বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চই এখন স্বস্তির বিনোদনের মাধ্যম

নতুনধারা
  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
কঞ্জুস নাটকের একটি দৃশ্য

মাসুদুর রহমান

একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন মাজহারুল ইসলাম। থাকেন রাজধানীর গোলাপবাগে। টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের দর্শক না হলেও নিয়মিত নাটক দেখেন মঞ্চে। শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শিত প্রায় নাটকগুলোই তিনি দেখেছেন বলে জানান। মাজহারুল বলেন, 'এক সময় সিনেমার পোকা ছিলাম আমি। আমার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে প্রচুর ছবি দেখেছি। শহরের সিনেমা হলগুলোতে নতুন ছবি মুক্তি পেলে তা না দেখে শান্তি পেতাম না। কোনো কোনো ছবি কয়েকবার দেখা হতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশের সিনেমাগুলো আগের মতো নেই। তাই এখন আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না। টেলিভিশন নাটকও আগের মতো ভালো হচ্ছে না। ঘুরে ফিরে যেন একই গল্প, একই শিল্পী। টিভি নাটক দেখতে এক ধরনের বিরক্তই লাগে। আমি বিনোদনপ্রেমী মানুষ। কিন্তু বিনোদন খুঁজে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। শিল্পকলা একাডেমির এই পরিবেশটা অনেক ভালো লাগে। সপ্তাহে কয়েকবার এখানে আসা হয় মঞ্চ নাটক দেখতে। দেশে বিনোদনের মাধ্যম বলতে এখনও মান নিয়ে টিকে আছে মঞ্চ নাটক। নতুন নাটক মঞ্চে এলে আমি মিস করি না। মঞ্চ নাটকে অশ্লীলতা নেই, গল্প আছে, পরিবার নিয়ে উপভোগ করা যায়।'

বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম নাটক-সিনেমা। এক সময় এই দুই মাধ্যমের জমজমাট অবস্থা ছিল। সময়ের পরিবর্তনে জৌলুস হারিয়েছে নাটক-সিনেমা। স্বর্ণালি যুগ হারিয়ে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্র। গল্প-অভিনয় কোনটিই দর্শকদের টানে না প্রেক্ষাগৃহে। আগের মতো বিনোদন পেতে ছুটির দিনে পরিবারের সবাই মিলে প্রেক্ষাগৃহে যান না সিনেমা দেখতে। ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন ছবি মুক্তি পেলেও এখন দর্শক খরায় ভোগে সিনেমা হল। অন্যদিকে টেলিভিশন নাটকের পরিবেশও ভালো না। সারা বছর প্রচুর নাটক তৈরি হলেও টেলিভিশন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দর্শক। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের মাঝে মানসম্মত গল্পের নাটকের অভাব, গতানুগতিক গল্পে নেই বৈচিত্র্য, মুষ্টিমেয় অভিনয়শিল্পীর কমেডি ও রোমান্টিকতায় ঠাসা অভিনয় দেখতে দেখতে দর্শক বিরক্ত প্রায়। এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে সুস্থ বিনোদন পেতে দর্শক ঝুঁকছেন মঞ্চ নাটকে। দিনদিন দর্শক বাড়ছে মঞ্চের। এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন মঞ্চ কর্মীরা। মঞ্চের জন্য নতুন নতুন প্রযোজনাও তৈরি হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ সময় পর্যন্ত ১০-১২টি নাটক আলোচনায় এসেছে। পর্দার অনেক বড় বড় শিল্পীরাও মঞ্চে ফিরছেন। আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, অপি করিম, মামুন অর রশিদ, ফেরদৌসী মজুমদার, মোমেনা চৌধুরীর মঞ্চ অভিনয়ে দর্শক মুগ্ধ হচ্ছেন। মঞ্চ নাটকের সুনাম আজ নতুন নয়। বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, অসংখ্য গুণী টেলিভিশন-চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পী এসেছেন এখান থেকে। আমাদের মঞ্চ নাটক দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা পাচ্ছে। দর্শক মহলে মঞ্চ নাটক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মঞ্চ নির্দেশক ও অভিনেতা আতাউর রহমান বললেন, 'সব কিছু সব সময় একই অবস্থায় যায় না। আপ অ্যান্ড ডাউন থাকে। গল্প-উপন্যাসেরও ভালো একটা সময় ছিল। রবীন্দ্র-নজরুলের পর তা নেই। ঠিক একই অবস্থা নাটক-চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের সুন্দর একটা সময় আমরা দেখেছি। পারিবারিক গল্পের চমৎকার নাটক তৈরি হতো। কমেডিও ছিল কিন্তু, এখনকার মতো এত ভাঁড়ামো ছিল না। ঈদের সময় কিংবা বছরের অন্য সময়েও দর্শক টিভি নাটকের জন্য মুখিয়ে থাকতেন। নাটকের গল্প, অভিনয়ে মুগ্ধ হতেন সবাই। নাটকের কিছু কিছু সংলাপ তো মানুষের মুখে মুখে রটে যেত। এখন এসব অতীত। ৩০টির মতো টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি অসংখ্য ইউটিউব চ্যানেল। প্রচুর নাটকে একই গল্প, একই মুখ, কোনো নতুনত্ব নেই। দর্শক এসব পছন্দ করেন না। তারা চান পারিবারিক গল্প। এ জন্যই বিদেশি সিরিয়ালগুলো দর্শক দেখছেন। সেখানে কিছু নেগেটিভ বিষয় থাকলেও দর্শক গ্রহণ করছেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন তো আছেই। সব মিলিয়ে দর্শক এসব থেকে পরিত্রাণ চান। দর্শক এখন টেলিভিশন নাটক-সিনেমা দেখতে চান না। তারা থিয়েটারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। থিয়েটার হচ্ছে বিনোদন ও গণশিক্ষার একটা মাধ্যম। এটা দিয়ে মানুষ শেখে। সামাজকে চেনে, সমাজের ত্রম্নটিগুলো জানে, রাজনৈতিক, সামাজিক সব কিছুই থিয়েটারে আসে। স্বাধীনতার পর শিল্পের যে শাখায় সবচেয়ে বেশি উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে- তা হচ্ছে মঞ্চ নাটক।

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, 'দর্শক চান সুস্থ বিনোদন। যা শিক্ষণীয়, বাস্তবসম্মত। যে বিনোদনের মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনের ও সমাজের নানা বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়। দর্শক তা মঞ্চে খুঁজে পান। আগের চেয়ে এখন মঞ্চের অবস্থা অনেক ভালো। নতুন নতুন নাটক ও নতুন দল আসছে এটা খুবই আশাপ্রদ। অন্যবারের চেয়ে এবারে বিভিন্ন ধরনের নতুন নাটকের সংখ্যা বেশি। তবে এখানে টিভি নাটকের মতো পেশা হিসেবে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশে মঞ্চ নাটক করে জীবিকা নির্বাহ করা যাবে না। ইন্ডিয়াকে যদি অনুসরণ করে আমাদের সরকার, যেমন সেখানে বিভিন্ন গ্রম্নপ সিলেক্ট করে একটা স্যালারি দেয়। সারা ভারতে কয়েক হাজার দল প্রায়। এটা ধীরে ধীরে দলের কার্যক্রম অনুযায়ী বাড়ে।

আমাদের দেশেও যদি ছোট করে শুরু করা যেত তাহলে ভালো হতো। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে নাটক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পারে। এ ছাড়া কিন্তু মঞ্চ নাটককে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে অভিনয় উপযোগী হলের অভাব। ঢাকাতে শুধু শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক হয়। মিরপুর, গুলশান, বনানী কিংবা উত্তরা থেকে ওখানে যাওয়াটা খুব কঠিন ব্যাপার। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে অভিনয় করার মতো জায়গা দরকার। যাতে দলগুলো সেখানে গিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করতে পারে, স্থানীয়রা সেগুলো দেখতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<65380 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1