বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃত শিল্পীরা সব সময়ই অতৃপ্ত থাকেন

গুলশান আরা চম্পা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তারকা। শিবলী সাদিক পরিচালিত 'তিন কন্যা' সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু তার। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রের সংকটময় মুহূর্তেও চম্পা বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করছেন। নতুন ছবি, বর্তমান চলচ্চিত্র ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
মাসুদুর রহমান
  ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
গুলশান আরা চম্পা

তারার মেলা : মাঝখানে খানিকটা কম কাজ করলেও বর্তমানে একগুচ্ছ ছবি আপনার হাতে। এসব ছবির খুটিনাটি যদি একটু জানাতেন!

চম্পা : হঁ্যা, ঠিকই বলেছেন। বেশ কয়েকটি ছবি আমার হাতে। এক এক করে শেষ করছি। বলতে পারেন বিরতির পর আবার অনেকটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি চলচ্চিত্রে। সম্প্রতি চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় 'বিশ্বসুন্দরী' ছবির কাজ শেষ করলাম। রোমান্টিক ঘরানার ছবি এটি। চয়নিকার এটি প্রথম চলচ্চিত্র। তবে কাজ দেখে মনে হয়নি প্রথম। আবার অমিতাভ রেজা চৌধুরীর 'রিকশাগার্ল' ছবির শুটিং প্রায় শেষ। অচিরেই ছবিটির ডাবিং শুরু হবে। অন্যধারার গল্পের ছবি এটি। বর্তমানে কাজ করছি এম রহিমের পরিচালনায় 'শান' এবং নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূলের 'জ্যাম' ছবির।

তারার মেলা : 'পদ্মাপুরান' নামের একটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন। হঠাৎ করে ছবিটি ছেড়ে দিলেন কেন?

চম্পা : 'পদ্মাপুরান' ছবিতে কাজ করেছিলাম খুবই অল্প। বলা চলে না করার মতো। কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তিতে যখন ওরা মানিকগঞ্জে শুটিং করে তখন আমার পক্ষে সময় দেয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পরিচালক ঘটা করে শুটিংয়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই সময় আমি একটু অন্য ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমি তখন তাদের বলেছিলাম অন্য কাউকে নিতে।

তারার মেলা : 'রিকশাগার্ল' ছবিতে পুরোপুরি ভিন্ন একটা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?

চম্পা : সত্যিই এক ব্যতিক্রম চরিত্রে অভিনয় করেছি। এতে আমি রিকশা গ্যারেজের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্র। এ সমস্ত কর্মক্ষেত্রে সব সময় পুরুষকেই দেখতে পাই। অনেক অনেক ভালো লেগেছে ছবিটি করে। চরিত্র ও গল্প দুটোই চমৎকার লেগেছে বলেই অভিনয় করেছি। এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে ভালো লাগে। যদিও একজন শিল্পী কখনো কোনো কাজে পরিপূর্ণ তৃপ্ত হন না। একজন প্রকৃত শিল্পীর মনে সবসময়ই অতৃপ্ততা কাজ করে। মৃতু্যর আগ পর্যন্ত সেই অতৃপ্ততা তাড়া করে ফেরে।

তারার মেলা : এই ছবির মাধ্যমে প্রথমবার অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করলেন! পরিচালক হিসেবে তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

চম্পা : এক কথায় অনেক মেধাবী একজন পরিচালক তিনি। তার পরিচালনায় কাজ করার ইচ্ছে ছিল অনেক আগে থেকেই। অমিতাভ রেজার নির্মাণশৈলীর মধ্যে এক ধরনের ম্যাজিক আছে। তিনি দারুণ গুছিয়ে কাজ করতে পারেন। ছবির সংলাপ, দৃশ্যায়ন সবকিছুতেই ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে। সবকিছুই সুশৃঙ্খল, সুন্দর পরিবেশ। অন্যদের শুটিংয়ে অনেক সময় দেখা যায়, সেটে গিয়ে শিল্পীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শুধু আমাকে নয়, ছোট-বড় সব শিল্পীকেই সম্মান দেখান তিনি। এমন নির্মাতাদের খুব বেশি প্রয়োজন আমাদের চলচ্চিত্রে।

তারার মেলা : এবার একটু অন্য দিকে আসা যাক। আপনি তো চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশ দেখেছেন। এখনকার সিনেমা ও সিনেমার পরিবেশ কতটা সহায়ক বলে মনে হয়?

