বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থহীন ও উদ্ভট বিজ্ঞাপনে বিরক্ত দর্শক

টিভিসি বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে মাঝে মাঝেই নানা অভিযোগ ওঠে। যেসব অভিযোগের বেশিরভাগই গুণগত মান নিয়ে। তবে মানহীনতার অভিযোগ নয়, উঠছে অর্থহীনতার। দেখা যাচ্ছে, পণ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা নেই- এমন বিজ্ঞাপনচিত্রে সয়লাব টিভি চ্যানেলগুলোতে। আর এসব বিজ্ঞাপন বিরক্তির আরও একধাপ শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে দর্শকদের। প্রশ্ন উঠেছে এসব বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও।
রায়হান রহমান
  ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনচিত্রের একটি দৃশ্য

একটি বিষয়কে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মাঝে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে বিজ্ঞাপনচিত্র। বিজ্ঞাপনের অনেক রকম-সকম থাকলেও টিভি বিজ্ঞাপনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এসব বিজ্ঞাপনের নিম্নমান ও অর্থহীন বার্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেশিরভাগ দর্শক। স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞাপন ব্যতীত নতুন পণ্যের বৃত্তান্ত জানা যায় না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রকমারি ও গালভরা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করা হচ্ছে, এমন সংখ্যাও নেহাত কম নয়। নামকাওয়াস্তে কোম্পানির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিজ্ঞাপনেও এসব বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হরলিকসের বিজ্ঞাপনের বিষয়টিই ধরা যাক। সেখানে বারবার দেখানো হচ্ছে, এটি খেলে সাধারণ বাচ্চাদের তুলনায় ট্রলার, স্ট্রংগার এবং শার্পার হওয়া যাবে। বাস্তবিক অর্থে হরলিকস খেলেই যে একজন বাচ্চা বুদ্ধিমান হবে এমনটি নয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পত্রপত্রিকায় বেশ কয়েকবার লেখা-লেখিও হয়েছে। যদিও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবুও রংচং মাখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা থামছেই না। এ ধরনের অর্থহীন বিজ্ঞাপনের খপ্পরে পড়েছিলেন ভারতের বৈভব বেদী নামের এক যুবক। ঘটনা ২০০৯ সালের। ২৬ বছর বয়সী এ যুবক ভারতীয় একটি আদালতে মামলা টুকে দেন বিখ্যাত ডিওরেন্ট ব্র্যান্ড 'এক্স-রে বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ ছিল, বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে এক্স-রে যে কোনো একটি বডি স্প্রে গায়ে মাখলেই অর্ধনগ্ন নারীরা ছুটে আসেন। কিন্তু তিনি সাত বছর ধরে এই ডিওরেন্ট ব্যবহার করলেও কোনো বান্ধবী জুটেনি তার। যদিও বৈভব অভিযোগ দায়ের করে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু প্রায় ১০ বছর পর বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় নিশ্চত হওয়া গেছে, এরকম রংচং ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী প্রতিনয়ত প্রভাবিত হচ্ছে। সঙ্গে প্রতারিতও। বিজ্ঞাপনের ভুল বার্তা বা মিথ্যা তথ্যের প্রভাবের এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আমাদের চারপাশে রয়েছে এমনকি মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অসংখ্য ভুল বার্তা প্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপন থেকে হজম করতে হচ্ছে? একটা মেয়েকে ভালো বিয়ে থেকে শুরু করে ভালো চাকরি, সবকিছুর জন্য ফর্সা হতে হবে। শ্যামবর্ণের মেয়েদের কপালে চাকরিও নেই; বিজ্ঞাপনের এমন ধারণা চোখ বুজে বিশ্বাস করা সাধারণ মানুষগুলো ছুটছে আয়ুর্বেদিক থেকে শুরু করে টিউবলাইট- লেজারলাইট ফর্মুলাযুক্ত রং ফর্সাকারী ক্রিমের দিকে। বাদ যাচ্ছে না পুরুষরাও। শুধু তাই নয়, স্থূলতা মানেই হাস্যকর, অপমানজনক- নিজের পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে এমন বার্তা দেয়া বিজ্ঞাপনকে হাস্যরসের ছলে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা। এর মধ্য দিয়ে দিনকে দিন বর্ণবাদ ও বাহ্যিক রূপকে যোগ্যতার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। পণ্যের গুণাগুণ নিয়ে অতিরঞ্জন তো আছেই, সঙ্গে মানুষের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে নানাভাবে হেয় করে পণ্য বিক্রির চেষ্টা চলছে। একদিকে কোনো আঞ্চলিক ভাষাকে নিয়ে বিদ্রম্নপ করা হচ্ছে, অন্যদিকে কখনো নারীকে দেখানো হচ্ছে লোভী হিসেবে কারণ বিশেষ ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কিনে না দিলে সংসারই করবেন না তিনি! আবার এত বছরের প্রেমিককে ছেড়ে শুধু পারফিউমের ঘ্রাণে পাগল হয়ে অন্য পুরুষের পেছনে ছুটলেন নারীর? এ বিজ্ঞাপনে আইডিয়াটি অবশ্য সারা পৃথিবীতেই বহুল ব্যবহৃত।?

যদিও 'জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪'-তে বলা আছে, 'বিজ্ঞাপনে এমন কোনো বর্ণনা বা দাবি প্রচার করা যাবে না, যাতে শিশু থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সের জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারিত হতে পারে।? বিজ্ঞাপনে নোংরা ও অশ্লীল শব্দ, উক্তি, সংলাপ, জিঙ্গেল, গালিগালাজ ইত্যাদিও থাকা যাবে না; শুধু তাই নয়, দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, শিশু-কিশোর ও যুবসমাজের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে এবং সংস্কৃতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে এমন কোনো বিজ্ঞাপনও প্রচার করা যাবে না। পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা বা দৈহিক আকার-বর্ণকে কেন্দ্র করে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার নিষেধ।'

তবুও কোনোভাবেই এসবের দাড়ি টানা যাচ্ছে না। যদিও একটা সময় টিভি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল মানুষের মুখে মুখে উড়ে বেড়াত। অর্থপূর্ণ সেসব বিজ্ঞাপনের গল্প ছিল বাস্তবিক, বুদ্ধিদীপ্ত। এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরনো দিনের বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের ভিডিও ঘুরে বেড়ায়। তবে সব বিজ্ঞাপনই যে মানহীন বা অর্থহীনভাবে নির্মিত হচ্ছে তেমনটি নয়। এর মাঝেও কিছু বিজ্ঞাপন মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছে। সেসব বিজ্ঞাপনের শিল্পগুণ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তবে এর সংখ্যা একদম হাতে গোনা। অধিকাংশ দর্শকের মন্তব্য, এখনকার বিজ্ঞাপনগুলোতে থাকে অতিমাত্রার ভাড়ামো। অধিকাংশ বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তুর আগা-মাথা বুঝতে পারেন না তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<72452 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1