শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কারণেই ধস নেমেছে মিডিয়ায়

তারিন জাহান। ছোটপর্দার আলোকিত এক মডেল অভিনেত্রী। শুরুটা নাচ দিয়ে হলেও অভিনেত্রী হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করেন এই তারকা। ছোটবেলায় জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা 'নতুন কুঁড়ি'তে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুনাম অর্জন করেন। সুনামের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন আজও। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত তিনি। অভিনয় করেছেন বৈচিত্র্যময় বহু চরিত্রে। বাংলাদেশের প্রথম ডেইলি সোপের 'জোয়ার ভাটা'য় অভিনয় করেন। এক সময় টিভি নাটকে প্রচন্ড ব্যস্ত সময় পার করলেও এখন অভিনয় কমিয়ে দিয়েছেন। অভিনয়, ব্যস্ততা ও নাটকের বর্তমান পরিবেশ নিয়ে নানা কথা বলেছেন তারার মেলার সঙ্গে।
মাসুদুর রহমান
  ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
তারিন জাহান

মিডিয়ার কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে...

আপনাকে এখন আর আগের মতো নাটকে দেখা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গ শেষ না হতেই বলতে শুরু করেন তারিন। বলেন, 'দেখা যাচ্ছে না ঠিক নয়। এখনও অভিনয় করছি। এখন মিডিয়ার কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে। অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মতো কিংবা সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা বোধ হয় কমে গেছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু নাটকে অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছি। দর্শকদের ভালোবাসায় এতদূর এগিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। দর্শকদের সঙ্গে তো যোগাযোগ হয় না। তারপরেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই জানতে চান, আমাকে টিভি পর্দায় কেন নিয়মিত দেখা যাচ্ছে না। দর্শকরা এখনো আমাকে মনে রেখেছেন, আমাকে অভিনয়ে দেখতে চান। এটা ভেবে আমি খুব অবাক হই। এটা সত্যিই ভালোলাগার। দর্শকদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দেয়া সম্ভব নয়, এটার মূল্য অনেক। সবার আগে হচ্ছে দর্শক। দর্শকরা যদি একজন শিল্পীকে গ্রহণ করেন, তাদের কাছে যদি শিল্পীর কাজ ভালো লাগে তবেই সে শিল্পী ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে পারেন। কাজে আনন্দ পান।'

গুণী শিল্পীদের সম্মান করতে শিখিনি...

দর্শকের এত ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও তো অভিনয়ে নিয়মিত হতে পারেন! নাকি কোনো অভিমান কিংবা ক্ষোভ আছে? তারিনের ভাষ্য, 'এটা আক্ষেপ থেকে নয়, আমার মনে হয়, প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের যথাযথ সম্মান এখন আর দেয়া হয় না। রেসপেক্টের জায়গায় ঘাটতি আছে। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকাই তা হলে দেখব, সেখানে গুণী শিল্পীদের যথেষ্ট সম্মান করা হয়। সেখানে একজন শিল্পীর বিষয়টি মাথায় রেখে ডিরেক্টর স্ক্রিপ্টের চিন্তা করেন। শুধু ভারত নয়, অন্যান্য দেশেও এরকম। হলিউডের কথাই বলি, সেখানেও সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে ভালোভালো কাজ হয়। যার যত বয়স হয় ওখানে তার গুরুত্ব ততো বেশি। তার সম্মানও সব সময় সেই পর্যায়েই থাকে। আমরা এসব দেখি, তাদের অনেক কিছুই ফলো করি, কিন্তু শিখি না। আমরা গুণী শিল্পীদের সম্মান করতে শিখিনি। আমাদের দেশের মানুষদের চরম ব্যর্থতা গুণীদের কদর করতে জানেন না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।'

একজন শিল্পী দেশের সম্মান এনে দেন...

একজন শিল্পীকে সমাজে কতটুকু মূল্যায়ন করা হয়। সমাজ ব্যবস্থায় তারা কতটুকু অবহেলিত বলে মনে হয়? এ নিয়ে ছোটপর্দার এই অভিনেত্রী জানান, 'কোথাও কোনো ফরম ফিলাপ করতে গেলে সেখানে পেশা হিসেবে শিল্পী লেখার সুযোগ নেই। এখনো একজন পেশাদার শিল্পীকে সমাজে যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমি শুধু অভিনয়শিল্পীর কথা বলছি না। সে চিত্রশিল্পী হতে পারে, নৃত্যশিল্পী হতে পারে, কণ্ঠশিল্পী হতে পারে আবার যন্ত্রশিল্পীও হতে পারে। আমি সব ধরনের শিল্পীর কথা বলছি। একজন শিল্পী দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিতি করেন। নিজের দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। দেশের সুনাম বয়ে আনেন। কিন্তু শিল্পী তার প্রাপ্য সম্মান পান না।'

সিনিয়রদের নিয়ে চিত্রনাট্য হয় না...

'আজ আমাদের দেশে সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা হয় না। তাদের গুরুত্ব নেই। অনেক সিনিয়র শিল্পীই অভিনয়ের বাইরে। তারা কিন্তু কাজ করতে চান। কিন্তু সে সুযোগ তারা পাচ্ছেন না। প্রচুর নাটক তৈরি হলেও সিনিয়রদের নিয়ে চিত্রনাট্য হয় না। প্রযোজক-পরিচালকরা তাদের নিয়ে ভাবলে অনেক ভালো কিছু করতে পারেন। বলিউডের অমিতাভ বচ্চনের কথায় ভাবা যাক। সেখানে তার কত গুরুত্ব। মাঝখানে তিনি একটু নীরব ছিলেন। তবে আবার সে নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তিনি তরতর করে এগিয়েও যাচ্ছেন। বলিউড অমিতাভের গুরুত্ব বুঝেছে। সে শুধু চলচ্চিত্রের জন্যই নন, ভারতের জন্যও একটা বড় এসেট। তাকে নিয়ে নির্মাতারা কাজ করছেন। তারা বুঝেছেন সে যতদিন বেঁচে থাকেন ততদিন আমরা তাকে কাজে লাগাব। তারও আমাদের দেয়ার আছে এবং আমাদেরও তার কাছে পাওয়ার আছে। এ জন্য তাকে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। বলিউড ও দেশ উপকৃত হচ্ছে।' এভাবেই বললেন তারিন।

আমাদের মাঝেও অনেক গুণী শিল্পী আছেন...

