বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজন্মের কাছে একুশ...

আগামীকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাইরে আমরা একুশ নিয়ে নানান কথাবার্তা বললেও অন্তরে কতটা লালন করছি একুশের চেতনা! এখনকার প্রজন্মের কাছে এই দিনটার গুরুত্ব কতখানি! এমন প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে দেশের এ প্রজন্মের শোবিজ তারকাদের। প্রশ্ন করা হয়েছে, এখন শোবিজ তারকাদের মধ্যে একুশের চেতনা কতটা দেখা যায় বা হৃদয়ে কতটা ধারণ করেন একুশ?
নতুনধারা
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

'৫২ না এলে '৭১ আসত না : জয়া আহসান

একুশ মানেও আমার কাছে স্বাধীনতা। আজ যে ভাষায় কথা বলছি, এটাই আমার কাছে একুশের চেতনা। নিজের ভাষাকে সঠিকভাবে বলতে পারা, মাতৃভাষাকে সম্মান দেয়াটাই তো একুশের চেতনা। এটি নিজের ভেতর সর্বদা অনুভব করি। বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, সালাহউদ্দীনসহ অগণিত ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আমরা পৌঁছে যাই '৭১-এর রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে। বাংলার দামাল মুক্তি সেনারা অকাতরে প্রাণ দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে প্রিয় স্বাধীনতা। আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত মানুষ। '৫২-র ভাষা আন্দোলন না হলে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হতো না। মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাঙালি জাতি ধীরে ধীরে তার অস্তিত্ব হারাতো। আজ একথা ভেবে গৌরববোধ করি। আমি এক নির্ভীক সৃষ্টিশীল জাতির শিল্পকর্মী। বাংলা চলচ্চিত্রের যে অভিনয় ভুবনে আমার নিদ্রাহীন পদচারণা তা তো সম্ভব হয়েছে ওই ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের কারণে।

একুশ আমার গর্ব : আজমেরী হক বাঁধন

একুশে ফেব্রম্নয়ারিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার। ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আজকের এই দিনে। আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষেরই তার মাতৃভাষায় কথা বলতে পারা উচিত। আমরা এই অধিকারটা রক্ত দিয়ে র্অজন করেছি বলে এটা আমাদরে জন্য আলাদা একটি ব্যাপার। ভাষাটা যেহেতু আমাদের মায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই এটি আমাদের জন্য অবশ্যই আলাদা। আমার মনে হয়, বছরের প্রতিটা দিনই আমাদের সচতেনভাবে, আমাদের ভাষাকে ভালোবাসা উচতি। শুধু একদিনের জন্য যেন না হয় ব্যাপারটা। আমি অনেকদিন থেকেই একটা ব্যাপার দেখছি যে, আমাদের আশপাশের অনেকের মাঝেই এই ব্যাপারটা কাজ করে নিজে বাঙালি হয়েও তার সন্তান বাংলায় কথা বলতে পারে না বা লিখতে পারে না। এ নিয়ে আবার অনেককে গর্ববোধ করতেও দেখেছি। নিজের ভাষাটা ভালোভাবে না বলতে ও লিখতে না পারাটা কখনো গর্বের বিষয় হতে পারে না বরং এটা অনেক বড় একটা লজ্জার বিষয়।

এটা আমাদের অর্জন : সাবিলা নূর

আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই ভাষা। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই দিনটির স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা বিরাট পাওয়া বাঙালি হিসেবে। এটা আমাদের বড় অর্জন। তবে কালের বিপর্যয়ে আমাদের মাতৃভাষার অনেক পরিবর্তন এসেছে। বলতে হয় এর উৎকর্ষতা আমরা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেই আমরা অশুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করি। কেউ কেউ হয়তো দু-তিনটি ভাষার মিশ্রণের কথা বলে। আমিও মাঝে মাঝে বলে ফেলি। কিন্তু তার মানে এই নয়, এ প্রজন্ম বাংলা ভাষা ভালোবাসে না। আমরা বাংলা ভাষাকে খুব ভালোবাসি, সম্মান করি। তাই তো একজন শিল্পী হিসেবে যখন এ ধরনের কাজের প্রস্তাব পাই, আমি তা লুফে নিই। সঠিকভাবে চরিত্রটি উপস্থাপনের চেষ্টা করি, যাতে আগামী প্রজন্ম আমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।

