মিডিয়াতে খুব কম তারকাই আছেন, যারা যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখান থেকেই সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন। পাশাপাশি কেবল আলোচনা কিংবা জনপ্রিয়তাই অর্জন করেন না, রীতিমত নির্ভরযোগ্য ও অপরিহার্যও হয়ে ওঠেন সেসব মাধ্যমে। তেমনই এক তারকার নাম তিশা। যদিও মিডিয়াতে এখন অনেকগুলো তিশা। তবে তিশা বললে কোনো রকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই সবার আগে নুসরাত ইমরোজ তিশার নামটি চলে আসবে দর্শক মহলে। নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন এমনকি ওয়েব সিরিজ- সবখানেই নিজের সাবলীল অভিনয়ের দু্যতি ছড়িয়ে অসংখ্য দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন এই তারকা। তবে এখন আর আগের টিভি নাটকে নিয়মিত নন তিনি। কেবলমাত্র বিশেষ দিবসের নাটক-টেলিফিল্ম ছাড়া টিভিতে দেখা মেলে না তার। টেলিভিশনের পর্দায় জনপ্রিয়তার পর সিনেমায়ও নিজেকে মেলে ধরেছেন ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে। বাণিজ্যিক ঘরানার নাচ-গাননির্ভর সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন, তবে বিকল্প ধারার সিনেমাতেই সাফল্য ছড়িয়েছেন তিশা। 'ফাগুন হাওয়ায়' চলচ্চিত্রের পর এই অভিনেত্রী এবার হাজির হচ্ছেন নতুন সিনেমা 'মায়াবতী' নিয়ে। চলচ্চিত্রটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী। আর এর মাধ্যমে প্রথমবার কোনো চলচ্চিত্রে নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিশা। 'মায়াবতী' পরিচালনা করেছেন অরুণ চৌধুরী। যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে আনোয়ার আজাদ ফিল্মস ও অনন্য সৃষ্টি ভিশন। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তিশা ও 'স্বপ্নজাল' ছবির নায়ক ইয়াশ রোহান। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাবে। সম্প্রতি চলচ্চিত্রটি টিজার ও ট্রেলার প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা যায়, মায়া বেগমকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। পরের দৃশ্যেই জেলের ভেতর দেখা যায় তাকে, মুখোমুখি হয়েছেন আদালতের। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ। পরক্ষণে দেখা গেল যৌনপলস্নীর ওই তরুণীর জীবনচিত্র। প্রেম-বিরহের আভাস দিয়ে অপেক্ষায় রাখা হলো দর্শকদের। দুটোতেই তিশার অনবদ্য ও বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়ের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। তবে মূল চলচ্চিত্র দেখার পর দর্শকরা ভিন্ন ধরনের এক ঘোরের রাজ্যে, মায়ার জালে প্রবেশ করবেন বলে দাবি করেন এই অভিনত্রী।
তিশা বলেন, 'আমি সব সময়ই গল্পের চরিত্রকে গুরুত্ব দেই। কখনও নায়িকা হতে চাইনি। একজন শিল্পী হতে চেয়েছি, একজন ভালো অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। ছবির গল্পই আমার কাছে মূল্যবান মনে হয়। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি যে ধরনের কাজ করেছি এবং যা করছি তা আমার কাছে বেশ তৃপ্তিদায়ক। ক্যারিয়ারে নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে যখন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভালো হয়েছে বৈকি খারাপ হয়নি। এই দিক থেকে বলতে গেলে আমি ভাগ্যবতী। আমি আসলে সব সময় প্রতিটি কাজেই হ্যাপি থাকি। বরাবরই বেছে বেছে কাজ করছি। 'মায়াবতী'ও আমার বাছাই করা সিনেমার একটি। অনেকটা গতানুগতিক ধারার বাইরের একটা গল্প। মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও বলা যায়।'