অমিতাভ বচ্চন কিংবদন্তী অভিনেতা। তাকে নিয়ে নির্মাতাদের ভাবাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে এমন অভিনেতা নেই। তারিন কথার রেশ টেনে বলেন, 'আমাদের দেশেও কিন্তু অনেক গুণী শিল্পী আছেন। আমাদের ভালো শিল্পীর অভাব নেই। আমি মনে করি, আমাদের শিল্পীরা অনেক মেধাবী। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। কিন্তু তাদের আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করতে জানি না, তাদের বিষয়টি মাথায় নিয়ে কোনো পরিকল্পনা সাজাতে জানি না।'

নতুনকে গ্রহণ করতে হবে তবে...

তারিন বলেন, 'যুগের ব্যবধানে সময়ের পরিবর্তনকে অস্বীকার করা যাবে না। নতুনকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে- তবে পুরনোকে ফেলে দিয়ে নয়। পুরনো থেকে অর্জন করে নতুন নিয়ে এগুতে হবে। এখন ইউটিউব, ফেসবুকের যুগ। এসবকে মেনে নিতে হবে। তবে এসবের ব্যবহার সুন্দর হতে হবে।'

সিন্ডিকেটের কারণেই মিডিয়ায় ধস নেমেছে...

মিডিয়া নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। মূলত মিডিয়াকে কারা নিয়ন্ত্রণ করে বলে আপনার মনে হয়? অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে তারিনের জবাব, 'এখন মিডিয়ায় সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণেই মিডিয়ায় ধস নেমেছে। নাটক কিন্তু প্রচার হচ্ছে, অসংখ্য নাটকও তৈরি হচ্ছে- কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে নাটকের অবস্থা ভালো না। সিন্ডিকেট থেকে মিডিয়ামুক্ত না হলে এর অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। গণমাধ্যমের দায়িত্ব সেই সিন্ডিকেটধারীদের বের করা।'

সংস্কৃতি চর্চা যত কমছে, অশান্তি তত বাড়ছে...

দর্শক কী এখন টিভি নাটক দেখেন? জানতে চাইলে তারিন বলেন, দর্শকরা নাটক দেখেন। তারা ভালো নাটক দেখতে চান। আমি নিজেও যখন শুনি ওই নাটকটা ভালো হয়েছে তখন দেখে নিই। কিছু কিছু নাটক সত্যি ভালোও হচ্ছে। দর্শক মঞ্চ, টিভি নাটক, টিভি অনুষ্ঠান এবং হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চান। এক সময় তাই হতো। সিনেমা হলে দর্শক যেত, মঞ্চে নাটক দেখত, পরিবারের সবাই মিলে টিভি নাটক দেখতো কিন্তু এখন তা নেই। দর্শক কিন্তু কমে গেছে। সংস্কৃতি চর্চা যত কমে যাচ্ছে সমাজে তত অশান্তিও বাড়ছে। আগে পরিবারগুলোতে নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চা হতো। বিকেল বেলায় বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে হারমোনিয়াম, তানপুরা, তবলা কিংবা গানের সুর ভেসে আসত। ছেলেমেয়েরা নাচ, গান কবিতা আবৃত্তি কিংবা অভিনয় শিখতেন। এখন ছেলেমেয়েরা এসব থেকে অনেক দূরে। তাদের মধ্যে ভদ্রতা-সম্মানবোধ লোপ পাচ্ছে।

খুব বাছবিচার করে অভিনয় করছি...

টিভি পর্দায় তারিনকে আগের মতো দেখা না গেলেও অভিনয় ছেড়ে যাননি তিনি। এখনো ভালো স্ত্রিপ্ট হাতে পেলে প্রমাণ করে ছাড়েন তিনি সত্যিই একজন জাদরেল অভিনেত্রী। তাই বেছে বেছে কাজ করেন। তারিন সর্বশেষ গত কোরবানির ঈদে বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে হাসান রেজাউলের নির্দেশনায় আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে 'জলছবি' টেলিফিল্ম উলেস্নখ্যযোগ্য। তারিন বলেন, খুব বাছবিচার করে অভিনয় করছি। সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অভিনয় করতে চাই না। দর্শক দিনশেষে একটি ভালো কাজের কথাই মনে রাখেন। যে কারণে বছরজুড়ে কাজ না করলেও কোনো উৎসব আয়োজনে ভালো গল্পের নাটক কিংবা টেলিছবিতে বেছে বেছে অভিনয় করছি।

রিয়াজ আছেন, ফেরদৌস নয়...

ঈদের পর লম্বা সময় দেশের বাইরে ছিলেন তারিন। এ জন্য নাটকে কাজ না করলেও সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৈত্রী শিল্পের পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে তাকে। বিজ্ঞাপনটির নির্দেশনা দিয়েছেন আফতাব বিন তমিজ। বিজ্ঞাপনটি নিয়ে তারিন বলেন, 'খুব চমৎকার পস্নট ছিল। সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন রিয়াজ, ফেরদৌস নয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<77389 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1