চম্পা : এক কথায় বলতে গেলে এখনকার সিনেমায় কোনো কিছুই নেই। সব সিনেমার গল্পই একইরকম মনে হয়। এ থেকে আমাদের নাটক-সিনেমা বেরিয়ে আসতে পারছে না। এর মধ্যে দুয়েকটা কাজ ভালো হচ্ছে, তবে এত বড় শিল্পের কাছে এটা কিছুই না। আগে কাজের প্রতি সবার একটা শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ ছিল। সবাই পরিশ্রমী ছিল। ফাঁকি দেয়ার মানসিকতা ছিল না কারও মনে।

তারার মেলা : নতুনদের মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?

চম্পা : নতুনরা কেউ কেউ ভালো করছে। তাদের মধ্যে অনেক মেধা লুকিয়ে আছে। কাজের সুযোগ ও সুন্দর পরিবেশ পেলে ওরা ভালো করবে। নতুনদের মধ্যে অনেক সুন্দর সুন্দর মুখ আমি দেখতে পাই। আমার অনেক ভালো লাগে। ছেলেমেয়ে দুশ্রেণির কথাই আমি বলছি। তবে ওরা একটু মাথা গরম টাইপের। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে। কারো মধ্যে শেখার প্রচন্ড আগ্রহটাও আমি লক্ষ্য করেছি।

তারার মেলা : আপনার সমসাময়িক অনেকেই অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন। এর কারণ কী বলে মনে হয়?

চম্পা : শুধু আমার সমসাময়িক নয়, আমার পরে যারা এসেছিলেন, তাদেরও অনেকে অভিনয় করছেন না। সিনিয়র অভিনয় শিল্পীদের প্রাধান্য দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সিনেমা খুব একটা নির্মাণ হয় না। নায়ক-নায়িকানির্ভর হওয়ার কারণে সিনিয়র শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে সম্মানের দিক বিবেচনা করে সিনিয়র শিল্পীরা যেনতেন চরিত্রে অভিনয় করতেও পারছেন না। নির্মাতারাও বাজেটের কারণে সিনিয়র শিল্পীদের জায়গায় যে কাউকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এটা তারা ভাবেন না যে, সিনিয়র শিল্পীদের গুরুত্ব অনেক। তাদের চরিত্রের গুরুত্বের কারণে সিনেমার গল্পটি সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া সিনেমাও কম নির্মাণ হওয়াও একটি কারণ।

তারার মেলা : আগে নায়িকা, আর এখন মা কিংবা ভাবির চরিত্রে কাজ করছেন। কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন?

চম্পা : নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছি তখন তো ভালো লেগেছে। তবে এখন বড় বোন কিংবা ভাবির চরিত্রেই বেশি অভিনয় করছি। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করার বয়স এখনও হয়নি। আরও কিছু দিন পর মায়ের চরিত্রে মানাবে। তবে 'শান' ছবিতে নায়ক সিয়ামের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। মা-ছেলের গল্পের ছবি। গল্পে আমার স্বামী থাকে না। ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক থাকে মায়ের। সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ করতে হয়। এ ছবির পরিচালক নতুন হলেও বেশ গুছিয়ে কাজ করছে।

তারার মেলা : অনেকেই বলছেন, চলচ্চিত্রে আবার সুদিন আসবে। আপনিও কী তাই ভাবেন?

চম্পা : আশা তো করি সেরকমই। কিন্তু সে আশা কবে পূরণ হবে কিনা- এ নিয়েও সংশয়ে থাকি। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু চলচ্চিত্রের লোকদেরই দায়িত্ব নয়, চলচ্চিত্রের সুদিনের জন্য দর্শকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ভালো ছবি মুক্তি পেলে তাদের সিনেমা হলে যেতে হবে। তবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও অনেক বেশি জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71391 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1