অভিনয় করতে গিয়ে এর গুরুত্ব বুঝেছি : সিয়াম

আমাদের প্রজন্ম ভাষা আন্দোলন তো দূরের কথা, মুক্তিযুদ্ধও দেখেনি। ফলে আমাদের জাতির সবচেয়ে গৌরবময় দুটি অধ্যায় নিয়ে যা জেনেছি, সবই লেখাপড়া করে, নাটক-সিনেমা-গান থেকে বা কারও মুখে শুনে। বিশেষ করে ২১ সম্পর্কে আমার জানার পরিধি খুবই কম ছিল। তবে আমার সৌভাগ্য ভাষা আন্দোলনের সিনেমায় অভিনয় করতে পেরেছি। এই সিনেমায় নিজের চরিত্র যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে আমাকে বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বেশ জানতে হয়েছে। আমি পড়াশোনা করেছি, সিনেমার পরিচালক তৌকীর আহমেদও এটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। ফলে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট ভাষা আন্দোলনের বিষয়টি। এখন আমি মুক্তিযুদ্ধের মতো ভাষা আন্দোলন নিয়েও আলোড়িত হই। আমি আবিষ্কার করেছি কী পরিমাণ দেশপ্রেম থাকলে একজন মানুষ সচেতনভাবে নিজের তাজা প্রাণ সঁপে দিতে পারে মৃতু্যর দুয়ারে। কারণ, ওই সময় সারা শহরে কারফিউ চলছিল, মিছিলের সামনে যে যাবে সেই গুলি খাবে, এটি জেনেও আমাদের ভাষাশহিদরা মিছিলে মিছিলে ভাষার দাবিতে মুখর হয়েছিলেন। তারাই সত্যিকার নায়ক, সত্যিকার নেতা।

সূর্যসন্তানদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা : বিদ্যা সিনহা মিম

চেতনায় একুশ সর্বদাই ধারণ করি। ভাষার জন্য যুদ্ধ করে জীবন দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ঘটেনি। আমরা এমন গর্বিত একটি ইতিহাসের মালিক। যে ভাষার জন্য আমাদের দেশের সূর্যসন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। একুশের চেতনা শুধু ফেব্রম্নয়ারি মাসেই নয়, সারা বছরই যেন থাকে। আমাদের ভাষাটা অন্য আট-দশটি দেশের ভাষার মতো এত সহজে পাইনি। যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এ ভাষা অর্জিত হয়েছে। তাই একুশ মননে সর্বদাই থাকে। আমার কাছে একুশে ফেব্রম্নয়ারির অর্থ হচ্ছে বাংলা ভাষা, বাংলা গান, বাংলা ভাষায় গান গাইবার সর্বোচ্চ শক্তি। এই একুশ না এলে বাংলা ভাষা আসত না, বাংলা ভাষায় কথা বলাও হতো না, বাংলা ভাষায় গান গাওয়াও হতো না। তাই একুশ আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা, একুশ আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। একুশ আমার অহঙ্কার। ভাষা শহিদদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা, আন্তরিক ভালোবাসা। আর এ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তাদের প্রতি যারা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং আন্তরিকতা নিয়ে সারা বছর আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাকে লালন করছেন জীবনে ও যাপনে।

অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে মনে : লিজা

আমরা যে দেশকে কতটা ভালোবাসি, তা সব সময় অনুভব না করলে দেশের গান গাইতে গেলে তা টের পাই। অন্যরকম অনুভূতি ভর করে নিজের মধ্যে। আমরা শিল্পীরা তো খুব আবেগপ্রবণ হই, তাই গানের কথার অর্থ আমাদের খুব প্রভাবিত করে। তাই তো দেশের গান গাইতে আমি সবচেয়ে ভালোবাসি। এবারের একুশে ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও একাধিক টিভি অনুষ্ঠানে ভাষার গান গেয়েছি। গানগুলো হলো আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, মোদের গরব মোদের আশা, ওরা আমার মুখের কথা কাইড়া নিতে চায়, ভুলব ভুলব না ইত্যাদি। গানের মাধ্যমেই ভাষার গুরুত্ব-তাৎপর্য ভাষার জন্য আমাদের মহান শহিদদের আত্মত্যাগের কথা দর্শক-শ্রোতাদের জানানোর চেষ্টা করি। এটা আমার দায়িত্ব বলেই মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89271 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1