করেছেন। পরীক্ষার পরদিন ২৩ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে গান বাংলার আয়োজনে একটি অনুষ্ঠানে দর্শকদের মাতিয়েছেন এই শিল্পী। এরপর ২৪ তারিখে একুশে টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানে গেয়েছেন তিনি। আজ (২৭ জুন) নাগরিক টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানে গাইবেন ঐশী। ৩ জুলাই বাংলাভিশনে লাইভ ছাড়াও ৫ ও ৬ জুলাই ঢাকার বাইরে দুটো কনসার্ট করার কথা রয়েছে ঐশীর।

গানের সঙ্গে ঐশীর শখ্যতা সেই ছোটবেলা থেকেই। নোয়াখালীতে তার জন্ম হলেও বাবার চাকরির সুবাদে ঐশীর শৈশব কেটেছে রংপুরে। সেখানে ২০০০ সালে তিনি  শিশু একাডেমিতে সংগীত শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। এরপর ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সংগীত শিক্ষা নেন নোয়াখালী মৌমাছি কচি-কাঁচার মেলার শিক্ষক মো. শরীফের কাছে। তারপর আরও কয়েকজনের কাছে গানের তালিম নিয়েছেন ঐশী। যদিও তার গানের হাতেখড়ি হয়েছিল মায়ের কাছে মাত্র চার বছর বয়সে। মায়ের উৎসাহ, ঐকান্তিক চেষ্টা ও সহযোগিতায় এত দূর আসতে পেরেছেন বলে মনে করেন তিনি। ঐশী বলেন, 'গানের পেছনে পথচলা শুরু হয়েছিল মা'র হাত ধরে। পরিবারের সমর্থন থাকলেও মায়ের সহযোগিতা আমাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। মা পাশে না থাকলে হয়তো আজ আমি গানের ঐশী হতে পারতাম না।'

সংগীত জগতে ঐশীর জোয়ার শুরু হয় হৃদয় মিক্সড অ্যালবামের মাধ্যমে। এরপর ২০১৫ সালে লেজার ভিশনের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এই মিষ্টি শিল্পীর প্রথম একক অ্যালবাম 'ঐশী এক্সপ্রেস'। এরপর ২০১৬ সালে জনপ্রিয় শিল্পী বেলাল খানের সুরে ও জেকের সংগীত আয়োজনে প্রকাশিত হয় ঐশীর ২য় একক অ্যালবাম 'মায়া'। একই বছর ঊদ-উল আযহা প্রদীপ সাহার কথায় নাজির মাহমুদ ও অভি আকাশের সুরে প্রকাশিত হয় তার ৩য় অ্যালবাম 'হাওয়া'। '২০১৬ সালে চ্যানেল আই-সিম্ফনি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের পপুলার চয়েসের সেরা হয়েছিলেন ঐশী। সংগীত জগৎ যেন সর্বাঙ্গে তাকে বরণ করতে অপেক্ষারত। ঐশী গেয়েছেন অডিও, জিঙ্গেল, নাটক, সিনেমায়।

ঐশী বলেন, 'সিনেমার গানে আমি   স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এখানে অভিনয়শিল্পীদের লিপে গান থাকে। তাই গল্প ও দৃশ্যের সঙ্গে মিল রেখে গাইতে হয়। সেদিক থেকে সিনেমার গান গাওয়াটা চ্যালেঞ্জের। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। তা ছাড়া গতানুগতিক গান আমার ভালোও লাগে না। আলাদা ধরনের গান গাইতেই আমি পছন্দ করি। এটি লক্ষ্য রেখেই সিনেমার গান করছি। এ পর্যন্ত ৩০টির মতো ছবিতে পেস্নব্যাক করেছি। সম্প্রতি মাসুদ পথিকের 'মায়া' ও অরুন চৌধুরীর 'মায়াবতী' সিনেমায় গান করেছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56491 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1