কী আছে মায়াবতী'তে! প্রশ্ন তোলার আগেই চলচ্চিত্রের গল্প বলতে শুরু করলেন তিশা। বলেন, 'চলচ্চিত্রের শুরুটাই হয়েছে 'মায়া' নামের এক কিশোরীকে নিয়ে। ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে চুরি হয়ে দৌলতদিয়ার পতিতাপলস্নীতে বিক্রি হয় মায়া। সেখানে বেড়ে ওঠে সে, সংগীত গুরু খোদাবক্স তাকে বড় করে তোলে। এক সময় ব্যারিস্টার পুত্র মায়ার প্রেমে পড়ে। তার পরের গল্পটা আর বলতে চাই না। মূলত অসাধারণ একটি গল্পের সিনেমা মায়াবতী। গল্পই দর্শককে সিনেমা হলে নিয়ে যাবে। তা ছাড়া পরিচালক অরুণ চৌধুরী অনেক শ্রম ও মেধা খাটিয়ে যত্ন করে সিনেমাটি তৈরি করেছেন। এর মাধ্যমে প্রথমবার ইয়াশ রোহানের সঙ্গে কাজ করলাম। আমি মনে করি, আমরা যেমন আনন্দ নিয়ে কাজটি করেছি, তেমনি দর্শকও আনন্দ নিয়ে ছবিটিকে গ্রহণ করবেন।'
চলচ্চিত্র নিয়েই আপাতত তার ধ্যান-জ্ঞান বলেন জানান তিশা। মায়াবতীর পর আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ধারার ছবিও রয়েছে। সম্প্রতি বাপ্পির বিপরীতে 'ঢাকা টু জিরো ফের জিরো' শিরোনামের একটি ছবির কাজ শুরু করেছেন। তার আগে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত 'হলুদ বনি' নামের একটি ছবির শুটিং শেষ করেছেন। এ ছাড়া তার হাতে আছে 'বোবা রহস্য' শিরোনামের আরও একটি ছবি। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার 'শনিবার বিকেল' চলচ্চিত্রটি। দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির অনুমোদন না পেলেও রাশিয়ায় ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে।
তিশা বলেন, 'আমি সবকিছুর আগে চিত্রনাট্যকে প্রাধান্য দেই। কোনো গল্প বা স্ক্রিপ্ট যখন আমার কাছে আসে তখন প্রথমে ভাবি চরিত্রটা আমার সঙ্গে মানায় কিনা। অভিনয়ের অফার পেলেই যে আমি সেটা করে ফেলি বিষয়টা কিন্তু তা নয়। অবশ্যই ভেবে সিদ্ধান্ত নেই। সবকিছু যখন মিলে এবং আমি কাজটা করবো বলে সিদ্ধান্ত নেই তখনই প্রিপারেশনের ব্যাপারটা গুরুত্ব পায়। ড্রেসআপ থেকে শুরু করে কথাবার্তা বলার স্টাইল সব রপ্ত করি। সবকিছুর পর যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই তখন ওই চরিত্রটাকে ভেবেই দাঁড়াই। আমি জানি না, কতটুকু সফল হই, তবে আমার চেষ্টাটা থাকে। যে কোনো চরিত্রে একজন অভিনয়শিল্পী দাঁড়ানোর আগে তার একটা প্রস্তুতি অবশ্যই দরকার। আমি শতভাগ সেই প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করি।
আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে তিশা বলেন, আমি খুব বেশি পরিকল্পনা করে চলি না। কোন কাজটা নিজের জন্য ভালো আর কোন কাজটা আমার সঙ্গে মানায় না সেটা বুঝে আমি এই পর্যন্ত এসেছি। তাই ভবিষ্যতেও আমি সেভাবে পথ চলতে চাই। ভালো ভালো কাজ দর্শকদের উপহার দিতে চাই সবসময়। অভিনয় নিয়েই আমার সব পরিকল্পনা। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা বলতে পারি না।'