শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরের সংজ্ঞাই পাল্টে দিলেন তুনজি

সৌন্দর্যের পরিচয় গাত্রবর্ণ নয়, সৌন্দর্য মানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। অনেকবার অনেকে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় এ নিয়ে চর্চা করেছেন। আবার একই কথা প্রমাণিত হলো আঞ্চলিক মঞ্চে। সম্প্রতি সমাপ্তি হয়েছে ২০১৯ মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার। বিশ্বের সেরা সুন্দরীদের পেছনে ফেলে স্রেফ বুদ্ধিমত্তার জোরে দক্ষিণ আফ্রিকার জোজিবিনি তুনজি জিতে নিয়েছেন সেরার শিরোপা।
জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
জোজিবিনি তুনজি

'কালো, তা সে যতই কালো হোক/ দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।'

শ্যামবর্ণের মধ্যেও যে সৌন্দর্য আছে, তা বলে গিয়েছিলেন বিশ্বকবি। শ্যামাঙ্গী কন্যার রূপ যে কোনো পুরুষ হৃদয়কে কাঁপাতে পারে না, তা নয়। কিন্তু সব কালো মেয়ের ভাগ্য অত সুপ্রসন্ন নয়। হরিণনয়না না হলে বা মুখ লক্ষ্ণী প্রতিমার মতো না হলে তার বিচার হয় গায়ের রং দিয়ে। আর সেখানেই ডাহা ফেল করে যায় শ্যামবর্ণা তন্বীরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা পেয়ে এক শ্যামাঙ্গীর গলাতেও ঝরে পড়ল সেই হতাশার গল্প।

২০১৯ সালে মিস ইউনিভার্সের খেতাব জিতেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সুন্দরী জোজিবিনি তুনজি। গায়ের রং তার আফ্রিকানদের মতোই কালো। ফলে ছোট থেকেই কানে আসত কদর্য নিন্দা। সবাই তাকে 'কালো' বলে নাক সিঁটকাতো। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও পরে এসব ছুটকো মন্তব্যে কান দিতেন না তুনজি। যখন তাকে 'কুৎসিত' বলে খোঁচা দেওয়া হতো, তার জেদ আরও চেপে বসত। হয়তো তখন থেকেই উপযুক্ত জবাব দেওয়ার তাগিদ শুরু। সিঁড়ি বেয়ে তিনি সেই যে উঠতে শুরু করেছিলেন, আজ তার শীর্ষে পৌঁছালেন। কালো হওয়া সত্ত্বেও ছিনিয়ে নিলেন বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী হওয়ার খেতাব।

বলতে গেলে, সৌন্দর্য কিংবা সুন্দরের সংজ্ঞাই যেন পাল্টে দিয়েছেন তুনজি। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর নিজের জীবনের এই কথা একাধিকবার বলেছেন জোজিবিনি তুনজি। জানিয়েছেন, তিনি এমন এক জায়গায় বেড়ে উঠেছেন সেখানে গাত্রবর্ণ ও চুলের কারণে বারবার অপদস্থ হয়েছেন তিনি। অপমানিত হয়েছেন পদে পদে। কিন্তু এবার নিন্দুকদের উপযুক্ত জবাব তিনি দিতে পেরেছেন বলে মনে করেন তুনজি। যারা তার মতো চেহারা নিয়ে হতাশায় ভোগেন, তাদের জন্য তুনজির বার্তা, কেমন দেখতে, তা নিয়ে হতাশার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, 'আমি চাই বাচ্চারা আমাকে দেখুক। আবিষ্কৃত হোক সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা।'

এ বছর মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে প্রতিযোগিতা। শেষ পর্বে তার উত্তরই তাকে বিশ্বসেরার খেতাব এনে দিয়েছে। কিন্তু কী বলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সুন্দরী? জোজিবিনি তুনজিকে প্রশ্ন করা হয়, এমন কী জিনিস আধুনিক মেয়েদের শেখানো উচিত? এর উত্তরে তিনি বলেন, 'নেতৃত্বের ক্ষমতা।' এরপর তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তি নারীশক্তি। তাই প্রতিটি নারীকে সুযোগ দেওয়া উচিত- যাতে সে তার বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে পারে। জোজিবিনি তুনজির এই উত্তরের পর আলোড়ন পড়ে যায় দর্শকাসনে। থিয়েটার ফেটে পড়ে করতালিতে। বিচারকরাও মুগ্ধ হয়ে যান।

তুনজি আরও বলেন, নেতৃত্বের ক্ষমতা না থাকার কারণেই পিছিয়ে রয়েছে মহিলারা। তবে এর জন্য কোনোভাবেই মহিলারা দায়ি নয়। দায়ি সমাজ। তারাই মহিলাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করে রেখেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের সুযোগ দেওয়া দরকার। কিশোরী বা যুবতিদের তাই শেখানো উচিত কীভাবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে হবে। তুনজির এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটিজেনরাও মিস ইউনিভার্সকে এই বক্তব্যের জন্য প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে।

মিস ইউনিভার্স হওয়ার পর জোজিবিনি তুনজির মাথায় মুকুট পরিয়ে দেন গত বছরের বিজয়ী ফিলিপাইনের ক্যাটরিওনা গ্রে। এ বছর মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়েছেন পুয়ের্তো রিকোর ম্যাডিসন অ্যান্ডারসন। দ্বিতীয় রানার আপ হন মেক্সিকান সুন্দরী সোফিয়া আরাগন। মিস ইউনিভার্সের খেতাব জেতার পর জোজিবিনি বলেন, 'আমি এমন একটা দুনিয়ায় বড় হয়েছি, যেখানে আমার মতো দেখতে মহিলা, আমার মতো গায়ের রং, আমার মতো চুলের ধরন যাদের, তাদের কখনো সুন্দর ভাবা হয় না। সময় এসেছে এই বৈষম্য বন্ধ করার। আমি চাই, শিশুরা আমার মুখের দিকে তাকাও। তোমরা নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবে আমার মধ্যে। '

দক্ষিণ আফ্রিকার সোলোর বাসিন্দা জোজিবিনি। সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চেরও আগে দুনিয়া তাকে চিনেছে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার জোরদার লড়াইয়ের জন্য। বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চে তার পরিচয় দেওয়ার সময় বলা হয়, জেন্ডার স্টিরিওটাইপ বদলাতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি যেভাবে প্রচার চালিয়ে গেছেন তা প্রশংসনীয়। তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেই গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। মহিলাদের অনুপ্রাণিত করেছেন নিজেকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে। দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব কেপের সোসোতে জন্ম নেওয়া তুনজি এখন তিনি নিউইয়র্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর মডেলিংয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়াবেন বলে জানান তুনজি। তিনি পেনিসুলা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে থেকে পাবলিক রিলেশন ম্যানেজমেন্টে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ওগিলভি কেপটাউনে পাবলিক রিলেশন ডিপার্টমেন্টে ইন্টার্ন করছেন। লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<80424 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1