বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই

চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। একাধারে তিনি অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন'-এর প্রযোজক এই মুক্তিযোদ্ধা। অনেক ব্যবসা সফল সিনেমার নায়ক তিনি। এক সময় চলচ্চিত্র নিয়ে দারুণ ব্যস্ততা থাকলেও এখন সময় কাটে ক্যামেরার বাইরে। তবে চলচ্চিত্রের নানা আয়োজনে কখনো কখনো দেখা মেলে তার। চলচ্চিত্রের এই গুণী অভিনেতার জন্মদিন আগামীকাল ২১ ফেব্রম্নয়ারি। শহিদ দিবস, বর্তমান ব্যস্ততা ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। লিখেছেন- মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা

মাতৃভাষা দিবসে জন্মদিন...

ভাষার জন্য আন্দোলন করে জীবন দেওয়ার নজির একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এ জন্য প্রতি বছর ফেব্রম্নয়ারি ২১ তারিখটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মর্যাদাপূর্র্ণ এই দিনে কারো জন্ম হওয়াটাও গর্বেরও বটে। ডেশিং হিরো খ্যাত চিত্রনায়ক সোহেল রানার জন্ম হয়েছিল এই দিনে। তবে দিনটিকে তিনি গর্বের পাশাপশি বেদনারও মনে করেন। তিনি বলেন, 'একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে আমার জন্ম হয়। একইদিনে মহান ভাষা দিবস। একজন বাঙালি হিসেবে এটা একই সঙ্গে আমার জন্য গর্বের এবং বেদনাদায়কও। অনেক জন্মদিন কেটেছে আমার শুটিংয়ে। সহকর্মীদের সঙ্গে দিনটি কেটে যেত আনন্দ উলস্নাসে। এখন আর জন্মদিন সেভাবে পালন করা হয় না। সময়ের পরিবর্তনে বয়সও বেড়েছে। আমার সঙ্গে যারা চলচ্চিত্রে কাজ করতেন তাদের অনেকেই এখন নেই। এখন নিজে থেকে সেই আনন্দও কাজ করে না। তাই কোনো পরিকল্পনাও রাখি না। তবুও জন্মদিন পালন হয়। অনেকেই ফোন করে শুভেচ্ছা জানান। আবার অনেকেই বাসায় আসেন শুভেচ্ছা জানাতে। জীবনের এই সময়ে এসেও সবার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে।

একুশ এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেছে...

বিশেষ দিবসগুলো আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। নানা আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন সংগঠন। জাতীয়ভাবেও গুরুত্ব পায় দিনগুলো। কিন্তু শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নির্দিষ্ট দিনেগুলোতেই দিবসগুলোর গুরুত্ব ও মর্যাদা সীমাবদ্ধ নয়। ভাষা দিবস নিয়ে চলচ্চিত্রের এই গুণী অভিনেতা, 'একুশে ফেব্রম্নয়ারি, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো জাতি নেই ভাষার জন্য আন্দোলন করে প্রাণ দিয়েছে। একমাত্র বাংলাদেশই তা পেরেছে। অথচ এখন লজ্জা লাগে। আবরণের মতো শুধুই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেছে একুশ। ফেব্রম্নয়ারি এলে বাংলা ভাষার প্রতি দরদ দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু বছরের এই একটি মাত্র মাসেও বাংলা ভাষার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল নই। এখনো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানের সাইনবোর্ডে এমনকি অফিস আদালতেও শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে না। সর্বত্র ভাষা বিকৃতির প্রতিযোগিতায় শহিদ দিবসের তাৎপর্য নষ্ট হচ্ছে বলে আমি মনে করি। শহিদদের রক্তে কেনা এই দেশের ভাষা বাংলা হলেও উচ্চ আদালতে বিচার কাজ এখনো ইংরেজিতে হয়। অথচ সর্বস্তরের বাংলা ভাষা প্রচলনে ১৯৮৭ সালে একটি আইন করা হয়েছিল।'

মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীলের অভাব...

সৃষ্টিগতভাবেই প্রতিটি জাতি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রত্যেকেই নিজ ভাষায় কথা বলে আত্মতৃপ্তি পান। মাতৃভাষায় কথা বলে গর্ববোধ করেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও নিজ ভাষার ব্যবহারের প্রচলনের গুরুত্ব পায়। কেবল বাংলাদেশ ভাষার ব্যবহারে যেন ব্যতিক্রম। যত্রতত্র ভাষার বিকৃতি হচ্ছে। নিজ ভাষার প্রতি ক্রমেই শ্রদ্ধা কমছে। মুক্তিযোদ্ধা সোহেল রানা বলেন, 'আমরা বাংলা ভাষা ব্যবহার না করে ইংরেজির প্রতিগুরুত্ব দিচ্ছি। সঠিকভাবে বাংলা না বলতে পারলেও ইংলিশ বলার কারণে আমরা সন্তানদের নিয়ে গর্ব করি। প্রতিনিয়ত কথা বার্তায় কিছু ইংলিশ, কিছু বাংলা ব্যবহার করে একদম জগাখিচুড়ি ভাষা ব্যবহার করছি। আমি নিজেও এই অপরাধ থেকে মুক্ত নই। তবে, অন্তত দুঃখের বিষয় যে, আজকাল রেডিও-টিভিতে ভাষার বিকৃতি হচ্ছে। এ প্রজন্মের তরুণরা রেডিও-টেলিভিশনসহ সব মাধ্যমে দুর্বল বাংলা কিংবা ইংরেজি ভাষা মিশিয়ে কথা বলে এক বিকৃত বাংলিশ ভাষা চালু করেছে। নাটক-চলচ্চিত্রের সংলাপেও বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে আমাদের জীবন এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে- যাতে লজ্জা করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে।

নিজ ভূমিতে বাংলা আজ পরবাসী...

যে কোনো বিষয়ে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র সচেতন না হলে স্বাধীনতাও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। বাংলাভাষার সঠিক ব্যবহার না নিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা সোহেল রানা মন্তব্য করেন নিজ ভূমিতে বাংলা আজ পরবাসী। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, নিজ ভূমিতে বাংলা আজ পরবাসী। তাই ভাষা বিকৃতিকে রোধ করার জন্যই দেশ, সরকার, বিদ্যায়তন এবং পরিবারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে মহান মাতৃভাষা চর্চা, প্রশিক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, বিদ্যায়তনগুলোতে শুদ্ধ ভাষা প্রয়োগ ও বানান পদ্ধতি এবং উচ্চারণরীতি প্রয়োগ করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অভাব...

সমাজে কোনো কিছু প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের বিকল্প কিছু নেই। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে সমাজে তা স্থায়ী হয় না। সর্বস্তরে বাংলাভাষার ব্যবহারের আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। আক্ষেপ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চিত্রনায়ক সোহেল রানা বলেন, 'আমি বছর দুই আগে মাদ্রাজ গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম অফিস আদালত থেকে শুরু করে দোকানপাটে তাদের নিজস্ব ভাষায় প্রতিষ্ঠানের বা দোকানের নাম লেখা। কোথাও কোথাও ছোট করে নিচে ইংরেজিতে লেখা। কিন্তু এটা আমাদের দেশে নেই। সরকার চাইলে এটা করতে পারেন। যদি বলেন, এবারই ২১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে এটা করতে হবে। নইলে ব্যবস্থা। ইন্টার সিটি না লিখে ট্রেনে লেখা হবে আন্তঃনগর, স্ট্রিমারে, বাসে, অফিস আদালত সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89270 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1